ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফ্রাইলিঙ্ক ধামাকায় ঢাকাকে হারাল চিটাগং ইভান্সের সেঞ্চুরিতে রাজশাহীর জয়

প্রকাশিত: ০৭:৩৩, ২২ জানুয়ারি ২০১৯

ফ্রাইলিঙ্ক ধামাকায় ঢাকাকে হারাল চিটাগং ইভান্সের সেঞ্চুরিতে রাজশাহীর জয়

মিথুন আশরাফ ॥ ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ ম্যাচে রবি ফ্রাইলিঙ্কের (১০ বলে অপরাজিত ২৫ রান) ব্যাটিং নৈপুণ্যে ৩ উইকেটে জিতে চিটাগং ভাইকিংস। শেষ ওভারে জিততে ১৬ রান লাগে চিটাগংয়ের। তিনটি ছক্কা হাকিয়ে চিটাগংকে জেতান ফ্রাইলিঙ্ক। ফ্রাইলিঙ্কের এ ব্যাটিং ধামাকায় ঢাকাকে রুখে দেয় চিটাগং। এই ম্যাচে জিতে ৬ ম্যাচে ৫ জয়ে ১০ পয়েন্ট পেয়ে ঢাকার পরে দ্বিতীয় স্থানে থাকে চিটাগং। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল টি২০) ষষ্ঠ আসরে খেলতে এসে যেন তারকা বনে গেলেন ইংল্যান্ডের লরি ইভান্স। বাঘা বাঘা তারকা ব্যাটসম্যানরা যা করতে পারেননি, ইভান্স তা করে দেখিয়েছেন। এবার লীগের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান বনে গেছেন তিনি। তার ৬২ বলে অপরাজিত ১০৪ রানের ঝড়ো ইনিংসে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকেও ৩৮ রানে হারিয়ে দিয়েছে রাজশাহী কিংস। জিতে পয়েন্ট তালিকায় সেরা চারেও অবস্থান নিয়েছে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে টস জিতে ঢাকা আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। ঢাকা আগে ব্যাটিং করলেই দেড় শ’ রানের বেশি স্কোরবোর্ডে জমা করবেই। এমন ধারণা হয়ে যায়। কিন্তু সোমবার দলটি আগে ব্যাটিং করেও ৯ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৩৯ রানের বেশি করতে পারেনি। সাকিব আল হাসান (৩৪), শুভাগত হোম (২৯) ও উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহান (২৭) যদি মাঝে মাঝে হাল না ধরতেন, তাহলে ঢাকার অবস্থা আরও কাহিল হতো। ক্যামেরন ৩টি, রবি ফ্রাইলিঙ্ক ও আবু জায়েদ রাহি ২টি করে উইকেট শিকার করেন। জবাব দিতে নেমে চিটাগংও বিপাকে পড়ে। ৬৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বসে। পঞ্চম উইকেটে গিয়ে মুশফিকুর রহীম ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত মিলে ৩২ রানের জুটি গড়েন। এই রানের সময় মুশফিক আউট হতেই চিটাগং যেন বিপাকে পড়ে। শুরুতে ডেলপোর্ট (৩০), এরপর মুশফিকুর রহীম (২২) কষ্ট করে দলকে জয়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ৫ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর খাদের কিনারায় পড়ে যায় চিটাগং। ১১৪ রানে যখন নাঈম হাসানও আউট হন, সাকিব তাকে আউট করে ৪ উইকেট শিকার করে নেন, তখন জিততে ১৮ বলে ২৬ রান লাগে। ম্যাচ পেন্ডুলামের মতো ঘুরতে থাকে। ফর্মে ফেরা মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও ধারাবাহিক ভাল খেলা রবি ফ্রাইলিঙ্ক উইকেটে থাকায় অবশ্য ভরসা থাকে। দলের যখন জিততে ১১ বলে ২১ রান দরকার, দলের ১১৯ রানের সময় রান আউট হয়ে দলকে খাদের কিনারায় ফেলে দেন সৈকত (৩৩)। ৬ বলে জিততে ১৬ রান লাগে। ১৮তম ওভারে মোহর শেখ ও ১৯তম ওভারে রুবেল হোসেন দারুণ বোলিং করেন। দুই ওভারে ৫ রান করে নেয়া যায়। শেষ ওভারে মোহর শেখ বোলিং করতে আসেন। প্রথম বলে কোন রান না হলেও পরের বলেই ছক্কা হাকান ফ্রাইলিঙ্ক। ৪ বলে জিততে ৯ রান লাগে। তৃতীয় বলে ২ রান হয়। জিততে ৩ বলে ৭ রান লাগে। খেলায় চরম উত্তেজনা তৈরি হয়। এই মুহূর্তেই ছক্কা হাকান ফ্রাইলিঙ্ক। ডিপ মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা হাকানোয় ম্যাচ টাই হয়ে যায়। এমন মুহূর্তে ফ্লাডলাইটের আলো কমে যায়। এরপরও ফ্রাইলিঙ্ক ব্যাটিং করতে চান। খেলা চলে। ২ বলে জিততে লাগে ১ রান। পঞ্চম বলেও ছক্কা হাকিয়ে ম্যাচ জিতিয়ে দেন ফ্রাইলিঙ্ক (১০ বলে ৩ ছক্কায় অপরাজিত ২৫ রান)। শেষ পর্যন্ত ১ বল বাকি থাকতে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৪৫ রান করে জিতে যায় চিটাগং। ঢাকাকে রুখে দেয় চিটাগং। দিনের প্রথম ম্যাচে টস জিতে কুমিল্লা। রাজশাহীকে ব্যাটিংয়ে পাঠায়। ২৮ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে বসে রাজশাহী। তখন মনে করা হয়েছিল, হারই নিয়তি হতে যাচ্ছে। কিন্তু ইভান্স যে এমন বিধ্বংসী ব্যাটিং করবেন, তা কে জানত! দিনটি যে নিজের করে নেবেন, তা কেউই বুঝতে পারার কথা নয়। তিনি যে এই ম্যাচটির আগে তেমন কিছুই করে দেখাতে পারেননি। এমনকি নামকরা কোন ব্যাটসম্যানও নন। বিপিএলে দল পেলেও খেলতে পারবেন নিয়মিত, তাই তো ভাবেননি! এই ইভান্সই এমন হাল ধরলেন, তাকে আউটই করা গেল না। ৪০ বলে ৫০ রান করার পর ৬১ বলে সেঞ্চুরি করেন ইভান্স। টি২০ ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান তিনি। শেষ পর্যন্ত ৬২ বলে ৯ চার ও ৬ ছক্কায় অপরাজিত ১০৪ রান করেন ইভান্স। তার সঙ্গে রায়ান টেন ডয়েশ্চেট যে ৪১ বলে ২ চার ও ৩ ছক্কায় অপরাজিত ৫৯ রান করেন, তাতেই দলের স্কোর ১৭৬ রানে গিয়ে দাঁড়ায়। যেখানে দল ১২০ রান করতে পারবে কিনা শঙ্কা তৈরি হয়েছিল, সেখানে চতুর্থ উইকেটে ইভান্স ও ডয়েশ্চেটের রেকর্ড ১৪৮ রানের জুটিতে বিশাল স্কোর গড়ে ফেলে রাজশাহী। ৩ উইকেটের পর ২০ ওভারে আর কোন উইকেটই হারায়নি দলটি। শেষ ৫ ওভারেই ৭৪ রান স্কোরবোর্ডে যোগ করেন এই জুটি। এত বড় স্কোর অতিক্রম করতে পারবে কুমিল্লা? এ আসরে সেঞ্চুরি মিলবে? এই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ফেলেছেন ইভান্স। কিন্তু কুমিল্লা কি ১৭৭ রান করতে পারবে? এই প্রশ্নের উত্তর হেরে দিয়েছে কুমিল্লা। কামরুল ইসলাম রাব্বির (৪/১০) গতির সামনে কুমিল্লা ব্যাটসম্যানরা কুলিয়ে উঠতে পারেননি। এত বড় রানের চাপে পড়ে নিজেদের হারিয়ে খুঁজেছেন! একজন ব্যাটসম্যানও হাফ সেঞ্চুরি করতে পারেননি। বড় ইনিংস কিংবা বড় জুটি না হলে কী জেতা সম্ভব? কোনভাবেই না। সাত ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছান। কিন্তু কেউই ২৬ রানের উর্ধে যেতে পারেননি। এনামুল হক বিজয় ২৬ রান করতে পারেন। তামিম ইকবালের ব্যাট থেকে আসে ২৫ রান। এই দুইজনই আবার ২০ রানের ওপরে করতে পারেন। কুমিল্লা ব্যাটিংয়ে কী বেহাল দশা হয়েছে। তাতেই বোঝা যাচ্ছে। ইভান্স ঝড়ে যে রানের পাহাড় কুমিল্লা ব্যাটসম্যানদের মাথার ওপর জমা পড়েছে, সেই পাহাড়ের ভার নেয়া যায়নি। তাতে করে রাজশাহীর কাছে হারও হয় কুমিল্লার।
×