ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দশ বছরের সাফল্যের ঝুড়ি অনেক বড়;###;৮ বছরে আলোর মুখ দেখেনি শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো ;###;শিক্ষা কর্ম কমিশন হয়নি ৯ বছরেও ;###;সিদ্ধান্ত হয়নি এমপিওভুক্তি, কারিগরির উচ্চ শিক্ষা, ইংলিশ মিডিয়াম, কিন্ডার গার্টেন নীতিমালা ও প্রাথমিক সমাপ

ঝুলে আছে অনেক কাজ

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৩ জানুয়ারি ২০১৯

ঝুলে আছে অনেক কাজ

বিভাষ বাড়ৈ ॥ ১০ বছর শিক্ষার উন্নয়নে পদক্ষেপ নিয়ে মন্ত্রণালয়সহ পুরো সরকার প্রশংসা কুড়ালেও ঝুলে গেছে এ খাতের জনসম্পৃক্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থেকে শিক্ষা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বের হতে না পারা ও কর্মকর্তাদের প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকা-ে জনসম্পৃক্ত কাজগুলো আলোর মুখ দেখছে না। শুরু হলেও ৮ বছরে আলোর মুখ দেখেনি শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো, শিক্ষা কর্মকমিশন আলোর মুখ দেখেনি ৯ বছরেও। একই অবস্থা শিক্ষা আইনেরও। ঝুলে আছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি, পূরণ হচ্ছে না লাখ লাখ কারিগরি শিক্ষার্থীর উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন, আটকে আছে ইংলিশ মিডিয়াম, কিন্ডার গার্টেন নীতিমালা, প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার সিদ্ধান্তসহ অনেক বড় বড় কাজ। দুই মেয়াদে শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন যে কোন সরকারের মেয়াদের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশের শিক্ষার অর্জন বিশ^ব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে। শিক্ষায় নারী-পুরুষের সমতা, প্রায় সব শিশুর বিদ্যালয়ে ভর্তি, প্রাথমিক থেকে সব স্কুল শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যের পাঠ্য বই দেয়ার ঘটনাকে রোল মডেল হিসেবে প্রশংসিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মহলে। আছে আরও বহু অর্জন। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, অসাধু কর্মকর্তাদের তৎপরতার বিপরীতে সরকারের কঠোর অবস্থনের অভাবে বছরের পর বছর ধরে ঝুলে আছে বড় কাজগুলো। কাজের যে বিশাল বোঝা ফাইলবন্দী হয়ে আছে তা কবে আলোর মুখ দেখবে তা জানে না কেউ। আদৌ ঝুলে থাকা জনসম্পৃক্ত কাজগুলো বাস্তবায়ন হবে কিনা তার উত্তরও মিলছে না। এবার দুই মন্ত্রণালয়ের নতুন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। কবে হবে শিক্ষা আইন ॥ প্রায় ১০ বছর আগে প্রণীত জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করার কথা ছিল ২০১৮ সালের মধ্যে। কিন্তু ২০১৯ সালে এসেও শিক্ষানীতির অধিকাংশ বিষয়ই বাস্তবায়ন হয়নি। কেবল তাই নয়, নীতি বাস্তবায়ন করতে যে বিষয়টি সবচেয়ে জরুরী সেই শিক্ষা আইনও ঝুলে আছে বছরের পর বছর ধরে। অথচ শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করতেই সেখানে শিক্ষা আইনের কথা বলা আছে। কখনও নোট গাইড, কখনও কোচিং সেন্টার, কখনও শিক্ষা বাণিজ্যে যুক্ত অন্য কোন গোষ্ঠীর কারণে আটকে যাচ্ছে শিক্ষা আইনের কাজ। গত সরকারের শেষ তিন বছরে প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করার উদ্যোগ নিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে দুই মন্ত্রণালয়ের কাজের সমন্বয়ের অভাবে উদ্যোগ বাস্তবায়ন হয়নি। শিক্ষানীতির পরই শিক্ষা আইন নিয়ে কাজ শুরু করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ৭ বছর আগে এক বছরেই বেশ অগ্রগতি এসেছিল। শিক্ষা আইনের প্রথম খসড়া তৈরি করা হয়েছিল ২০১২ সালে। পরে নানা বিষয় সংযোজন-বিয়োজন করে জনমত যাচাইয়ের জন্য ২০১৩ সালে খসড়া প্রকাশ করা হয়েছিল মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে। এরপর তা মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হলে বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ দিয়ে সেটি ফেরত পাঠানো হয়। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের আলোকে এ পর্যন্ত তিনবার আইনের খসড়াটি ফেরত পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শুরু হয় নোট গাইড ব্যবসায়ীদের তদ্বির, আন্দোলনের হুমকি। কোচিং ব্যবসায়ীরাও সক্রিয় হয়। শিক্ষা আইনকে দুর্বল করে অবাধ বাণিজ্য করার আশায় প্রতিবাদ কর্মসূচীও চালিয়ে যেতে থাকে। শিক্ষানীতির পর আজ প্রায় ১০ বছর হতে চললেও আইন করতে পারেনি মন্ত্রণালয়। শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. শেখ ইকরামূল কবির বলছিলেন, নীতিতেই বলা আছে শিক্ষা আইনের কথা। এটি না করতে পারলেও শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন হবে না। অনেক সময় চলে গেছে। শিক্ষায় আমাদের অনেক অর্জন আছে। তবে এটা না করতে পারলে আমাদের শিক্ষানীতি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হবে না। আমাদের প্রধানমন্ত্রী এ শিক্ষার বিষয়ে খুবই সজাগ। নতুন মন্ত্রী এসেছেন, তিনি নিশ্চই এ বিষয়ে নজর দেবেন। শিক্ষা কর্মকমিশনের খবর নেই, বিকল্প নিয়েও সঙ্কট ॥ জাতীয় শিক্ষানীতির সুপারিশ, শিক্ষাবিদ ও শিক্ষকদের দাবি সত্যেও শেষ পর্যন্ত ঝুলেই গেছে শিক্ষক নিয়োগে বহু প্রতীক্ষিত শিক্ষা কর্মকমিশন গঠনের প্রক্রিয়া। জাতীয় শিক্ষানীতি এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের দীর্ঘদিনের এই দাবি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত হওয়ার পরও বছরের পর বছর ধরে এ সংক্রান্ত সকল কাজ বন্ধ হয়ে আছে। এমনকি কমিশন গঠনের বিষয়ে সচিব কমিটির অনুমোদনের পরও চলে গেছে ৫ বছর। কমিশন গঠনের কাজ আগানোর পরিবর্তে এখন বেসরকারী শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা নিয়ে যে প্রক্রিয়ায় নিয়োগ হচ্ছে তা নিয়েও বেধেছে জটিলতা। জাতীয় শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) অধীনে নিয়োগের কথা বলা হলেও দিনের পর দিন অপেক্ষা করছেন আবেদনকারীরা। কোথায়, কীভাবে, কবে আসলে নিয়োগ হচ্ছে তা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। আবার বিবন্ধনকারী ওই প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় শত শত সনদ জালিয়াতির তথ্য বেরিয়ে আসায় নিয়োগের স্বচ্ছতা নিয়েই সন্দিহান সারাদেশের লাখ লাখ আবেদনকারী। অথচ শিক্ষানীতিতেই বলা হয়েছে, শিক্ষক নিয়োগে হবে আলাদা কর্মকমিশন। যে কমিশন গঠনের পরই এনটিআরসিএ বিলুপ্ত করতে হবে। শিক্ষানীতির সুপারিশ অনুসারে কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করার পর ঝুলে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও শিক্ষাবিদরা। ক্ষুব্ধ শিক্ষক সংগঠনের নেতারাও। কমিশন গঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষাবিদদের সুপারিশ মেনেই দ্রুত কাজ শেষ করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল সরকার। সে অনুসারে ২০১২ সালের ১৬ অক্টোবর শিক্ষক নিয়োগে পৃথক কর্মকমিশন গঠনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুমোদন করে সরকারের সচিব কমিটি। কমিটি একই সঙ্গে সেদিন শিক্ষা কর্মকমিশন গঠনের সারসংক্ষেপ যাচাই-বাছাই করে মতামত দেয়ার জন্য আইন মন্ত্রণালয়েও পাঠিয়েছিল। কিন্তু সেই পর্যন্তই। কিছু আমলার ফাইল চালাচালির মধ্যেই এখন আটকে আছে বহু প্রতীক্ষিক শিক্ষা কর্মকমিশন গঠন প্রক্রিয়া। অথচ সব খাতের নিয়োগ সরকারী কর্মকমিশন (পিএসসি) দেখাশোনা করায় সঙ্কট বাধে নিয়োগে। ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সচিবদের সভায় শিক্ষা খাতে পৃথক কর্মকমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। এখন পর্যন্ত কমিশনের কাজের অগ্রগতি দৃশ্যমান না হওয়ায় হতাশ শিক্ষক, শিক্ষাবিদরা বলছেন, শিক্ষা কমিশন গঠনের খবর শুনে সকলের মনে আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু কার্যক্রম থমকে যাওয়ায় শিক্ষক সমাজ হতাশ। বিষয়টিতে হতাশ শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. শেখ ইকরামুল কবির। তিনি বলছিলেন, শিক্ষার উন্নয়নে সবার আগে দরকার দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষক। দরকার স্বচ্ছ নিয়োগ। এ জন্য শিক্ষানীতিতেই বলা হয়েছিল, শিক্ষক নিয়োগে হবে আলাদা কর্মকমিশন। যে কমিশন গঠনের পরই এনটিআরসিএ বিলুপ্ত করতে হবে। কিন্তু কমিশনতো হয়নি। এনটিআরসিএ বিলুপ্ত হয়নি, একটু পদ্ধতি পাল্টে যেভাবে নিয়োগ হচ্ছে তাতে লাভ হচ্ছে না। তাই আমার আহ্বান থাকবে শিক্ষা কর্মকমিশন গঠনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ নেবে। জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি ও শিক্ষা আইন প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ বলছিলেন, জাতীয় শিক্ষানীতিতে আমরা একটি সমন্বিত শিক্ষা আইনের কথা বলেছিলাম। তবে তা করতে হবে প্রচলিত আইনগুলোর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে। সব কিছু সমাধান করে খুব কম সময়েই খসড়াটি চূড়ান্ত করা সম্ভব। এ জন্য সরকার বা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদিচ্ছাটাই সবচেয়ে জরুরী। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি কবে ॥ শিক্ষা খাতের কাক্সিক্ষত বিষয় নতুন এমপিওভুক্তি বছরের পর বছর ধরে অপেক্ষা করেও হচ্ছে না। ২০০৮ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর মাত্র একধাপে এক হাজার ৬০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু তারপরই আটকে যায় প্রক্রিয়া। খোদ সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরা বহুবার এ বিষয়টি জাতীয় সংসদে তুললেও ফল হয়নি। তারা সংসদে বহুবার বলেছেন, প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা না হওয়ায় নির্বাচনী এলাকার সাধারণ মানুষ সরকারের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলছেন দিন দিন। প্রতিবাদ বাজেট ঘোষণার আগে বিভিন্ন এলাকায় দাবি ওঠার প্রেক্ষাপটে সাংসদরা সংসদ অধিবেশনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য অর্ধ বরাদ্দ চান, কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারের কোন পর্যায় থেকেই ইতিবাচক সারা মেলেনি। প্রতিদিনই সংসদ সদস্যরা অর্থ মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গিয়ে একই দাবি তুলেছেন। বলছেন নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ না হওয়ায় জনমনে অসন্তোষের কথাও। তবে তাদের অপেক্ষাতেই থাকতে হচ্ছে আজও। ৮ বছরেও হয়নি শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো ॥ ২০০৮ সালে মহাজোট সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতন কাঠামো প্রণয়ন করা। ২০১১ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ-সংক্রান্ত কমিটিও গঠন করে। কমিটির প্রথম বৈঠকের পর পার হয়ে গেছে ৮ বছর। অর্জন দু একটি বৈঠকই। এরই মধ্যে নতুন বেতন স্কেল হয়েছে। স্কেলে বেতন ও মর্জাদা অবনমনের ঘটনা নিয়ে সৃষ্ট অসন্তোষও রয়েই গেছে অনেকে ক্ষেত্রে। সংকট নিরসনে শিক্ষকরা আলাদা বেতন কাঠামোর দাবি তুলেছেন। দাবি তুলেছেন আরও বেশ কিছু বিষয়ে। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা নিয়ে অসন্তোষ রয়েই গেছে ॥ পঞ্চম শ্রেণীর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা নিয়ে অভিভাবকদের অসন্তোষ সবচেয়ে বেশি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এ পরীক্ষার বিষয়ে গত কয়েক বছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান। আছে প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণীতে উন্নীত করা নিয়েও জটিলতা। আগের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বারবারই বলেছেন, পরীক্ষা থাকবে না। তিনিও সেটাই চান। তবে পরীক্ষাও রয়ে গেছে। তিনি শেষ পর্যন্ত বলেছেন, মন্ত্রিপরিষদ যতদিন পরীক্ষা বাতিলের কথা না বলবে ততদিন চলবে পরীক্ষা। শিশু, অভিভাবক ও শিক্ষাবিদরা অধিকাংশই চান শিশুদের ওপর থেকে এ পরীক্ষার বোঝা নামানো হোক। আবার শিক্ষা নীতিতেও বলা আছে অষ্টম শ্রেণীতে এমন পাবলিক পরীক্ষা কথা। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে সেই স্তরের পরীক্ষা নেয়ারও কথা বলা আছে। পঞ্চম শ্রেণীতে স্থানীয়ভাবে পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে বলে বলা আছে নীতিতে। এদিকে বহুবার অভিযোগ উঠেছে, প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণীতে উন্নীত করা নিয়ে জটিলতা কাটছে না দুই মন্ত্রণালয়ের কাজের সমন্বয় না থাকার কারণে। ইংরেজী মিডিয়াম স্কুল নীতিমালা ও নিবন্ধন ফাইল বন্দী ॥ উচ্চ আদালতের নির্দেশনার পর ৬ বছর চলে গেলেও ইংরেজী মাধ্যমের স্কুল পরিচালনায় নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারেনি শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিছুৃ আমলার উদ্দেশ্যমূলক গাফিলতি এবং ইংরেজী মাধ্যমের স্কুলের কর্তাব্যক্তিদের তদ্বিরের জোরেই এই কার্যক্রম ঝুলে রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অথচ নীতিমালা প্রণয়নের নামে সভা, কর্মশালা এই ধরনের কাজে নিয়মিত মোটা অংকের অর্থও ব্যয় হচ্ছে। নীতিমালা না থাকায় শিক্ষার্থীদের উগ্র-মতবাদে উদ্বুদ্ধ করা, ইচ্ছেমতো টিউশন ফি আদায়, অনুমোদনহীন পাঠ্যসূচী পাঠদান, জাতীয় দিবস পালন না করা ও জাতীয় সঙ্গীতের প্রতি অবজ্ঞা করাসহ নানা ধরনের বিশৃঙ্খল অবস্থায় পরিচালিত হচ্ছে ইংরেজী মাধ্যমের স্কুলগুলো। কার্যত এই ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণই নেই। ‘জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০’ প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব ও জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক শেখ ইকরামুল কবির বলছিলেন, শিক্ষানীতির একটি প্রধান উদ্দেশ্য ছিল কিনডারগার্টেন থেকে ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই নিবন্ধিত হতে হবে। কিন্তু ইংরেজী মাধ্যম স্কুলের ক্ষেত্রে সেটা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। এমনকি শিক্ষা আইনও করা হলো এখন পর্যন্ত। যেভাবেই হোক এটা বারবার আটকে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে শিক্ষানীতি প্রণয়নের উদ্দেশ্য সফল হবে না। জানা গেছে, নিবন্ধনহীন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের তালিকা এবং এ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত শিক্ষা বোর্ডের কাছেও নেই। মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা অধিদফতরের কর্তৃপক্ষও এ সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না। অন্যদিকে শিক্ষা বিস্তারের নামে এসব প্রতিষ্ঠান বেপরোয়া শিক্ষা বাণিজ্যে লিপ্ত এবং শিক্ষাকে বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত করছে। কিন্ডার গার্টেন স্কুল নীতিমালা ও নিবন্ধনেও সংকট ॥ কিন্ডার গার্টেন স্কুল নীতিমালা কার্যকর ও নিবন্ধনের কাজ ঝুলে আছে ৭ বছর ধরে। ২০১১ সালে একটি নীতিমালা করে নিবন্ধনের নির্দেশ দেয়া হলেও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গাফিলতির কারণে এখন পর্যন্ত তাতে কেউ সাড়া দিচ্ছে না। একটি নীতিমালা ঘোষণা করেই বসে আছে মন্ত্রণালয়। তা কার্যকর করার পরিবর্তে বরং নিবন্ধনহীন প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি বাস্তবায়ন করতে দিয়ে নীতিমালায় সংশোধনী আনা নিয়েই কর্মকর্তারা ব্যস্ত। ফলে অনুমোদন ছাড়াই ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা নার্সারি, প্রিপারেটরি ও কিন্ডার গার্টেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চলছে। এদিকে নীতিমালা বাস্তায়ানের পরিবর্তে সম্প্রতি বিবন্ধন জটিলতা নিরসনে করণীয় নির্ধারণে টাস্কফোর্স গঠন করেছে মন্ত্রণালয়। বিভাগীয়, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে তিন ধরনের টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করে আদেশ জারি করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, নার্সারি, প্রিপারেটরি ও কিন্ডার গার্টেনগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনতে ২০১১ সালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় নিবন্ধন বিধিমালা জারি করলেও এখন পর্যন্ত তাতে সাড়া মেলেনি। অধিকাংশ নার্সারি, প্রিপারেটরি ও কিন্ডার গার্টেন সরকারের নিবন্ধনের আওতায় আসেনি। দেশে কতগুলো কিন্ডার গার্টেন রয়েছে তার সঠিক তথ্যও সরকারের কাছে নেই। এমন এক অবস্থান মন্ত্রণালয় টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। তবে টাস্কফোর্স গঠন করার পরেও নেই কাজে অগ্রগতি। লাখ লাখ কারিগরি শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন পূরণ কবে ॥ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতা আর প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অসহযোগিতায় পূরণ হচ্ছে না দেশের লাখ লাখ কারিগরি ডিপ্লোমাধারী শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন। উচ্চ শিক্ষার সুযোগ দেয়ার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ বছরেও বাস্তবায়ন করেনি দেশের কোন প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও এ নিয়ে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল তাদের অধিকাংশই জানেন না মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য এ ধরনের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কোন কোন কর্মকর্তরা অবশ্য বলেছেন, জাতীয় বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপরিশ অনুসারে উদ্যোগ নিলেও তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। তাদের অসহযোগিতার কারণেই বন্ধ হয়ে আছে কাজ। কারিগরি শিক্ষার এই দাবি বাস্তবায়ন আন্দোলনের সঙ্গে সব সময় ছিলেন বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনে সভাপতি ও শ্যামলী আইডিয়াল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ এম এ সাত্তার। সার্বিক পরিস্থিতিতে হতাশা প্রকাশ করে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, বহু বছরের দাবি অনুযায়ী এই উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। কিন্তু তাও বাস্তবায়ন হবে বলে মনে হচ্ছে না। বিষয়টিতে তিনি অবিলম্বে শিক্ষা মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
×