ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইটিপি ছাড়া শিল্পনগরী স্থাপনের অনুমোদন নয় ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২৩ জানুয়ারি ২০১৯

ইটিপি ছাড়া শিল্পনগরী স্থাপনের অনুমোদন নয় ॥ প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রতিটি শিল্পনগরীতে বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) স্থাপন করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইটিপি ছাড়া শিল্পনগরী স্থাপনের কোন প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হবে না বলে তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এমনটি জানান প্রধানমন্ত্রী। সভায় যাত্রাবাড়ী-ডেমরা মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণসহ আটটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট খরচ ধরা হয়েছে এক হাজার ৮৯৩ কোটি ২২ লাখ টাকা। সম্পূর্ণ সরকারী খরচে এই প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ করা হবে। গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সরকার গঠন করে প্রথমবারের মতো মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভা অনুষ্ঠিত হলো। একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা সচিব জিয়াউল ইসলাম, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম এবং শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, একটাই লক্ষ্য গতি বৃদ্ধি করা। উন্নয়নের পথে আমরা সবাই তীর্থযাত্রী। তাই সবাই মিলেই কাজ এগিয়ে নিয়ে যাব। আমার একটাই লক্ষ্য হচ্ছে গতি বৃদ্ধি করা। অর্থাৎ ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য যে গতি ছিল তা বাড়ানো হবে। এর আগে একনেক বৈঠকের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে মন্ত্রীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। সভার শুরুতে দেয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি চাই, যে প্রকল্পগুলো আমরা গ্রহণ করেছি, সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন শুরু করা এবং সেটা যেন যথাযথভাবে হয় সে বিষয়ে নজরদারিও বাড়াতে হবে। যত বেশি নজরদারি বাড়ানো হবে কাজের তত বেশি গতি ও মান ভাল হবে। বক্তব্যে শেখ হাসিনা তার সরকারের লক্ষ্য তুলে ধরে বলেন, আমরা চাই আমাদের লক্ষ্যটা যেন অর্জন করতে পারি। এখন উন্নয়নশীল দেশ। আমাদের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮৬ ভাগে উন্নীত করতে পেরেছি। এটা ধরে রেখে আরও এগিয়ে যেতে হবে। সেকথা মাথায় রেখেই আমাদের প্রকল্প বাছাই করা এবং প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন- এদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সেই কথাটা মাথায় রেখেই আমাদের সকল কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, যে গুরুদায়িত্ব জনগণ আমাদের দিয়েছে, জনগণের যে আস্থা ও বিশ্বাস, তাদের সেই বিশ্বাসের মর্যাদা যেমন আমাদের দিতে হবে, তেমনি তাদের জীবনমান যেন উন্নত হয় বিশেষ করে একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে সাধারণ মানুষের ভাগ্য যেন পরিবর্তন হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই কাজ করতে হবে। এছাড়াও গত সরকারের সময় বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ, পাস করা ও সফলভাবে বাস্তবায়ন করায় সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। এদিন যে প্রকল্পগুলো অনুমোদন দেয়া হয় সেগুলোর মধ্যে পিপিআর রোগ নির্মূল এবং খুরারোগে নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩৪৫ কোটি তিন লাখ টাকা। দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে পুষ্টি সমৃদ্ধ উচ্চ মূল্যের অপ্রধান শস্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ কর্মসূচী প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২০৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। বিদ্যমান ৭টি টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটের উন্নয়ন ও নতুন ৬টি টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩৫৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের জাদুঘর ভবন সম্প্রসারণ এবং অন্য ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১৪৭ কোটি টাকা। গোপালগঞ্জ বিসিক শিল্পনগরী সম্প্রসারণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১০২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। বিসিক শিল্পনগরী অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি শিল্পনগরীতে বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) স্থাপন করার নির্দেশ দিয়েছেন। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা সাংবাদিকদের জানান। সভা সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, একনেকে ১০২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘গোপালগঞ্জ বিসিক শিল্পনগরী সম্প্রসারণ (তৃতীয় সংশোধিত)’ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু প্রকল্পের আওতায় কোন ইটিপি ছিল না। সেজন্য দ্রুতই ওই প্রকল্প এলাকায় ইটিপি স্থাপনের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি শিল্পনগরী যেখানেই করা হোক, সেখানেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিক করার তাগিদ দেন তিনি। এছাড়া অনুমোদনের পর থেকেই যেন প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়, সে বিষয়টিও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়াও প্রকল্প বাস্তবায়নে জলাভূমি ভরাট না করার নির্দেশনা দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পের মান ঠিক রেখে কাজের গতি বাড়াতে হবে। আরও দ্রুত কাজ করতে হবে। মানও বাড়াতে হবে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, কাজে গতি বাড়লে প্রবৃদ্ধিও বাড়ানো সম্ভব। জনগণের অর্থ খরচে আমরা আরও সতর্ক হবো। তবে প্রয়োজন অনুযায়ী খরচের বিপক্ষে নই আমি। কাজ করতে গিয়ে সময় অপচয়ও করা যাবে না। এছাড়াও অনুমোদন পাওয়া যাত্রাবাড়ী (মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার)- ডেমরা (সুলতানা কামাল সেতু) মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩৬৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। নেত্রকোনা জেলার চল্লিশা (বাগড়া)- কুনিয়া- মেদনী-রাজুরবাজার সংযোগ মহাসড়ক নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২৫৭ কোটি ২১ লাখ টাকা। গোবিন্দগঞ্জ ছাতক-দোয়ারাবাজার সড়কে বিদ্যমান ৯টি সরু ও জরাজীর্ণ সেতুর স্থলে ৯টি আরসিসি পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১১১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। একনেক সভা পরবর্তী ব্রিফিং এ আরও জানানো হয়, যাত্রাবাড়ী- ডেমরা-শিমরাইল-নারায়ণগঞ্জ সড়কটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মহাসড়ক যা দুটি প্রধান জাতীয় মহাসড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ক ও ঢাকা-সিলেট জাতীয় মহাসড়কে সংযুক্ত করেছে। প্রস্তাবিত সড়কাংশটি আগে থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মূল অংশের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কাচঁপুর সেতু ও পোল্ডার সড়ক নির্মাণের ফলে সড়কের এই অংশ থেকে নতুন সড়কে যান চলাচল বেড়ে যায়। যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর অংশটি বর্তমানে ৮ লেন বিশিষ্ট মহাসড়ক যেখানে দেশের পূর্বাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সকল যান এসে মিলিত হয়। ফলে এই এলাকায় নিয়মিত যানজটের সৃষ্টি হয়। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টোলের কারণে যাত্রাবাড়ী- ডেমরা সড়কাংশে যান চলাচলের অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া,সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু সংখ্যক বাণিজ্যিক শিল্প প্রতিষ্ঠান আশেপাশে গড়ে ওঠায় যান চলাচলের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। কাচঁপুর সেতুর যানজট এড়ানোর জন্য সিলেট থেকে আগত যানবাহন তারাব-যাত্রাবাড়ী সড়কাংশ ব্যবহার করে। ঢাকা-ডেমরা-শিমাইল সড়কের দৈর্ঘ্য ১০ কিলোমিটার এবং বিদ্যমান প্রস্থ ৭ দশমিক ৩ মিটার। তাই প্রকল্পের আওতায় এই সড়কটি ১৫ দশমিক ৬০ মিটার প্রস্থে ৪ লেন সড়ক হিসেবে নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ধীরগতির যান চলাচলের জন্য প্রস্তাবিত মূল চার লেন সড়কের উভয় পাশে দুই লেন বিশিষ্ট আলাদা সার্ভিস লেন নির্মাণ করা হবে। সড়কটি উন্নয়ন করা হলে স্থানীয় যানবাহন ঝুঁকিপূর্ণভাবে রাস্তা পারাপার থেকে বিরত থাকবে এবং দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাওয়াসহ যানজটের তীব্রতা অনেকাংশে কমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
×