ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

আজ শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন

সুরের মায়া কাটিয়ে চলে গেলেন মুক্তিযোদ্ধা বুলবুল

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৩ জানুয়ারি ২০১৯

সুরের মায়া কাটিয়ে চলে গেলেন মুক্তিযোদ্ধা বুলবুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কৈশোরে দেশকে শত্রুমুক্ত করতে হাতে তুলে নিয়েছিলেন অস্ত্র। জীবনবাজি রেখে লড়েছিলেন মাতৃভূমিকে মুক্ত করার যুদ্ধে। স্বাধীন দেশে রাইফেল রেখে সমর্পিত হলেন সুরের ভুবনে। একাত্তরের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনে সুর করেছিলেন ‘সবকটা জানালা খুলে দাও না/ওরা আসবে’ শিরোনামের গানে। জীবন পরিক্রমায় চিরতরে থেমে গেল তার জীবনের সুর। সুরের মায়া কাটিয়ে চিরবিদায় নিলেন স্বদেশের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ শিল্পী আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। এই বীর মুক্তিযোদ্ধা, সুরকার, গীতিকার ও সঙ্গীত পরিচালক পাড়ি জমালেন অদেখার ভুবনে। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর আফতাবনগরের নিজ বাসায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। আধুনিক বাংলা গানের কিংবদন্তি এই শিল্পী রেখে গেছেন ছেলে সামির আহমেদসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী, ভক্ত, স্বজন ও সহযোদ্ধোকে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের তত্ত্বাবধানে আজ বুধবার সকাল ১১টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ইমতিয়াজ আহমেদ বুলবুলকে জানানো হবে নাগরিক শ্রদ্ধাঞ্জলি। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাকে বিউগলের করুণ সুরে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে। এরপর বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে জানাজা। এরপর শবদেহ নিয়ে যাওয়া হবে বিএফডিসিতে। সেখানে দ্বিতীয় দফা জানাজা শেষে বাদ আছর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত স্থানে সমাহিত করা হবে এই শিল্পীকে। মঙ্গলবার শিল্পীর শবদেহ রাখা হয় বারডেম হাসপাতালের হিমাগারে। আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের মৃত্যু খবরে সংস্কৃতি অঙ্গনে নেমে আসে বেদনার কালো চাদরে ঢাকা বিষণœ শোকের ছায়া। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পীকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। সাংগঠনিক শোক প্রকাশ করেছে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ও গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন। প্রিয় শিল্পী এবং একজন আদর্শিক মানুষকে হারানোর ব্যথা নিয়ে সহকর্মীসহ শুভানুধ্যায়ীরা ছুটে যান আফতাবনগরের বাড়িতে। তাদের মধ্যে ছিলেন প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোর, কুমার বিশ্বজিৎ, রুমানা ইসলাম, দিনাত জাহান মুন্নী, সালমা, সাব্বীর, গীতিকার আসিফ ইকবাল, কবীর বকুল, সঙ্গীত পরিচালক ইথুন বাবুসহ আরও অনেকেই ছুটে আসেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য দেয়া এই শিল্পীর প্রয়াণে শোকবার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই শোকবার্তায় স্বাধীনতা যুদ্ধের পাশাপাশি সঙ্গীতাঙ্গনে বুলবুলের অসামান্য অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার মৃত্যুতে দেশ হারালো একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী ও সুরকারকে। অপূরণীয় ক্ষতি হলো দেশের সঙ্গীতাঙ্গনের। কুমার বিশ^জিৎ তাৎক্ষণিকভাবে বলেন, ‘আমাদের দেশাত্মবোধক গানে তিনি নিজেই একটা হৃৎপি-। তাকে হারানোর ক্ষতি কোনভাবে পূরণ হবে না। ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডাঃ আশীষ চক্রবর্তী জানান, সকাল সোয়া ছয়টার দিকে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলকে হাসপাতালে আনা হয়। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। হাসপাতালে আনার আগেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বুলবুলের ছেলে সামির আহমেদ জানান, অনেক দিন থেকেই অসুস্থ ছিলেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। তিনি হৃদরোগে ভুগছিলেন। তার হার্টের ধমনীতে আটটা ব্লক ছিল। গত বছর মে মাসে রিং পরানো হয়। সে সময় প্রধানমন্ত্রী হাসিনা তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হলেও দেশপ্রেমিক এই শিল্পী দেশেই চিকিৎসা নিয়েছেন। ইদানীং তার শরীরটা ভাল যাচ্ছিল না। নানা সমস্যা হচ্ছিল। সোমবার চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা থাকলেও যেতে পারেননি। মঙ্গলভার ভোর চারটার দিকে তিনি তার রেকর্ডিস্ট রোজেনকে ফোন করে অসুস্থতার কথা জানান। এরপর সবাই তার কক্ষে ছুটে যান। এ্যাম্বুলেন্স খবর দেন। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বুলবুল সবসময় বলতেন, প্রকৃতি আমার শিক্ষাগুরু। জীবনের শুরুতে হাতে তুলে নিয়েছিলেন গিটার। মাত্র সাড়ে তের বছর বয়সে প্রথম গান লেখেন ‘ও মন ময়না, আয় ফিরে আয়না’। অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা হয়ে পাকিস্তানীদের সঙ্গে লড়েছিলেন। যুদ্ধ শেষে আবারও সুরের জগতে ডুবে যান। শ্রোতাদের উপহার দিয়েছেন ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’, ‘মাঝি নাও ছাইড়া দে ও মাঝি পাল উড়াইয়া দে’, ‘সেই রেল লাইনের ধারে, সুন্দর সুবর্ণ তারুণ্য লাবণ্য’, ও মাগো আর তোমাকে ঘুম পাড়ানি মাসি হতে দেব না’ ‘আমার সারা দেহ খেয়গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যিখানে’, ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন’, ‘আমি তোমারি প্রেমও ভিখারি’, ‘একাত্তরের মা জননী কোথায় তোমার মুক্তিসেনার দল’র মতো কালজয়ী সব গান। গত বছরের ১৬ মে ফেসবুকে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল তার অসুস্থতার খবর জানিয়ে একটি পোস্ট দেন। তার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। ২০০৭ সালে গণমাধ্যমে এক সাক্ষাতকারে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল বলেছিলেন, ‘আমার শৈশব কেটেছে ঢাকার আজিমপুর কলেনিতে। বাবা ওয়াফিজউদ্দীন আহমেদের সঙ্গে রেডিওতে গান শুনতাম। গুন গুন করে গাইতাম, সুর তুলতাম। একটু বড় হওয়ার পর গিটার কিনি। বুলবুল নামে এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে বাজানো শিখি। এরপর নিজে নিজে বেইজ গিটার, পিয়ানো বাজানো শিখলাম। এভাবেই আমার সঙ্গীতচর্চা চলতে লাগল। সত্যি বলতে আমার কোন গুরু ছিল না। প্রকৃতি আমার শিক্ষাগুরু। সেখান থেকেই আমি শিখেছি। আমি জীবনে প্রথম গান লিখেছিলাম সাড়ে তের বছর বয়সে। গানটা ছিল-‘ ও ময়না আয় ফিরে আয়না’। তিনি সেই সময়ের স্মৃতিচারণে আরও বলেন, নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরীসহ একটি দল গঠন করেছিলাম। আমরা রাত বারোটার পর হারমোনিয়াম হাতে পাড়া-মহল্লায় ঘুরে বেড়াতাম। গণসঙ্গীত, দেশাত্মবোধক গান গাইতাম। ২১ ফেব্রুয়ারির সকালবেলা প্রভাতফেরিতে যেতাম। এমনকি আবদুল লতিফ ভাইরা যখন গণসঙ্গীত পরিবেশন করতেন তখন আমরা তাদের গানগুলো শুনতাম, গাইতাম।’ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণে তিনি বলেন, ‘পনের বছর বয়সে আমি যুদ্ধে গিয়েছিলাম। সেক্টর-২ এ যুদ্ধ করেছি। দু’বার আর্মিদের হাতে ধরা পড়ি। জেলে ছিলাম প্রায় চার মাস। তবে আমাকে যুদ্ধে যেতে প্রথম সাহস যোগায় আমার ভাই টুলটুল। তিনি যুদ্ধে যান ২৬ মার্চ। এরপর আমিও মাকে বলে যুদ্ধে যাই। প্রথমে যাই ব্রাক্ষণবাড়িয়া। কাজ ছিল পাকিস্তানীদের বাঙ্কার খোঁজা। আমার সঙ্গে ছিল বন্ধু মানিক, মাহবুব। সেখানে আমি ধরা পড়ে যাই। আরও একবার ধরা পড়ি ঢাকায়। ছাড়া পাওয়ার পর আমি আর সারোয়ার মিলে নিউমার্কেটে গ্রেনেড চার্জ করি। ঈদের সময় পাকিস্তানীদের গাড়িতে আরেকবার গ্রেনেড ছুড়লাম। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ের সঙ্গীত জীবন নিয়ে বলেন, ‘একটা সময়ে ব্যান্ড গঠন করেছিলাম ‘আফটার মেথ’ নামে। এরপর ’৭৬ সালে বিটিভিতে ঢুকি। শুরুর সাতটা বছর শুধুই দেশাত্মবোধক গান করেছি। চলচ্চিত্রে আমার সুর করা প্রথম গান ছিল নাগরদোলা ছবির ‘ও আমার মন কান্দে’। এরপর ’৭৯ সালে ‘নয়নের আলো’ ছবি দিয়ে পরিপূর্ণভাবে চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনা শুরু করি। ‘আমার বুকের মধ্যখানে’সব অনেকগুলা গান হিট হলো। তবে আমি সঙ্গীত পরিচালক হওয়ার আগে সত্য সাহা, আলাউদ্দীন আলী, আলম খানের সহকারী হিসেবে কাজ করেছি।’ আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সৃষ্টি গানে শিল্পী সৈয়দ আবদুল হাদী, এন্ড্রু কিশোর, সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা, সামিনা চৌধুরীসহ কয়েক প্রজন্মের শিল্পীরা কণ্ঠ দিয়েছেন। তার লেখা ও সুর করা উল্লেখযোগ্য আরও গানের মধ্যে- একতারা লাগে না আমার দোতারাও লাগে না, আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি, আমার বুকের মধ্যিখানে, আমি তোমারি প্রেমও ভিখারি, ও আমার মন কান্দে, আইলো দারুণ ফাগুনরে, আমার একদিকে পৃথিবী একদিকে ভালোবাসা, আমি তোমার দুটি চোখে দুটি তারা হয়ে থাকবো, আমার গরুর গাড়িতে বৌ সাজিয়ে, পৃথিবীর যত সুখ আমি তোমারই ছোঁয়াতে যেন পেয়েছি, তোমায় দেখলে মনে হয়, কত মানুষ ভবের বাজারে, বাজারে যাচাই করে দেখিনি তো দাম, আম্মাজান আম্মাজান, স্বামী আর স্ত্রী বানায় যে জন মিস্ত্রি, আমার জানের জান আমার আব্বাজান, ঈশ্বর আল্লাহ বিধাতা জানে, এই বুকে বইছে যমুনা, প্রেম কখনো মধুর, কখনো সে বেদনাবিধুর, অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকেসহ আরও অনেক গান। দেশের সঙ্গীত জগতে অবদানের জন্য আহেমদ ইমতিয়াজ বুলবুল ২০১০ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন। এ ছাড়া সঙ্গীতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা এবং পুরস্কার লাভ করেন। প্রেমের তাজমহল সিনেমার জন্য তিনি ২০০১ সালে এবং হাজার বছর ধরে সিনেমার জন্য ২০০৫ সালে শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালকের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াতে ইসালমীর সাবেক আমীর গোলাম আযমের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছিলেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। ২০১২ সালের আগস্টে বুলবুল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেয়ার পরের বছর খুন হন তার ছোট ভাই আহমেদ মিরাজ। বুলবুলের মুক্তিযুদ্ধ ও সঙ্গীতজীবন : একাত্তরের রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ১৯৫৬ সালের ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। একাত্তরের এই যোদ্ধা ঢাকার আজিমপুরের ওয়েস্ট এ্যান্ড হাইস্কুলের ছাত্র ছিলেন। ২৫ মার্চ রাতের গণহত্যা দেখার পর প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত নেন বুলবুল ও তার কয়েকজন বন্ধু। প্রথমে বিহারীদের বাসা থেকে অস্ত্র ছিনতাই করে ছোট একটি মুক্তিযোদ্ধা দল গঠন করেন তারা। পরে জিঞ্জিরায় মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি তৈরি করেন। সেখানে পাকিস্তানী বাহিনীর আক্রমণে টিকতে না পেরে ঢাকায় ফিরে আসেন বুলবুল। জানতে পারেন বড় ভাই ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ টুলটুল মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা দল ক্র্যাক প্লাটুনে যোগ দিয়েছেন। পরে বড় ভাইয়ের কাছ থেকে পাওয়া গ্রেনেড নিয়ে জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে নিউমার্কেটের ১ নম্বর গেটে পাক বাহিনীর লরিতে আক্রমণ করেন বুলবুল ও তার বন্ধু সরোয়ার। আগস্টে ভারতের মেলাঘরে গিয়ে এক দফা প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে ঢাকার লালবাগ এলাকায় কাজ শুরু করেন বুলবুল ও তার বন্ধু সজীব। তাদের প্লাটুনকে বলা হতো ওয়াই (ইয়াং) প্লাটুন। অক্টোবরে রোজার মাসে আবার ভারতে যাওয়ার সময় কুমিল্লা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাঝামাঝি চেকপোস্টে পাকিস্তানী বাহিনী ও রাজাকারদের হাতে বন্দী হন বুলবুলরা চারজন। নির্মম নির্যাতনের পর তাদের উলঙ্গ অবস্থায় বাসে করে নিয়ে যাওয়া হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগারে। সেই জেলখানায় অন্তত ৫৫ জন মুক্তিযোদ্ধাকে বন্দী রেখেছিল পাকিস্তানী বাহিনী। রোজার ঈদের দিন সন্ধ্যায় ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় পুলিশ কর্মকর্তা ছিরু ও তার ছেলেসহ ৩৯ জনকে আলাদা করে জেল থেকে বের করে এনে হত্যা করে পাকিস্তানী সেনারা। তাদের মধ্যে একজন বুলবুল প্রাণে বেঁচে যান। দুই দিন পর বুলবুলদের চার বন্ধুকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শান্তি কমিটির অফিস দানা মিয়ার বাড়িতে নিয়ে নির্যাতন চালানো হয়। সেই রাতেই সেখান থেকে পালিয়ে যান বুলবুলরা। ১৯৭৮ সালে ‘মেঘ বিজলি বাদল’ সিনেমায় সঙ্গীত পরিচালনার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন বুলবুল। এরপর আমৃত্যু তিনি নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন সঙ্গীত সাধনায়। বেলাল আহমেদের পরিচালনায় ১৯৮৪ সালে নয়নের আলো চলচ্চিত্রের সঙ্গীতায়োজন করেন বুলবুল। ওই সিনেমার জন্য তার লেখা ‘আমার সারা দেহ খেয়োগো মাটি’, ‘আমার বাবার মুখে’, ‘আমার বুকের মধ্যিখানে’, ‘আমি তোমার দুটি চোখের দুটি তারা হয়ে থাকবো’ গানগুলো সে সময় তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। এর পরের চল্লিশ বছরে দুই শতাধিক চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করেন বুলবুল।
×