ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মা সেতুর আরেক স্প্যান জাজিরা পৌঁছেছে, আজ বসানো হবে

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২৩ জানুয়ারি ২০১৯

পদ্মা সেতুর আরেক স্প্যান জাজিরা পৌঁছেছে, আজ বসানো হবে

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মুন্সীগঞ্জ ॥ অবশেষে পদ্মা সেতুর ‘এফ৬’ স্প্যান গন্তব্যে পৌঁছেছে। নাব্য সঙ্কট মোকাবেলার পর মাওয়া কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে সকাল সাড়ে ৮টায় রওনা হয়। কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে বিকেল পৌনে ৫টায় জাজিরা প্রান্তে ¯প্যানটি (সুপার স্ট্রাকচার) পৌঁছায়। এই প্রান্তের ৩৬ ও ৩৭ নম্বর খুঁটির ওপর ধূসর রঙের এই ¯প্যান বসিয়ে দেয়া হবে। এটি আজ বুধবার খুঁটিতে বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আর তাতে জাজিরা অংশে দৃশ্যমান হবে সেতুর ৯০০ মিটার। আর মাওয়া প্রান্তে আরও দৃশ্যমান রয়েছে ১৫০ মিটার। ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও তিন হাজার ১৪০ টন ওজনের ¯প্যানটি বসানোর এখন সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত। তিন হাজার ৬শ’ টন ধারণ ক্ষমতার ক্রেন ‘তিয়ান ই’ স্প্যানটিকে পাজা করে নিয়ে যায়। এখন ক্রেনে ঝুলিয়ে খুঁটির কাছকাছি নিরাপদ দূরত্বে এটি নোঙ্গর করা হয়েছে। পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানান, স্প্যানটি কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে বসানোর উপযোগী করে কিছুদিন ধরে ইয়ার্ডের জেটির কাছেই রাখা ছিল। কিন্তু নাব্য সঙ্কটের কারণে এটি নেয়া সম্ভব যাচ্ছিল না। কারণ স্প্যান বহনকারী ৩৬শ’ টন ধারণ ক্ষমতার ভাসমান ক্রেনটি চলাচলে পানির যে গভীরতা প্রয়োজন সেতুর চ্যানেলে তা ছিল না। এ কারণে অনবরত ড্রেজিং করে নাব্য ফিরিয়ে আনা হয়। মূল সেতুর মোট খুঁটি (পিয়ার) ৪২টি। এর মধ্যে ২০টি দৃশ্যমান, এর মধ্যে ১৬টির কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই দৃশ্যমান হচ্ছে আরও ১১টি খুঁটি। ৬, ৭, ৮, ৩১ ও ৩২ নম্বর এই পাঁচটি খুঁটিতেই পাইল বসেছে ৩টির বেশি। ৮, ৩১ ও ৩২ নম্বর খুঁটিতে খাঁজকাটা (ট্যাম) পাইল বসানোর কাজ চলমান আছে। আর ২৮ জানুয়ারিতে থেকে ৬ ও ৭ নম্বর খুঁটিতে আরও ৪টি করে খাঁজকাটা পাইল বসানো শুরু হচ্ছে। বাকি ছয়টি অর্থাৎ ১০, ১১, ২৬, ২৭, ২৯ ও ৩০ খুঁটিতেও খাঁজকাটা পাইল বসবে। তাই সেতুর মূল ভিতের কাজ এখন শেষ পর্যায়ে চলে আসছে। এতে সেতু চালু হওয়ার কাজও এগিয়ে যাচ্ছে। নদীতে ৪০টি খুঁটির মোট ২৬২টি পাইলের মধ্যে ১৯২টি পাইলের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ১৪টি পাইলের বটম সেকশনের কাজ হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই এগুলোর টম সেকশন হবে। এছাড়া ১৭টি ¯প্যান প্রস্তুত রয়েছে। প্রস্তুত করা হচ্ছে আরও ১৮টি ¯প্যান। সম্পূর্ণ হওয়া এই ৩৫টি স্প্যানের মধ্যে প্রকল্প এলাকায় পৌঁছেছে ১৯টি স্প্যান। বাকি ১৬টি স্প্যান পথে রয়েছে বা চীন থেকে আসার অপেক্ষায় রয়েছে। সেতুর নিচ তলায় চলবে ট্রেন। তাই নিচলায় ট্রেন চলাচলের জন্য স্লাব বসানো হচ্ছে। জাজিরা প্রান্তের বসিয়ে দেয়া স্প্যানে এ পর্যন্ত ১২৮টি রেলওয়ে স্লাব বসানো হয়েছে। রেললাইনের জন্য ২ হাজার ৯৫৯টির মধ্যে ১ হাজার ৩০৫টি সøাব তৈরি হয়েছে। রেলওয়ে স্লাবগুলো তৈরি হচ্ছে মাওয়া প্রান্তের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে। আর ২২ মিটার দীর্ঘ রোডরওয়ে স্লাব প্রয়োজন হবে ২ হাজার ৯১৭টি। মাওয়া ও জাজিরা দুপাড়েই এই রোডওয়ে স্লাব তৈরি হয়েছে এ পর্যন্ত ২৮০টি। এই মাসেই রোডওয়ে স্লাব বসানোর কথা রয়েছে। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুতে ৪২টি পিলারের ওপর বসবে ৪১টি ¯প্যান। আর দুপাড়ে ভয়াডাক্ট (সংযোগ সেতু) রয়েছে আরও প্রায় ৩ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার। সবমিলিয়ে সেতুটি হচ্ছে ৯ দশমিক ৮২ কিলোমিটার। সংযোগে সেতুও তরতর করে উঠে যাচ্ছে। পদ্মা বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো। সেতুর ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১ ও ৪২ নম্বর পিলারের ওপর ৫টি ¯প্যান বসানোর মাধ্যমে জাজিরা প্রান্তে পৌনে ১ কিলোমিটার কাঠামো দৃশ্যমান হয়েছে। আর এই ‘এফ৬’ স্প্যানটি বসানোর পরে সেতুটির ওই অংশে ৯শ’ মিটার দৃশ্যমান হবে। এছাড়া মাওয়া প্রান্তের ৬ ও ৭ নম্বর খুঁটির ¯প্যান (সুপার স্ট্রাকচার) ‘ওয়ান এফ’ আপাতত সেতুর ৪ ও ৫ নম্বর পিলারের ওপর রাখা হয়েছে। ৬ ও ৭ নম্বর খুঁটি ওঠার পরই এটি সরিয়ে নেয়া হবে।
×