* ক্রিস গেইল ১০১* (১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১২) ॥ বিপিএলের প্রথম আসরে প্রথম সেঞ্চুরির ঐতিহাসিক ইনিংসটি খেলেন ক্রিস গেইল। সিলেট রয়্যালসের বিপক্ষে রান তাড়া করতে নেমে বরিশাল বার্নার্সের গেইল মাত্র ৪৪ বলে সাতটি চার ও ১০ ছক্কায় ১০১ রানে অপরাজিত ছিলেন। গেইলের দানবীয় সেঞ্চুরি ইনিংসে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে তার দল।
* ক্রিস গেইল ১১৬ (১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১২) ॥ প্রথম সেঞ্চুরির মাত্র চারদিন পর আবার শতরান করেন ক্যারিবিয়ান জায়ান্ট। শক্তিশালী ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের বিপক্ষে ৬১ বলে ১১৬ রান করে আউট হন গেইল। ছয়টি চার ও ১১ ছক্কায় সাজানো ছিল তার ইনিংসটি।
* ডোয়াইন স্মিথ ১০৩* (২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১২) ॥ প্রথম আসরে বিপিএলের তৃতীয় সেঞ্চুরির ইনিংসটি খেলেন আরেক ক্যারিবিয়ান ডোয়াইন স্মিথ। খুলনা রয়্যাল বেঙ্গলের এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান ৭৩ বলে সমান ছয়টি চার-ছক্কায় ১০৩ রানে অপরাজিত ছিলেন। তবে রান তাড়া করে সিলেট রয়্যালস সেই ম্যাচ জিতে নেয়।
* আহমেদ শেহজাদ ১১৩* (২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১২) ॥ প্রথম আসরের চতুর্থ ও শেষ সেঞ্চুরিটি করেন বরিশাল বার্নার্সের পাকিস্তানী ওপেনার আহমেদ শেহজাদ। ১২টি চার ও ছয়টি ছক্কায় মাত্র ৪৯ বলে সাজানো তার ইনিংসের ওপর ভর করে দুরন্ত রাজশাহীর রান টপকে যায় বরিশাল।
* শাহরিয়ার নাফিস ১০২* (২৪ জানুয়ারি, ২০১৩) ॥ বিপিএলের পঞ্চম সেঞ্চুরি ইনিংসটি আসে শাহরিয়ার নাফিসের ব্যাট থেকে। দ্বিতীয় আসরে দুরন্ত রাজশাহীর বিপক্ষে খুলনা রয়্যাল বেঙ্গলের এই বাঁহাতি ৬৯ বলে অপরাজিত ১০২ রান করেন। খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে দর্শকরা দেখতে পায় নিজ দলের জয়।
* মোহাম্মদ আশরাফুল ১০৩* (১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩) ॥ বিপিএলে ছয় নম্বর সেঞ্চুরিয়ানের নাম মোহাম্মদ আশরাফুল। ২০১৩ আসরে ম্যাচ ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে নিষিদ্ধ হন তিনি। তবে সেই আসরেই খুলনা রয়্যাল বেঙ্গলের বিপক্ষে মাত্র ৫৮ বলে অপরাজিত ১০৩ রান করে দলকে জয় এনে দেন এই লিটল মাস্টার।
* ক্রিস গেইল ১১৪ (১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩) ॥ দ্বিতীয় আসরে সিলেট রয়্যালসের বিপক্ষে আবার সেঞ্চুরি করেন ক্রিস গেইল। তবে এবার ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের জার্সি গায়ে এই শতরান করেন তিনি। তার ৫১ বলে ১১৪ রান ঢাকার জয়ের ভিত তৈরি করে দেয়।
* এভিন লুইস ১০১* (১ ডিসেম্বর, ২০১৫) ॥ ঢাকা ডায়নামাইটসের রান তাড়া করতে নেমে এভিন লুইসের সেঞ্চুরিতে জয় পেয়ে যায় বরিশাল বুলস। ৬৫ বলে সাতটি চার ও ছয়টি ছক্কায় ১০১ রানে অপরাজিত ছিলেন এই ক্যারিবিয়ান। বিপিএল দেখে অষ্টম সেঞ্চুরি।
* সাব্বির রহমান ১২২ (১৩ নবেম্বর, ২০১৬) ॥ তৃতীয় বাংলাদেশী হিসেবে সেঞ্চুরি করেন রাজশাহী কিংসের ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমান। বরিশাল বুলসের বিপক্ষে ২০০ স্ট্রাইক রেটে মাত্র ৬১ বলে ১২২ রানের অবিশ্বাস্য এই ইনিংস খেলেন তিনি। নয়টি চার ও নয়টি ছক্কায় সাজানো তার ইনিংসটি ব্যর্থ হয়ে যায় শেষদিকের ব্যাটসম্যানদের ভুলে দল হেরে গেলে।
* ক্রিস গেইল ১২৬* (৮ ডিসেম্বর, ২০১৭) ॥ নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি রংপুর রাইডার্সের হয়ে খেলতে এসে খুলনা টাইটান্সের চোখের জল আর নাকের জল এক করা শতরান করেন ক্রিস গেইল। মাত্র ৫১ বলে অপরাজিত ১২৬ রানের ইনিংসটি খেলার পথে ছয়টি চারের পাশাপাশি ১৪টি বিশাল ছক্কা হাঁকান তিনি। বিপিএলে এটি ছিল দশম সেঞ্চুরি।
* জনসন চার্লস ১০৫* (১০ ডিসেম্বর, ২০১৭) ॥ একই আসরে রংপুরের ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যান জনসন চার্লস কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে বিপিএলের একাদশ সেঞ্চুরির ইনিংসটি খেলেন। ৬৩ বলে ১০৫ রান করে অপরাজিত জনসনের ইনিংসটি রংপুরের জয়ের পথ সুগম করে দেয়।
* ক্রিস গেইল ১৪৬* (১২ ডিসেম্বর, ২০১৭) ॥ পঞ্চম আসরের ফাইনালে ফেভারিট ঢাকা ডায়নামাইটসের মুখোমুখি হয়েছিল ডার্কহর্স রংপুর রাইডার্স। কিন্তু বিপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ এবং সম্ভবত সর্বশ্রেষ্ঠ ইনিংসটি এদিন উপহার দেন ক্যারিবিয়ান সুপারস্টার ক্রিস গেইল। ব্যাটিং ওপেন করতে নেমে মাত্র ৬৯ বলে ১৪৬ রানে নট আউট ছিলেন তিনি। অতিমানবীয় ইনিংসে পাঁচটি চারের পাশাপাশি রেকর্ড ১৮ ছক্কা হাঁকান এই জায়ান্ট। বিপিএলের দ্বাদশ সেঞ্চুরি ইনিংসের দিন ঢাকাকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় রংপুর।
* লরি ইভান্স ১০০ * (২১ জানুয়ারি, ২০১৯) ॥ এবারের আসরে রাজশাহী কিংসের ওপেনিং বার বার ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছিল। অনেক এক্সপেরিমেন্টের পর শেষ পর্যন্ত ওপেনিংয়ে নিয়ে আসা হয় ইংলিশম্যান লরি ইভান্সকে, যিনি মূলত মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান! ৩১ বছর বয়সী লরি দলে তার এবারের আসরে প্রথম চার ম্যাচ খেলেছেন মিডল অর্ডারে, চার থেকে ছয়ে!
প্রথম দিন ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে নেমেছিলেন চার নম্বরে। রান করতে পারেননি। ফিরে যান ১৩ বলে ১০ রানে। তারপর পজিশন বদল। খুলনা টাইটান্সের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে পাঁচ নস্বরে নেমে ১ রানে থাকেন নট আউট। তিন ও চার নম্বর খেলায় ব্যাটিং পজিশন আরও এক ধাপ নিচে নামে!
তিন নম্বর ম্যাচে ঢাকার বিপক্ষে ছয় নম্বরে খেলতে নেমে শহীদ আফ্রিদির বলে ০ রানে লেগ বিফোর হয়ে ফেরা। চার নম্বর ম্যাচে রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে ছয় নম্বরে নেমে ২ (৭ বলে) রানে আউট। মানে চার থেকে ছয়Ñ তিন পজিশনে চার ম্যাচ খেলে সর্বসাকুল্যে ১৩ রান!
তারপর ১৫ জানুয়ারি সিলেটে খুলনা টাইটান্সের বিপক্ষে তাকে ইনিংসের সূচনার দায়িত্ব দেয়া হয়। সেখানেও চরম ব্যর্থ। খুলনা পেসার জুনায়েদ খানের বলে ০ রানে আউট হন ইভান্স। ব্যাটিংয়ের এমন হতশ্রী অবস্থা যার, তাকে খেলানোয় আছে রাজ্যের ঝুঁকি। তারপরও ঝুঁকিটি নেয় রাজশাহী কিংস টিম ম্যানেজমেন্ট। আর তাতে বাজিমাত করেন লরি।
সোমবার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে খেলানো হয় এ ইংলিশকে। টিম লিস্টে তাকে ওপেনার হিসেবে দেখে অবাক হন অনেকেই। এমনিতেই রানে নেই, তার ওপর ঠিক আগের ম্যাচে ওপেন করতে নেমে ‘ডাক’ মেরেছেন, সেই লরি ইভান্সকে ওপেন করতে দেখে অবাক হবারই কথা। কিন্তু মাঠে নেমে সব হিসেব-নিকেশ পাল্টে দিলেন ইভান্স।
আগের পাঁচ ম্যাচের অনুজ্জ্বলতা ও ব্যর্থতা কাটিয়ে খেলে ফেললেন এক অনিন্দ্যসুন্দর ইনিংস। সম্ভবত এটি তার সেরা টি২০ ইনিংস। কারণ এই ফরম্যাটে আগে কখনও শতরান করেননি তিনি। তার আগের সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ৯৬। মিরপুর শেরেবাংলায় সোমবার ৬২ বলে ১০৪ রানের অসাধারণ এক ইনিংস উপহার দিয়ে একদম ‘জিরো থেকে হিরো’ বনে যান লরি ইভান্স। তার এই শতক বৃথা যায়নি। রাজশাহী জেতে ৩৮ রানে।
যদিও শুরুতে দলের অবস্থা ভাল ছিল না। শুরু ভাল হয়নি যথারীতি। ওপেন করতে নামা শাহরিয়ার নাফীস (৫), অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ (০) ও মার্শাল আইয়ুব (২) কিছুই করতে পারেননি। পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভার যেতেই (৬.১ ওভারে) ২৮ রানে সাজঘরে ওই তিন টপ অর্ডার।
এ অবস্থায় দলের সব চাপ নিজের কাঁধে তুলে নেন লরি। চাপের মুখে বিপদ ও সংকট কাটাতে শুরুতে বেশ কিছুক্ষণ খেলেন সতর্ক ও সাবধানে। তাই পঞ্চাশ করতে একটু বেশি (৪০ বল) সময় নিয়ে ফেলেন। তারপর সঙ্গী হিসেবে রায়ান টেন ডেসকাটকে পেয়েই আগ্রাসী হযে উঠলেন। তার পরের পঞ্চাশ আসে মাত্র ২১ বলে! শেষ পর্যন্ত ১৬৭.৭৪ স্ট্রাইকরেটে ৬২ বলে ১০৪ রানে নট আউট থাকেন তিনি।
এই রানের ৭২ আসে শুধু চার (নয় বাউন্ডারিতে ৩৬) ও (ছয় ছক্কায় ৩৬) ছক্কায়। ডাবলস নেন পাঁচটি। বাকি ২৪ শুধু সিঙ্গেলসে। বলার অপেক্ষা রাখে না ওই ২৪ সিঙ্গেলসের বেশীরভাগ নিয়েছেন পঞ্চাশের আগে। পরিসংখ্যান জানান দিচ্ছে, ইভান্সের হাফ সেঞ্চুরিতে ছিল পাঁচ বাউন্ডারি ও দুই ছক্কার মার।
চতুর্থ উইকেটে ডেসকাটকে (৪১ বলে ৫৯) সাথে নিয়ে লরি ইভান্স ১৪৮ রানের বিশাল জুটি গড়ে ফেলেন। যার ওপর ভর করে রাজশাহী পায় ১৭৬ রানের লড়াকু পুুঁজি। যা শেষ পর্যন্ত যথেষ্ট বলে প্রমাণ হয়। আর দলকে অমন লড়িয়ে পুঁজি গড়ার কারিগর হিসেবে ম্যাচসেরা হন লরি ইভান্স।