ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রুমেল খান

বয়স-উচ্চতা কম, মনোবল অনেক বেশি যে দলের...

প্রকাশিত: ০৭:১২, ২৩ জানুয়ারি ২০১৯

বয়স-উচ্চতা কম, মনোবল অনেক বেশি যে দলের...

১৫ জানুয়ারির কথা। হাড় কাঁপানো মাঘের মঙ্গলবারের দুপুর। স্থান ঢাকার পল্টনের শহীদ (ক্যাপ্টেন) এম. মনসুর আলী জাতীয় হ্যান্ডবল স্টেডিয়াম। আগেরদিন এখানে শুরু হয়েছে জাতীয় মহিলা হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতার ২৯তম আসর। পৃষ্ঠপোষকতায় এক্সিম ব্যাংক। এই আসরে অংশ নেয় ১৪ দল। এরা হলো : ফেনী, জামালপুর, নওগাঁ, নড়াইল, ঢাকা, পঞ্চগড়, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া ও বান্দরবান জেলা, বাংলাদেশ পুলিশ, বিজেএমসি এবং বাংলাদেশ আনসার। তবে প্রতিযোগিতার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় বুধবার। প্রধান অতিথি হিসেবে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন। উল্লেখ্য, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী হিসেবে এটাই রাসেলের প্রথম কোন আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। প্রতিযোগিতায় বিজেএমসিকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ আনসার। মঙ্গলবারে ফেরা যাক। হ্যান্ডবল স্টেডিয়ামে পৌঁছে দেখলাম দুটি দল খেলছে। এরপর আরেকটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পরবর্তী ম্যাচের একটি দল স্টেডিয়ামে ঢুকে ম্যাচ দেখতে লাগলো। একটু পরেই তারা স্টেডিয়াম সংলগ্ন প্র্যাকটিস গ্রাউন্ডে ঢুকে অনুশীলন শুরু করল। তবে অনুশীলন শুরুর আগে অবাক হতে হলো তাদের প্রার্থনা করতে দেখে। দলটিকে দেখে তো চক্ষু চড়কগাছ হবার জোগাড়। কেননা এই দলের বিশেষত্ব হলোÑ দলের খেলোয়াড়রা শুধু উচ্চতাতেই কম না, বয়সেও অন্য সব দলের চেয়েও কম। শুনে অবাক হবেনÑ দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে। এছাড়া ষষ্ঠ, পঞ্চম ... এমনকি চতুর্থ শ্রেণীরও শিক্ষার্থী আছে। চতুর্থ শ্রেণীর একজন, পঞ্চম শ্রেণীর দু’জন, ষষ্ঠ শ্রেণীর তিনজন, অষ্টম শ্রেণীর একজন আর বাকি পাঁচজন সব সপ্তম শ্রেণীর। আরও খোঁজ নিয়ে জানা গেলÑ দলটি হচ্ছে বান্দরবান জেলা মহিলা হ্যান্ডবল দল। আরও আশ্চর্যের বিষয়Ñ খেলোয়াড়রা সবাই একই স্কুলে পড়ে। স্কুলের নাম কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন যা লামায় অবস্থিত। বান্দরবান পাহাড়ী অঞ্চল হলেও এই দলের মাত্র দু’জন খেলোয়াড় পাহাড়ী, বাকিরা সবাই বাঙালী ও বিভিন্ন জেলার। বান্দরবান জেলা দলটি এবারই প্রথম জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়েছে। তবে তারা এর আগে আন্তঃস্কুল পর্যায়ে খেলেছে। সেখানে তারা দলটি লামা, বান্দরবান, সিলেট, চট্টগ্রাম এবং সবশেষে রাজশাহী বিভাগীয় পর্যন্ত খেলেছিল। সেবার তারা চতুর্থ স্থান অধিকার করেছিল। ‘যদি আমাদের মেয়েগুলো উচ্চতায় পিছিয়ে না থাকতো প্রতিপক্ষের চেয়ে তাহলে অবশ্যই তারা আরও ভাল ফলাফল করতে পারতো।’ বলেন দলের ম্যানেজার খাদিজা আক্তার। দলের দু’জন খেলোয়াড়ের সঙ্গে কথা হলো। তারাও জানায়, ‘আমরা বয়স ও উচ্চতায় কম হতে পারি, কিন্তু আমাদের মনোবল অনেক বেশি।’ দলের কোচের নাম সাচিয়ন মারমা। তিনি নিজেও একসময় হ্যান্ডবল খেলোয়াড় ছিলেন। ম্যানেজার খাদিজা অবশ্য খেলোয়াড় ছিলেন না। তবে হ্যান্ডবল ফেডারেশন থেকে কোচেস ও রেফারিজ ট্রেনিং করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। দুই বছর আগে কোয়ান্টাম স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বান্দরবান জেলা মহিলা হ্যান্ডবল দল গঠিত হয়, তখন থেকেই এই দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন খাদিজা। দল নিয়ে তার উচ্চাশা, ‘ইনশাল্লাহ, এই মেয়েরা আগামীতে অনেক ভাল খেলবে, তারা দেশের সেরা খেলোয়াড় হবে এবং অনেকদূর যাবে।’ একই কথা বলেছেন বাংলাদেশ হ্যান্ডবল ফেডারেশনের কোষাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর হোসেন, ‘আমি বান্দরবান জেলা দলের খেলা দেখেছি খুবই আগ্রহ নিয়ে এবং গভীর মনোযোগ সহকারে। ওদের অনেক ভাল খেলোয়াড় আছে। ওদের বয়স অনেক কম ঠিকই, কিন্তু সামনে ওরা ভাল খেলবে বলে আমার বিশ্বাস।’ দলের খেলোয়াড়দের বয়স ও উচ্চতা কম থাকলেও তারা অবশ্যই জাতীয় আসরে খেলার যোগ্য বলে মনে করেন খাদিজা। গ্রুপ পর্যায়ে দলটি ২টি ম্যাচ খেলে ১টিতে জিতেছে, ১টিতে হেরেছে। ঢাকা জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাছে ১৮-৭ গোলে হারলেও নড়াইল জেলা দলকে হারায় ২১-৪ গোলে। প্রতিপক্ষ নড়াইল জেলা দলের খেলোয়াড় সবাই উচ্চতায় এগিয়ে ছিল বান্দরবান দলের চেয়ে। কিন্তু উচ্চতা যে কোন সমস্যা নয়, সেটা জিতে দেখিয়ে দিয়েছে বান্দরবানের খুদে মেয়েরা। সেই সঙ্গে তারা নিজেদের খেলা দিয়ে মুগ্ধ করেছে উপস্থিত দর্শকদের। খাদিজা আরও বলেন, ‘এখন না হয় আমাদের দলের মেয়েদের বয়স ও উচ্চতা কম, কিন্তু আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যেই এরা আরও লম্বা হয়ে উঠবে, আর পরিপক্ব হবে। তখন তারা আরও ভাল ফল করবে। তবে এ জন্য তাদের অবশ্যই নিয়মিত কঠোর অনুশীলন ও পরিশ্রম করে যেতে হবে।’ আগামীতে বান্দরবানের এই খুদে মেয়েরা দেশের হ্যান্ডবলে আলো ছড়াতে পারবে কি না সেটা সময়ই বলে দেবে।
×