ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ রাশেদুল হক

কোহলির কাছে আনুশকাই সব!

প্রকাশিত: ০৭:১৩, ২৩ জানুয়ারি ২০১৯

কোহলির কাছে আনুশকাই সব!

মাঠে বিরাট কোহলির আগ্রাসন, যুদ্ধংদেহী উদ্যাপন নিয়ে প্রায়শ কথা হয়। চলে বিতর্ক। সম্প্রতি এক সাক্ষাতকারে সেনসেশনাল উইলোবাজ জানিয়েছেন, ভারতের হার তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারেন না। নিজের অজান্তেই এই আগ্রাসন ঠিকরে বেরোয়। ব্যাট হাতে প্রতিপক্ষ বোলারদের কচুকাটা করে গড়ে চলেছেন একের পর এক রেকর্ড। আগ্রাসন আর ব্যাটিংÑ দুই মিলিয়ে অনেকে ধরে নিতে পারেন ক্রিকেটই কোহলির ধ্যান-জ্ঞান। কিন্তু ব্যাটিংয়ের এ বিস্ময় পরিষ্কার বলেছেন, ক্রিকেট নয় স্ত্রী আনুশকা, পরিবারই তার কাছে সবার আগে। ‘খেলছি তো অনেকদিন হয়ে গেল, এখন আনুশকা, পরিবার প্রাধান্য পাবে। আমি নিজে, আনুশকা আর তারপর আমাদের পরিবারই গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্যই ক্রিকেট আমার জীবনেরই অংশ কিন্তু আমি মনে করি পরিবারকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত কারণ জীবনের চেয়ে বড় আর কিছু হয় না। হতে পারে না। ক্রিকেট জীবনের একটি অংশ মাত্র, জীবনের চেয়ে বড় কিছু হওয়া উচিত নয়।’ বলেন কোহলি। ক্রিকেটের প্রতি কোহলির নিবেদন অনস্বীকার্য। তাঁর ধ্যানজ্ঞানও সব এই ২২ গজের খেলাকে নিয়েই। ক্রিকেটের বর্তমান প্রজন্মের রোল মডেল হয়ে উঠেছেন। কিন্তু স্বয়ং কোহলির কাছে ক্রিকেটের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে জীবনে। আর সেটা হলো পরিবার। সম্প্রতি তিনি জানিয়েছেন ক্রিকেট তাঁর জীবনের একটি অংশ কিন্তু পরিবার প্রধানতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। তিনি আরও বলেন, ‘আমি এমন অনেককে জানি যার জীবনকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখে, বিষয়টা এমন যে ‘তুমি যদি ক্রিকেটকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে না নাও, তাহলে তুমি যথেষ্ট প্রতিজ্ঞাবদ্ধ নও।’ আমি এই নীতিতে বিশ্বাস করি না। একটু বড় করে চিন্তা করলে জীবন সব সময়ই আগে, কারণ অনেক কিছুই ঘটে ও ঘটতে পারে, কিন্তু দিন শেষে আপনি সব সময়ই ঘরে ফিরবেন। তাই আমি মনে করি প্রাধান্য দিতে হবে পরিবারকে, দেওয়াটাই উচিত।’ পরিবারকে সবার উঁচুতে অবস্থান দেওয়া এই ক্রিকেটার ধীরে ধীরে নিজেকে নিয়ে যাচ্ছেন সবার উঁচুতে। সম্প্রতি শচীন টেন্ডুলকারকে টপকে গেছেন বিশেষ এক রেকর্ডে। ক্যারিয়ারের উনিশ হাজার রান করতে সময় নিয়েছেন সবচেয়ে কম। দশ হাজার রান করার ক্ষেত্রেও সাবেক সতীর্থ শচীনকে টপকে এই রেকর্ড করেছিলেন। দশ বছর আগে ভারতের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইনিংস শুরু করা কোহলির প্রেমের ইনিংস শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালে। বলিউড তারকা আনুশকা শর্মা সঙ্গে শ্যাম্পুর বিজ্ঞাপন করতে গিয়ে পরিচয় হয় এই ক্রিকেটারের। আর প্রেম বিয়েতে পরিণতি পায় ২০১৭ সালে ডিসেম্বরে। কয়েক দিন পর পর একের পর এক রেকর্ড ভেঙে যাচ্ছেন ক্রিকেটে। আর অনুপ্রেরণা যে পরিবার থেকেই পাচ্ছেন, সেটা কি আর বলে দিতে হবে! বিয়ের পর থেকে সময়টা যে দুই তারকার ভাল কাটছে, পরের বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালের প্রথম দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের পোস্ট করা কিছু ছবিতেই সেট ফুটে উঠেছিল। কোহলির জীবনটাই যেন ‘বিদ্রোহ আর প্রেমের দিব্যি’! মাঠে তাঁর শরীরে ফোটে প্রতিপক্ষকে এতটুকু ছাড় না দেওয়ার ভাষা। মাঠের বাইরে সেই শরীরটাই আবার প্রেমের দিব্যি মেটাতে প্রিয়তমার ‘ঠোঁটে ঠোঁট রেখে ব্যারিকেড’ গড়ে তোলে! নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে বিশ্বখ্যাত গ্রাফিতি ‘দ্য কিস’-এর সামনে জীবনসঙ্গী আনুশকা শর্মার সঙ্গে বিরাটের ঠোঁটের ব্যারিকেড গড়ে তোলার ছবিতে সে সময় তরুণেরা ভীষণ মজেছিল। এক নাবিক ও নার্সের চুম্বনের ছবি আঁকা হয়েছে সেই সেই গ্রাফিতিতে (দেয়ালচিত্র)। সেই ছবির আদলেই নিজেদের আলিঙ্গনবদ্ধ করে তোলা ছবি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেন এই দম্পতি। ক্যাপশনে লেখা, ‘আমার এক এবং একমাত্র...।’ ক্যাপশন শেষে আবার ভালোবাসার চিহ্ন। তাঁদের সেই ছবি ভারতীয় তরুণদের মধ্যে ভীষণ সাড়া ফেলে। টান, দায়িত্ববোধ আর মান-অভিমান, সবই আছে দু’জনের সম্পর্কে। ২০১৭Ñএর ডিসেম্বরে প্রেমকে বিয়েতে পরিণতি দেওয়ার পর থেকে বিরাটের ভাগ্যও যেন খুলে যায়! মাঠে একের পর এক রেকর্ড গড়তে থাকেন। দুর্দান্ত এই পারফরম্যান্সের নেপথ্য প্রেরণা হিসেবে আনুশকার কথা খোলাখুলিই জানিয়েছেন তিনি। সত্যিই, বিয়ের পরও কোহলি যেভাবে প্রেম করে চলছেন, তাতে তরুণেরা কিন্তু ভারতীয় অধিনায়ককে অনুসরণ করতেই পারেন। ‘এই আছে এই নাই’ প্রেমের এই যুগে এমন দম্পতি যে বিরল! গত বছরই দেড় মাসের দীর্ঘ দক্ষিণ আফ্রিকা সফর শেষে ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি বিশ্রাম পেয়েছেন শ্রীলঙ্কায় নিদাহাস ট্রফি থেকে। অন্যদিকে নতুন সিনেমা ‘পরী’ মুক্তির পর তখন ছুটিতে ছিলেন বলিউড অভিনেত্রী আনুশকা শর্মাও। ছুটির এই সময়টাতে মুম্বাইয়ের নিজেদের আলিশান ফ্ল্যাটে জমিয়েই সংসার করছেন এই তারকা দম্পতি। ২৪ বছরের ক্যারিয়ারে ১০০টি আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন ভারতীয়দের ক্রিকেটঈশ্বর শচীন টেন্ডুলকর। ২০১৩ সালে অবসর নেয়ার সময় তার বয়স হয়ে গিয়েছিল ৪০Ñএর ওপরে। টেস্ট সেঞ্চুরি ৫১টি, ওয়ানডতে ৪৯। শচীনকে বলা হতো আধুনিক ব্যাটিংয়ের বিস্ময়। কোহলি তবে কি! অস্ট্রেলিয়া সফরে সিরিজে সমতা ফেরানো দ্বিতীয় ওয়ানডেতে দূরন্ত এক সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে রেকর্ড বইয়ের অনেক কিছুই নাড়িয়ে দিয়েছেন ভারত অধিনায়ক। বয়স ৩০ বছর। যেখানে শচীনের অর্ধেকেরও কম সময়ে, অর্থাৎ ১০ বছরের ক্যারিয়ারে তার ওয়ানডে সেঞ্চুরি ৩৯টি! শচীনকে ছুঁতে চাই আর ১০ সেঞ্চুরি, ছাড়িয়ে যেতে ১১টি। ও হ্যাঁ, গত এক বছরেই ১০টি আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি হাঁকানো কোহলির জন্য এটি হতে পারে সময়ের ব্যাপার। তিন ভার্সন মিলিয়ে শচীনের সেঞ্চুরি ১০০, রিকি পন্টিংয়ের ৭১ আর কোহলির ৬৪টি। ১০৪ রানের ইনিংসের মধ্য দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথম ভারতীয় ‘অধিনায়ক হিসেবে’ ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি হাঁকানোর পাশাপাশি গড়েছেন ক্যারিয়ারে দ্রুত ১৫০০০ আন্তর্জাতিক রান এবং এক ক্যালেন্ডার ইয়ারে সবচেয়ে বেশি ১০ সেঞ্চুরির নতুন রেকর্ড। পরিবারকে ধ্যান-জ্ঞান করেই ব্যাট হাতে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন ‘সুপার’ বিরাট কোহলি।
×