ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রহসনের নির্বাচনে বিজয়ী মাদুরো ফের ক্ষমতায়

প্রকাশিত: ০৭:৪৯, ২৩ জানুয়ারি ২০১৯

প্রহসনের নির্বাচনে বিজয়ী মাদুরো ফের ক্ষমতায়

ভেনিজুয়েলার সংবিধানে আছে যে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে শপথ নিতে হবে জাতীয় পরিষদে। কিন্তু নিকোলাস মাদুরো তার ৬ বছরের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করলেন গত ১০ জানুয়ারি সুপ্রীম কোর্টে শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে। এমনটি হওয়ার কারণ বিরোধী দল নিয়ন্ত্রিত জাতীয় পরিষদ গত মাসে অনুষ্ঠিত মাদুরোর নির্বাচনকে প্রহসনের নির্বাচন এবং তার দ্বিতীয় মেয়াদকে অবৈধ বলে গণ্য করেছে। অন্যদিকে নামমাত্র স্বাধীন সুপ্রীম কোর্ট মাদুরো সরকারের অনুগত ভৃত্য রয়ে গেছে। তাই আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার জন্য মাদুরো এই কৌশলটি অবলম্বন করলেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সিংহভাগ এই অনুষ্ঠান বর্জন করে। মাদুরো উত্তরোত্তর একতান্ত্রিক পন্থার আশ্রয় নিয়ে ক্ষমতা আঁকড়ে আছেন। তার প্রথম মেয়াদটি ছিল চরমভাবে ব্যর্থ। এ সময় বিপর্যয়কর অর্থনৈতিক সঙ্কট দেখা দেয়। অবশ্য এই সঙ্কটের বীজ তার পূর্বসূরি হুগো শ্যাভেজ রেখে গেছেন বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। শ্যাভেজ ভেনিজুয়েলার তেল থেকে অর্জিত বিপুল অর্থ সাধারণ মানুষের কল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করতেন। বিদেশ থেকে খাদ্য ও ওষুধপত্র কিনে এনে তা ভর্তুকি দরে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে দেয়া হতো। দেশে উৎপাদিত পণ্যসামগ্রীর ওপর মূল্য নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছিল। মাদুরো শ্যাভেজের এই কৌশল কঠোরভাবে মেনে চলার চেষ্টা করেন। কিন্তু তার আমলে তেলের দাম বেশ পড়ে যায়। ‘সরকারের রাজস্বে টান ধরে। বাধ্য হয়ে তিনি আমদানি কমিয়ে দেন। এতে পণ্যের ঘাটতি ও বুভুক্ষা দেখা দেয়। বাজেটে বিশাল ঘাটতি মেটাতে অর্থ সংস্থানের জন্য তিনি নোট ছাপতে লেগে যান। এতে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়Ñ যা গত বছর সম্ভবত ১০ লাখ শতাংশ দাঁড়িয়েছিল। এর পরিণতি জনদুর্ভোগ। খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতি, পানি ও বিদ্যুত সঙ্কট, বিনিয়োগের অভাব, বল্গাহীন দুর্নীতি, সহিংসতার বিস্তার জনজীবনকে বিষিয়ে তুলেছিল। এ অবস্থায় গত দু’বছরে ২৩ লাখ লোক স্বদেশ ছেড়ে আশপাশের দেশগুলোতে চলে গেছে। যারা রয়ে গেছে তারা ন্যূনতম মাসিক মজুরিতে কোনভাবে কায়ক্লেশে জীবন নির্বাহ করছে। ভেনিজুয়েলার বিভক্ত বিরোধী শিবির মাদুরোর সোশ্যালিস্ট পার্টির প্রাধান্য মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়েছে। ২০১৭ সালে বিরোধী রাজনীতিকরা চার মাস ধরে সাফল্যের সঙ্গে দেশব্যাপী বিক্ষোভ ধর্মঘটে হাজার হাজার মানুষকে শামিল করেছিল। এ সময় সরকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ১২০ জনেরও বেশি বিক্ষোভকারী নিহত এবং হাজার হাজার আহত হয়েছিল। এরপর মাদুরো সরকার জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতাদের অধিকাংশকে জেলে কিম্বা নির্বাসনে পাঠান। মে মাসে মাদুরো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আয়োজন করেন। তাতে জনপ্রিয় বিরোধী ব্যক্তিদের অংশ নিতে দেয়া হয়নি। অন্যদিকে বৃহত্তম বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বর্জন করে। মাদুরোকে এ নির্বাচনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। লাতিন আমেরিকার কয়েক ডজন সরকার ও কানাডা মানুষের প্রহসনের নির্বাচন ও তার সরকারের বৈধতাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। যুক্তরাষ্ট্র এই সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। প্যারাগুয়ে ভেনিজুয়েলার সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে সেখানে দূতাবাস বন্ধ করে দিয়েছে। তবে সুপ্রীম কোর্টের শপথ অনুষ্ঠান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বয়কট করলেও কিউবা, বলিভিয়া ও জর্জিয়ার প্রেসিডেন্ট তাতে উপস্থিত ছিলেন। মাদুরো জানান, ৯৪টি দেশ অনুষ্ঠানে প্রতিনিধি পাঠিয়েছিল। কারাকাসের রাস্তাঘাট সেদিন অস্বাভাবিক শান্ত ও নীরব ছিল। নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয় রকমের বেশি। এভাবে মাদুরো ভেনিজুয়েলায় গণতন্ত্রের অবশিষ্ট যেটুকু ছিল সেটাও হরণ করে নিয়েছেন এমন ব্যাপক অভিযোগের মধ্যে তার দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু হয়। মাদুরো অবশ্য নিজে একনায়ক এমন কথা স্বীকার করতে চাননি বরং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে দোষারোপ করে বলেছেন যে ভেনিজুয়েলার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক যুদ্ধ পরিচালনা করে তিনি দেশটিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। মাদুরো শপথ অনুষ্ঠানের পর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ভেনিজুয়েলায় একনায়কত্ব আগেও ছিল না। এখনও নেই এবং ভবিষ্যতেও হবে না।’ এই মাদুরো শেষ পর্যন্ত কত দিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবেন সেটাই প্রশ্ন। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট ও অন্যান্য
×