ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ভারতে ইভিএম কারচুপি জেনে ফেলায় জোড়া খুন?

প্রকাশিত: ১৭:৪৯, ২৩ জানুয়ারি ২০১৯

ভারতে ইভিএম কারচুপি জেনে ফেলায় জোড়া খুন?

অনলাইন ডেস্ক ॥ ভারতের ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে গোপন প্রযুক্তির মাধ্যমে ইভিএমে (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) কারচুপি করা হয়েছিল। ইভিএমে ‘হ্যাক’ করে বদলে দেয়া হয়েছিল নির্বাচনের ফলাফল। প্রযুক্তির মাধ্যমে নির্বাচনের ফল বদলে দেয়ার গোপন ঘটনা জেনে যাওয়াতেই খুন করা হয়েছিল বিজেপি নেতা গোপীনাথ মুন্ডে ও সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশকে। সম্প্রতি লন্ডনে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন মার্কিন সাইবার বিশেষজ্ঞ সৈয়দ সুজা। যে বিশেষজ্ঞ দলটি ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভারতের নির্বাচন কমিশনকে ইভিএম সরবরাহ করেছিল, সৈয়দ সুজা সেই দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। শুধু তাই নয়, প্রযুক্তির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের ব্যবহার করা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে কীভাবে কারচুপি করা যায়, তা-ও করে দেখিয়েছেন সৈয়জ সুজা। লন্ডনে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে ইউরোপের ইন্ডিয়ান জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল। যদিও এই অভিযোগ ‘উসকানিমূলক’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে ভারতের নির্বাচন কমিশন। ২০১৪ সালের ২৬ মে নরেন্দ্র মোদি সরকারের পঞ্চায়েত এবং গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন গোপীনাথ মুন্ডে। এক সপ্তাহ পর ৩ জুন নয়াদিল্লির কাছে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তার। সৈয়দ সুজার দাবি, ‘এটি দুর্ঘটনা নয়, পরিকল্পিত খুন। ইভিএমে কারচুপির ঘটনা ‘ফাঁস’ করার কথা ভাবছিলেন গোপীনাথ। সেই কারণেই সরিয়ে দেয়া হয়েছিল তাকে।’ শুধু গোপীনাথ মুন্ডে নয়, সৈয়দ সুজার কাছ থেকে ইভিএম দুর্নীতির বিষয়টি জেনেছিলেন সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশ। তিনিও বিষয়টি ফাঁস করে দেয়ার কথা ভাবছিলেন। সেই রিপোর্ট প্রকাশের আগেই অজ্ঞাতপরিচয় আততায়ীর গুলিতে মারা যান গৌরী। এই হত্যাও পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছেন মার্কিন সাইবার বিশেষজ্ঞ সুজা। শুধু ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনই নয়, ইভিএমে কারচুপি করা হয়েছিল উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র এবং গুজরাট বিধানসভার নির্বাচনেও। লন্ডন থেকে লাইভ সম্প্রচারে সাংবাদিক বৈঠক করে এই দাবি করেন সৈয়দ সুজা। নিম্ন কম্পাঙ্কের তরঙ্গের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে কারচুপি করতে বিজেপির তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) সেলকে সাহায্য করেছিল রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস। ইভিএমে কারচুপি করা যায় কি-না তা জানতে চেয়ে আম আদমি পার্টি, সমাজবাদী পার্টি এবং বহুজন সমাজ পার্টির পক্ষ থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন সুজা। কীভাবে ভারতের নির্বাচন কমিশনের ব্যবহার করা ইভিএমের তথ্য বদলে দেয়া যায়, লন্ডন থেকে সংবাদ সম্মেলনে সরাসরি সম্প্রচারে তা হাতে-কলমে করে দেখিয়েছেন এই তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। তার দাবি, ব্লু টুথ প্রযুক্তির মাধ্যমে ইভিএমের তথ্য বদলানো সম্ভব নয়। কিন্তু গ্রাফাইট দিয়ে তৈরি ‘ট্রান্সমিটার’র মাধ্যমে ইভিএমের তথ্যভাণ্ডার বা ডেটাবেস-এ ঢুকে পড়া সম্ভব। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই ট্রান্সমিটারই ব্যবহার করা হয়েছিল বলে সুজার দাবি। দেশটির ৯টি জায়গা থেকে এই নিম্ন কম্পাঙ্কের তরঙ্গ পাঠিয়ে বদলে দেয়া হয়েছিল ইভিএমের সমস্ত তথ্য। যারা এই কাজ করেছিলেন, তারা নিজেরাও জানতেন না যে তাদের কাজে বদলে যাচ্ছে সমস্ত নির্বাচনী ডেটাবেস। সৈয়দ সুজার এই চাঞ্চল্যকর সংবাদ সম্মেলনের পর বিবৃতি দিয়েছে ভারতের নির্বাচন কমিশন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা জানতে পেরেছি, লন্ডনে বলা হয়েছে আমাদের ব্যবহার করা ইভিএমে কারচুপি করা যায়। এই বক্তব্য উস্কানিমূলক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে আমাদের ইভিএম বানায় ভারত ইলেকট্রনিকস লিমিটেড এবং ইলেকট্রনিক কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেড। এ জন্য ২০১০ সালেই বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করেছি আমরা। আমাদের বিরুদ্ধে এই মন্তব্য করার জন্য আইনি ব্যবস্থা নেয়া যায় কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ বিজেপি নেতা মুক্তার আব্বাস নকভি বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদিকে সরানোর জন্য সব কিছুই করতে পারে কংগ্রেস। এই সংবাদ সম্মেলন তারই প্রমাণ। কপিল সিব্বলের মদতেই এসব চক্রান্ত করা হয়েছে।’ আগামী লোকসভা নির্বাচনে নিজেদের পরাজয় আঁচ করতে পেরেই এই ‘হরর শো’- আয়োজন করেছে কংগ্রেস, এমন মন্তব্যও করেছেন তিনি। ইভিএম দুর্নীতি নিয়ে এই খবর সামনে আসার পর টুইট করেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে পুরো বিষয়টি তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। ইভিএম দুর্নীতি নিয়ে এর আগেও দেশটির বিরোধী দলগুলো অভিযোগ তুলেছে। গত শনিবার কলকাতায় ব্রিগেড সমাবেশেও জোর গলায় ইভিএম ব্যবস্থার মাধ্যমে নির্বাচন পরিচালনার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ফারুক আবদুল্লা। ইভিএমকে ‘চোর মেশিন’ বলেও ব্রিগেড সমাবেশে আওয়াজ তুলেছিলেন তিনি। সূত্র- আনন্দবাজার।
×