ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অনিয়ম প্রতিরোধে সরকারী কেনাকাটা সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে : অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০২:০৫, ২৩ জানুয়ারি ২০১৯

অনিয়ম প্রতিরোধে সরকারী কেনাকাটা সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে  : অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ অনিয়ম প্রতিরোধে সরকারী কেনাকাটা সরাসরি ক্রয় পদ্ধতির পরিবর্তে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কমিটমেন্ট-তিনি আর কোন কাজেই কোথাও অনিয়ম, ত্রুটি দেখতে চাচ্ছেন না। তাই সকল অনিয়ম ও অপচয় রোধ করার জন্য স্বচ্ছতার নিরিখে প্রত্যেকটি কেনাকাটা উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এদিকে, দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে গুনদুম পর্যন্ত সিঙ্গেল রেললাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। ডেভলেপমেন্ট ডিজাইন কনসালট্যান্ট নামক একটি প্রতিষ্ঠানকে ৩৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০২২ সালের মধ্যে এই রেলপথ বাস্তবায়নের কাজ শেষ হবে। বুধবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয় ও ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। ওই সময় তিনি জানান, এই সরকারের এটিই প্রথম অর্থনৈতিক বিষয় ও ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক। বৈঠকে ১৪ লাখ ২০ হাজার মেট্রিকটন পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি প্রস্তাবসহ মোট ৫টি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটি। তিনি বলেন, সরকারী কেনাকাটার বিষয়টি একটি বড় এলাকা। এক্ষেত্রে সঠিক দাম নির্ধারণ করতে ব্যর্থ হলে অপচয় বাড়বে। তাই অপচয় রোধ করার জন্য সচ্ছতার নিরিখে প্রত্যেকটি কেনাকাটা উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আজকেই অর্থনীতি বিয়ষ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্প নীতিগত অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু প্রস্তাবটির অনুমোদন দেয়া হয়নি। এটি আরও যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, পানি নিষ্কাশনের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পগুলো একনেকে অনুমোদনের সময় বাস্তবায়নের জন্য উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি অবলম্বর করার শর্ত ছিল। রেলপথ নির্মাণ সংক্রান্ত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই রেলপথ নিয়ে আমাদের মূল সমস্যা ছিল ভুমি অধিগ্রহণ। এখন আর সমস্যা নেই। প্রয়োজনীয় জমি পাওয়া গেছে। কাজও শুরু হয়ে গেছে। ২০২২ সালে এ প্রকল্পটি শেষ করার কথা। আশা করছি নির্ধারীত সময়েই এটি শেষ হবে। প্রসঙ্গত, দশ মেগা প্রকল্পের মধ্যে এটি অন্যতম। জিওবি ও এডিবির অর্থায়নে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আগামী ২০২২ সালের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার কথা রয়েছে। এ কারণে ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির প্রথম বৈঠকেই প্রকল্পটি রাখা হয়েছে। দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে গুনদুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের ডিপিপি একনেকে অনুমোদন পায় ২০১০ সালের ৬ জুলাই। ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারবাসীর স্বপ্নের রেলপথের এই মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। বৈঠকে কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়য়ের সচিব এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রথম বৈঠকে পাঁচটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন ॥ ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির প্রথম বৈঠকেই পাঁচটি ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বিশ্বের ৬টি দেশের রাষ্টয়ত্ব প্রতিষ্ঠান হতে ১৪ লাখ ২০ হাজার মেট্রিকটন পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি প্রস্তাবসহ মোট ৫টি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠকে অনুমোদিত প্রস্তাবগুলো হলো, বিশ্বের ৬টি দেশের রাষ্ট্রয়াত্ত প্রতিষ্ঠান হতে পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির লক্ষ্যে জানুয়ারি-ডিসেম্বর-২০১৯ এ নেগোসিয়েশনকৃত পরিমাণ এবং জানুয়ারি জুন ২০১৯ প্রান্তিকের প্রিমিয়াম ও মূল্য অনুমোদন প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এতে মোট ১৪ লাখ ২০ হাজার মেট্রিকটন জ্বালানি তেল আমদানি করবে। ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৭৭২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। সরকার ইন্দোনেশিয়া, মালয়শিয়া, সিঙ্গাপুর, চায়না কুয়েত এবং ফিলিপাইন এ তেল আমদানি করবে। এর মধ্যে গ্যাস ওয়েল ১১ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিকটন, জেড এ-১ এক লাখ মেট্রিকটন, মোটর গ্যাস ৩০ হাজার মেট্রিকটন, ফার্নেস ওয়েল এক লাখ মেট্রিক টন। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন প্রি পেমেন্ট মিটারিং প্রজেক্ট ফর ডিস্ট্রিবিউশন কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ জোন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ১ লাখ ৫০ হাজার ৫৭৫টি প্রি পেমেন্ট মিটার এবং সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ সেবাসহ যন্ত্রাংশ ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। এতে মোট ব্যয় হবে ১৩৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এছাড়া এলেঙ্গা জামালপুর জাতীয় মহাসড়ক প্রশস্তকরণ শীর্ষক প্রকল্পের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। এতে মোট ব্যয় হবে ১০১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম জেলার অনোয়ারায় গ্যাস-আরএলএনজি ভিত্তিক ৫৯০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাবও অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
×