ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সাগর কোড়াইয়া

ট্রাফিক শৃঙ্খলা ফেরাতে

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ২৪ জানুয়ারি ২০১৯

ট্রাফিক শৃঙ্খলা ফেরাতে

মানুষ নিরাপদ জীবন প্রত্যাশী। তবে বর্তমান সময়ে সড়কে জীবনের নিরাপত্তার অভাবই আলোচিত বিষয়। তাই সমাজের মানুষের দাবি নিরাপদ সড়ক। কিন্তু নিরাপদ সড়কের দাবি শুধু দাবিতেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়; পূরণ কখনও হয় না। নিরাপদ সড়কের নীতিমালা, আইন ও রীতি কাগজ-কলমের একটি আঁচড়ে থেকে মুচকি হাসে। সাময়িকভাবে যদিও নিরাপদ সড়ক বিনির্মাণে তোড়জোড় লক্ষণীয় হয় কিন্তু পুরনো অবস্থায় ফিরে যেতে বেশি সময় লাগে না। জনসাধারণ নিরাপদ সড়কের অভাবে যানবাহন থেকে শুরু করে ফুটপাথেও নিরাপদ নয়। সড়কের নিয়মনীতি ভেঙ্গে সড়ক দখল করে আছে যানবাহন আর ফুটপাথ আছে হকারদের কব্জায়। এই উভয় সঙ্কট যেন জনসাধারণের গলার কাঁটা হয়ে প্রতিনিয়ত পীড়া দেয়। সড়কের যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, যেখানে-সেখানে যাত্রী উঠানো-নামানো ও হকারদের ফুটপাথে দোকানপাট বসিয়ে রমরমা ব্যবসার ব্যবস্থাপনায় পথচারীদের পথ হারিয়ে যেতে বসেছে। পথ আর দোকান যেন মিলেমিশে একাকার। আর এই চিত্রগুলো একটি প্রশ্নকে জাগ্রত করে- পথ তুমি কার! মৃত্যু সবার জীবনে ধ্রুবসত্য ও বেদনাদায়ক। কিন্তু সে ধ্রুবসত্য মৃত্যু যদি হত্যার সামিল হয় তাহলে তা মেনে নেয়া কঠিন। কলেজ শিক্ষার্থী করিম আর দিয়ার সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু ছিল যেন হত্যার সামিল। তাদের অকাল মৃত্যু সড়ক ব্যবস্থাপনাকে ব্যাপক নাড়া দিতে সক্ষম হয়। ক্ষণিকের জন্য নিরাপদ সড়কের দাবিতে সোচ্চার হয়েছিল স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ দেশের সচেতন জনসাধারণ। সড়কে নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে বেশ কঠোরভাবে দমন করা হয়েছিল সকল প্রকার অনিয়ম-দুর্নীতি। ফলে নিরাপদ সড়কের সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা জনগণ প্রত্যক্ষ করেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়- সড়কে অনিয়ম দূরীকরণের সমস্ত পদক্ষেপ কোন এক অদৃশ্য জোরে এক সময় স্থিমিত হয়ে পড়ে। নিরাপদ সড়ক নির্মাণে প্রত্যেক নাগরিককে এগিয়ে আসতে হবে। সবার মধ্যে যদি দেশপ্রেম জাগ্রত হয় তাহলে স্বাভাবিকভাবে সকল প্রকার অনিয়ম, দুর্নীতি দূর সম্ভবপর। দায়িত্ব এড়িয়ে অন্যের উপর দোষ চাপিয়ে নিজে হাত গুটিয়ে বসে থাকা দেশপ্রেমের লক্ষণ নয়। যানবাহনের চালক থেকে শুরু করে যাত্রী ও পথচারী সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করে যেতে হবে। চালক যেমন নিজ দায়িত্ব আইন ও নিয়মের মধ্যে থেকে পালনে সচেষ্ট থাকবে; তেমনি পথচারীকেও যত্রযত্র রাস্তা পারাপার না হয়ে যথাযথ ফুটপাথ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এটা সত্য- যে চালক ও পথচারীরা মহাসড়ক ও অন্যান্য সড়কে সভ্যতার বহির্ভূত আচরণ করে তারাই আবার সেনানিবাসের রাস্তাগুলোতে ঠিকই সভ্যভাবে যথাযথ নিয়ম পালন করছে। আর এর ফলে এই সত্যই প্রকাশিত হয় যে, আইনের প্রয়োগ যদি যথাযথ কঠোরভাবে ব্যবহৃত হয় তবে সবাই নিয়ম পালনে বাধ্য হবে। ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং ট্রাফিক শৃঙ্খলা ফেরাতে পুলিশের সহযোগিতায় রোভার স্কাউট, রেড ক্রিসেন্ট, গার্লস গাইডস ও বিএনসিসির সদস্যদের বিভিন্ন সময়ে কাজ করতে দেখা গিয়েছে। আর এ সময়ে গাড়ির চালক ও পথচারী সবাই আইন পালনে সচেতন হয়েছিল। কিন্তু আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে- কোন আইন প্রণয়ন করা হলে তার প্রয়োগ চলমান থাকে না। সড়ক ব্যবস্থাপনায় ঠিক তাই হয়েছে- সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হলেও তা বেশি দিন স্থায়ী না হওয়ায় সড়কে আগের হ-য-ব-র-ল চিত্র ফিরে আসে। আমরা আর সড়কে বিশৃঙ্খল অবস্থা চাই না। পথ তুমি কার- এই প্রশ্ন যেন আর বার বার ফিরে না আসে। বরং পথের ব্যবহার যেন যথাযথ নিশ্চিত হয়। বনানী, ঢাকা থেকে
×