ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণ করে লোকসানের মুখে কৃষক

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ২৪ জানুয়ারি ২০১৯

মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণ করে লোকসানের মুখে কৃষক

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফরিদপুর ॥ পেঁয়াজ উৎপাদনে দেশের শীর্ষস্থানীয় জেলা ফরিদপুর। ফরিদপুরে আগাম পেঁয়াজ হিসেবে খ্যাত মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে এসেছে। কিন্তু প্রত্যাশিত দাম না পেয়ে কৃষকদের মধ্যে নেমে এসেছে হতাশা। অনেক কৃষককে পড়তে হয়েছে লোকসানের মুখে। সেপ্টেম্বর মাসের শেষ থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কৃষক ঝুঁকি নিয়ে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ করে থাকেন। কেননা দেশে প্রায়শই অক্টোবর মাসের মাঝামাঝিতে দ্বিতীয় দফা আরেকবার বন্যা দেখা দেয়। দ্বিতীয়বারের বন্যা তীব্রতা বেশি হলে মুড়িকাটা পেঁয়াজের চারা ডুবে গিয়ে পচে যায়। বাংলাদেশের মধ্যে ফরিদপুর ও রাজবাড়ী অঞ্চলে সাধারণত এ পেঁয়াজের আবাদ হয়ে থাকে। ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ফরিদপুরে মুড়ি কাটা পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে ৫ হাজার ২৭০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে ফরিদপুর সদর উপজেলায় ২ হাজার ২০ একর জমিতে। এর পরে রয়েছে সদরপুর উপজেলা সেখানে আবাদ হয়েছে ১ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে। এ জেলার মধ্যে এ পেয়াজের আবাদ সবচেয়ে কম হয়েছে আলফাডাঙ্গা উপজেলায়, মাত্র ৫০ হেক্টর জমিতে। কমের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে নগরকান্দা উপজেলা, ৮০ হেক্টর। ফরিদপুর সদরের মধ্যে মুড়িকাটা পেয়াজের বেশি আবাদ হয় নর্থ চ্যানেল, চর মাধবদিয়া ও ডিক্রিরচর ইউনিয়নে। এ তিনটি ইউনিয়নই পদ্মা নদী অধ্যুষিত এলাকার মধ্যে পড়েছে। গত প্রায় ১৫ দিন আগে ক্ষেত থেকে মুড়ি কাটা পেঁয়াজ তোলা শুরু হযেছে। কিন্তু চাষী এ পেঁয়াজের তেমন দাম পাচ্ছে না। ফলে কৃষকদের মধ্যে নেমে এসেছে এক প্রকার হতাশা। মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ করেছেন এ ধরনের কয়েকজন কৃষকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ৩৩ শতাংশ জমিতে (এক বিঘা) জমি চাষাবাদ করে প্রস্তুত করা, বীজ বপন করা, সার, সেচ, নিড়ানি শেষে খেত থেকে পেঁয়াজ তুলে বাজারে আনতে খরচ পড়ে গড়ে ২৫ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে গড়ে ৪০ মণ পেঁয়াজ উৎপন্ন হয়। সে হিসেবে এক মণ পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ পড়ে ৬২৫ টাকা। ফরিদপুর সদরের নর্খ চ্যানেল ইউনিয়নের আয়জদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গি গ্রামের বাসিন্দা পেঁয়াজ চাষী মোঃ কাওসার শেখ বলেন, তিনি দেড়শ বিঘা জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণ করেছেন। তিনি বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে তার পেঁয়াজ আবাদ করতে খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। কিন্তু বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে অনেক কম দামে। বর্তমানে প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়। ফলে তিনি লোকসানের মুখে পড়েছেন। ওই একই ইউনিয়নের কায়মুদ্দিন ডাঙ্গি গ্রামের পেঁয়াজ চাষী কলম শেখ জানান, তিনি আড়াই বিঘা জমিতে এ বছর মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণ করেছেন। কিন্তু পেঁয়াজ বিক্রি করে তিনি দাম পাননি। তবে পেঁয়াজের ফুল বিক্রি করে তিনি কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিয়েছেন। নর্থ চ্যানেল ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মোস্তাকুজ্জামান বলেন, তার ইউনিয়নে অন্তত তিন শ’ একর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ করা হয়। এর পেছনে জড়িত রয়েছেন অন্তত তিন সহস্রাধিক কৃষক। তিনি বলেন, পেঁয়াজের লাভজনক দাম না পাওয়ায় কৃষকদের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে। তিনি বলেন, এ পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যায় না। এ কারণে কোন কোন কৃষক ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ তোলা বন্ধ করে দিয়েছে। ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, দেশের মধ্যে মুড়ি কাটা পেঁয়াজ শুধুমাত্র ফরিদপুর ও রাজবাড়ী অঞ্চলেই হয়। এ পেঁয়াজের সুবিধা হচ্ছে একই চাষী মুড়ি কাটা পেঁয়াজ উৎপাদন করার পর হালি পেঁয়াজও উৎপাদন করতে পারেন। এক জমিতে দু’বার পেঁয়াজ উৎপাদন তাই এই দুই জেলাতেই হয়ে থাকে। কৃষকদের দাম না পাওয়ার বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, মার্কেটিং (বাজার ব্যবস্থাপনা) নিয়ে তার পক্ষে মন্তব্য করা কঠিন। কেননা বাজারের দাম নির্ধারিত হয় চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে। তিনি বলেন, তবে এ কথা সত্য গতবছরের তুলনার এবার মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম অনেক কম।
×