ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মুশফিকের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে জয় চিটাগং ভাইকিংসের

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ২৪ জানুয়ারি ২০১৯

মুশফিকের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে জয় চিটাগং ভাইকিংসের

মিথুন আশরাফ ॥ একের পর এক ম্যাচে মুশফিকুর রহীম ব্যাটিং ঝড় তুলছেন। চিটাগং ভাইকিংসও জিতেই চলেছে। বুধবার যেমন রাজশাহী কিংসের বিপক্ষে অপরাজিত ৬৪ রানের ইনিংস উপহার দেন মুশফিক। তাতে করে চিটাগংও ৬ উইকেটে রাজশাহীকে হারিয়ে দেয়। রাজশাহীকে হারিয়ে চিটাগং টানা পাঁচ ম্যাচ জিতে যায়। ৭ ম্যাচের ৬টিতে জিতে ১২ পয়েন্ট নিয়ে আবার পয়েন্ট তালিকার শীর্ষেও উঠে যায় চিটাগং। ঢাকা ডায়নামাইটসকে পেছনে ফেলে দেয় মুশফিকুর রহীমের চিটাগং। চিটাগং টস জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। রাজশাহী ব্যাটিং করার সুযোগটি কাজেও লাগায়। তবে শুরুতে বিপত্তিতে পড়েছিল দলটি। সেই বিপদ লরি ইভান্স (৭৪), ক্রিস্টিয়ান জোঙ্কার (৩৬*) ও রায়ান টেন ডয়েশ্চেট (২৮) দূর করেন। এ ব্যাটসম্যানদের নৈপুণ্যেই ৫ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৫৭ রান করে রাজশাহী। জবাব দিতে নেমে মুশফিকের অপরাজিত ৬৪ ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের অপরাজিত ৪৩ রানের সঙ্গে দুইজনের পঞ্চম উইকেটে করা ৮৮ রানের জুটিতে জিতে যায় চিটাগং। ৪ উইকেট হারিয়ে ১৯.৪ ওভারে ১৫৯ রান করে জয় পায় চিটাগং। চিটাগংও শুরুতে খাদের কিনারায় পড়ে যায়। মোহাম্মদ শাহজাদ ব্যাটিং তা-ব দেখানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু সেই চেষ্টায় সফল হওয়া যায়নি। দলের ৩০ রানে গিয়ে আরাফাত সানির ঘূর্ণির ফাঁদে পড়ে ১৭ বলে ৫ চারে ২৫ রান করা শাহজাদ আউট হয়ে যান। তার আগে আরও ২ উইকেট পড়ায় চিটাগং বিপদেই পড়ে যায়। এরপর মুশফিকুর রহীম ও নজিবুল্লাহ জাদরান মিলে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান। তবে দলের ৭১ রান হতেই জাদরানকে (২৩) আউট করে দেন অসাধারণ বোলিং করা আরাফাত। মুশফিক-জাদরানের জুটি ৪১ রানের বেশি যেতে পারেনি। জাদরান আউটের পর মনে হয় চিটাগং বুঝি হারের খপ্পরে পড়ে গেল। কিন্তু মুশফিক উইকেটে থাকেন। তাই ভরসাও থাকে। মুশফিক ভরসার প্রতিদানও দেন। সঙ্গে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত এমন ব্যাটিংই করেন, আলো ছড়ান। দুইজন মিলে দলকে ১০০ রানে নিয়ে যান। দেখতে দেখতে দুইজনের জুটিতে ৫০ রানও হয়ে যায়। একদিকে মুশফিক, আরেকদিকে সৈকত মারমুখী হয়ে খেলতে থাকেন। ১৬ ওভারেই ১২৫ রানে চলে যায় চিটাগং। জেতার সম্ভাবনা তখন ভালভাবেই জেগে যায়। এই দুইজনের পরে আবার নাঈম হাসান ও রবি ফ্রাইলিঙ্কতো থাকেনই। ফ্রাইলিঙ্কতো প্রতি ম্যাচেই চিটাগংকে জেতাচ্ছেন। কিন্তু মুশফিক ও সৈকত যেভাবে এগিয়ে যেতে থাকেন তাতে মনে হয় এই দুইজনই খেলা শেষ করে ফেলবেন। ৩৯ বলে মুশফিকতো হাফ সেঞ্চুরিও করে ফেলেন। সর্বশেষ চার ম্যাচের তিনটিতেই হাফ সেঞ্চুরি করেন মুশফিক। সৈকতও মারমুখী ব্যাটিং করতে থাকেন। মুশফিকের হাফ সেঞ্চুরির সময় ১৬ বলেই ২ চার ও ২ ছক্কায় ৩০ রান করে ফেলেন সৈকত। দুইজন মিলে রাজশাহীর খানিক যে জয়ের আশা তৈরি হয়েছিল তা শেষ করে দেন। দলের ১৪০ রানের সময় মুশফিককে আউট করার সুযোগ মিলেছিল। কিন্তু ডিপ মিডউইকেটে জোঙ্কার ক্যাচ ধরতে ব্যর্থ হন। তার হাতে লেগে বল আবার ছক্কাও হয়। শেষে গিয়ে ১২ বলে জিততে ১২ রানের দরকার থাকে। মিরাজের করা ১৯তম ওভারের পঞ্চম বলে ডিপ মিডউইকেট দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচ জয়ের একেবারে কাছে নিয়ে যান মুশফিক। ৬ বলে জিততে লাগে ৪ রান। মুস্তাফিজুর রহমানের করা ২০তম ওভারের প্রথম তিন বলে ১ রান হয়। ৩ বলে জিততে লাগে ৩ রান। ম্যাচে কী নাটকীয়তার দেখা মিলবে? এমন প্রশ্ন ওঠার সঙ্গে সঙ্গে জবাবও মিলে যায়। চতুর্থ বলে মিডউইকেট দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দেন সৈকত। দুইজন মিলে ৮৮ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন। দুই বল বাকি থাকতেই টার্গেট অতিক্রম করে ফেলে চিটাগং। দুইজন মিলেই ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। আর কোন ব্যাটসম্যানকে নামার সুযোগই দেননি। মুশফিক শেষ পর্যন্ত ৪৬ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় অপরাজিত ৬৪ রান করেন। সৈকতের ব্যাট থেকে ২৬ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় অপরাজিত ৪৩ রানের দুর্দান্ত ইনিংস মিলে। দুইজনের অসাধারণ ব্যাটিংয়ে রাজশাহীকে হারিয়ে চিটাগংও পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে উঠে যায়। রাজশাহীর ইনিংস যে এত বড় হবে শুরুতে তা মনেই হয়নি। সৌম্য সরকার যে কি ব্যাটিং করছেন, তিনি হয়তো নিজেই বুঝতে পারছেন না। টানা পাঁচ ম্যাচ ব্যর্থ হওয়ার পর সৌম্যকে একাদশেই রাখা হয়নি দুই ম্যাচ। আবার যখন শাহরিয়ার নাফীসের পরিবর্তে নামানো হলো, সেই একই দশা হলো। ব্যর্থতাই নিয়তি হলো। মার্শাল আইয়ুবকে নিয়ে আশা দেখা হলেও প্রথম ম্যাচের পর আর জৌলুস ছড়াতে পারছেন না তিনিও। ৮ রানেই ২ উইকেট হারিয়ে রাজশাহী শুরুতে বিপাকে পড়ে যায়। তবে বড় স্কোর হওয়ার মতো ব্যাটসম্যান থাকায় এত চিন্তা ভর করেনি। এবার বিপিএলের ষষ্ঠ আসরের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান লরি ইভান্স থাকেন। সর্বশেষ ম্যাচেই তিনি অপরাজিত ১০৪ রানের ইনিংস খেলেন। সেই সঙ্গে রায়ান টেন ডয়েশ্চেটও ব্যাটিংয়ে থাকেন। দুইজন মিলে আবার বিপদ এড়িয়ে দলকে এগিয়েও নিয়ে যেতে থাকেন। দলের স্কোরবোর্ডে ৫০ রানও যোগ হয়ে যায়। তবে আর ১২ রান যোগ হতেই ডয়েশ্চেটকে (২৮) আউট করে দেন আবু জায়েদ রাহি। ইভান্সের সঙ্গে ৫৪ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়ে ডয়েশ্চেট আউটের পর এবার চাপ ঘাড়ে চেপে পড়ে। ততক্ষণে ১১ ওভার শেষ হয়ে যায়। স্কোরবোর্ড মজবুত করতে না পারলে চিটাগংয়ের শক্ত ব্যাটিং লাইনআপের সামনে যে কুলিয়ে ওঠা কঠিন। ইভান্স আবারও নিজের কাঁধে সব দায়িত্ব তুলে নেন। বিপর্যয় থেকে রাজশাহীকে উদ্ধার করার সবধরনের চেষ্টা করেন। ৪৪ বলে হাফ সেঞ্চুরিও করে ফেলেন। তার সামনে দিয়ে সৌম্য, মার্শাল, ডয়েশ্চেট, এমনকি আবারও ব্যর্থ হওয়া জাকির হাসানও সাজঘরে ফেরেন। কিন্তু ইভান্স উইকেটে অবিচল থাকেন। তবে রানের গতি অনেক বেশি ছিল না। ১৬ ওভারে গিয়েও ১০০ রান (৯২ যোগ হয়) স্কোরবোর্ডে যোগ হয়নি। এমন অবস্থায় মারমুখী হয়ে খেলার কোন বিকল্প পথ খোলা ছিল না। ইভান্স সেই পথেই হাঁটলেন। রাহির করা ১৭তম ওভারে তিনটি চার হাঁকিয়ে দেন ইভান্স। ওভারটিতে ১৬ রান নেন। রাজশাহীর স্কোরবোর্ডে ১০০ রানও জমা হয়ে যায়। দক্ষিণ আফ্রিকার আরেক ব্যাটসম্যান ক্রিস্টিয়ান জোঙ্কারকে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন। খালেদ আহমেদের করা ১৮তম ওভারের চতুর্থ বলেও ডিপ মিডউইকেট দিয়ে অসাধারণ এক ছক্কা হাঁকান ইভান্স। কিন্তু পরের বলেই মুশফিকুর রহীমের দুর্দান্ত এক ক্যাচের শিকার হন ইভান্স। জোঙ্কারের সঙ্গে তার জুটি ৪৭ রান পর্যন্ত টিকে। তবে আউট হওয়ার আগে ৫৬ বলে ৮ চার ও ২ ছক্কায় যে ৭৪ রানের ঝড়ো ইনিংস উপহার দেন, তাতেই রাজশাহী একটা সুবিধাজনক স্থানে যেতে পারে। দলের ১১৯ রানে গিয়ে ইভান্স আউট হওয়ার পর হাতে থাকে ২ ওভার। সেই দুই ওভার কাজে লাগান দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিস্টিয়ান জোঙ্কার ও মেহেদী হাসান মিরাজ। ১৯তম ওভারে দুটি চার হাঁকান মিরাজ। এদিন আর ব্যাটিংয়ে ওপরের দিকে ব্যাট করতে নামেননি মিরাজ। নিচের দিকেই নেমেছেন। তাতেও ঝলক দেখান। ৪ বলে ২ চারে অপরাজিত ১০ রান করেন। তবে শেষ মুহূর্তে জোঙ্কার যে ব্যাটিং তা-ব দেখান, তাতেই ১৫০ রানের বেশি করতে পারে রাজশাহী। শেষের দুই ওভারে দুটি ছক্কা ও দুটি চার হাঁকান জোঙ্কার। ২০তম ওভারে টানা তিন বলেই ১৪ রান করে ফেলেন। ২০ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় অপরাজিত ৩৬ রান করেন জোঙ্কার। শেষ দুই ওভারে জোঙ্কার ও মিরাজ মিলে স্কোরবোর্ডে ৩৬ রান যোগ করেন। এ দুইজনের জুটিও ১৩ বলেই ৩৮ রান করে ফেলে। ইভান্স ঝড় থামার পর জোঙ্কার ও মিরাজ মিলেই দলকে ১৫৭ রানে নিয়ে যান। এই রান অতিক্রম করতে গিয়ে মুশফিক ও সৈকতও ঝড় তুলেন। সেই ঝড়ে ল-ভ- হয়ে যায় রাজশাহী শিবির। দলটি পঞ্চম স্থানেই পড়ে থাকে। স্কোর ॥ রাজশাহী কিংস ইনিংস- ১৫৭/৫; ২০ ওভার (ইভান্স ৭৪, সৌম্য ৩, মার্শাল ১, ডয়েশ্চেট ২৮, জাকির ৫, জোঙ্কার ৩৬*, মিরাজ ১০*; খালেদ ২/৩০)। চিটাগং ভাইকিংস ইনিংস- ১৫৯/৪; ১৯.৪ ওভার (শাহজাদ ২৫, ডেলপোর্ট ১, ইয়াসির ৩, মুশফিক ৬৪*, জাদরান ২৩, সৈকত ৪৩*; আরাফাত ৩/২২)। ফল ॥ চিটাগং ভাইকিংস ৬ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ মুশফিকুর রহীম (চিটাগং ভাইকিংস)।
×