ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

নাজনীন বেগম

১২ সোনালি মুহূর্ত বিজয়ী নোবেল

প্রকাশিত: ০৭:৫৪, ২৪ জানুয়ারি ২০১৯

১২ সোনালি মুহূর্ত বিজয়ী নোবেল

কলকাতার দর্শক মাতানো রিয়েলিটি শো সা রে গা মা পা’র বর্তমান আকর্ষণ ও চমক অনেকের মধ্যে থাকলেও বাংলাদেশের মাইনুল হাসান নোবেলের কৃতিত্ব একেবারে নজর কাড়া। বাংলাদেশের রকস্টার জেমস এবং আইয়ুব বাচ্চুর একনিষ্ঠ অনুরাগী, ভক্ত নোবেল সব ধরনের গানে বাজিমাত করবে এমনটা আশা অনেকেই করেনি। প্রথমত কালজয়ী রবীন্দ্র সঙ্গীতে নোবেল কতখানি স্বাচ্ছন্দ্য হবে কি কথা ও সুরের অনবদ্যতায় কবির গানকে। কোন মাত্রায় নিবেদন করবে সেটাও এক ধরনের চ্যালেঞ্জ ছিল। আশ্চর্যজনকভাবে সম্ভাবনাময় এই উদীয়মান তরুণ কণ্ঠ রবীন্দ্রনাথের গানে নিজেকে যেভাবে উজাড় করে দিলেন সা রে গা মার বিচারকসহ তাবত দর্শক-শ্রোতা মুগ্ধকর ¯্রােতে ভেসে যায়। সেদিন রবীন্দ্র সঙ্গীতের কোন পর্ব ছিল না। তার চেয়েও বড় কথা নোবেল আগে কখনও কবির গান গেয়ে অভ্যস্তও নয়। প্রথমবার একাই সা রে গা মা পা’র এই পর্বে রবীন্দ্র সঙ্গীতের শুদ্ধ চেতনায় নিজেকে যেভাবে সমর্পণ করল- ভাবাই যায় না এই গান আগে কখনও তার কণ্ঠে ধারণ করা হয়নি। অবাক বিস্ময়ে মোনালি ঠাকুরের মতো কণ্ঠশিল্পী দাঁড়িয়ে পড়েন। শুধু তাই নয় নিজেও আবেগাচ্ছন্ন হয়ে ‘আমারও পরানো যাহা চায়’ গানটি গেয়েই ফেললেন। সত্যিটা বললে খারাপ শোনাবে তাও বলতে হয় নোবেলের পর সেদিন মোনালি ঠাকুরের গানটি সেভাবে দর্শক-শ্রোতাকে নাড়াতে পারেনি। সত্যিকারের ¯্রষ্টা কিভাবে তার সুজন মুহূর্তকে অবিস্মরণীয় আর অনবদ্য করে তোলেন সেটা সে নিজেও বুঝতে পারে না। নোবেলের অপ্রতিহত এগিয়ে যাওয়ার দুর্দান্ত গতিময়তায় এখনও কোন ছন্দপতন সেভাবে পরিলক্ষিত হয়নি। গাইলেন এ, আর রহমানের খাজা মেরে খাজা-সেখানে শ্রীকান্তের মতো সঙ্গীতাচার্যের কণ্ঠ থেকে বের হয়ে আসেÑ যেভাবে গানটা গাওয়া হলো সেখানে সামান্য সোনালি মুহূর্ত খুব বেশি কিছু নয়। অর্থাৎ পুরস্কারের মাহাত্ম্যাকে ছড়িয়ে যায় নোবেলের অনবদ্য উপস্থাপনা। শুধু দিন সেরাই নয় সপ্তাহ সেরা বিবেচিত হয়ে বাংলাদেশী এই তরুণ রকস্টার দেশের সম্মান ও মর্যাদা কোথায় নিয়ে গেল তা সত্যিই বিস্ময় ও আনন্দের। বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান টুঙ্গিপাড়ার এই ছেলেটি তার ছোট্ট পরিসর থেকে বৃহত্তর গ-ি পার হতে গিয়ে যে গৌরবে দেশকে অভিষিক্ত করল সেখানে সে একাই সঙ্গীতের মহানায়ক। বিদ্রোহের কবি নজরুল ইসলাম কারাবন্দীদের সঙ্গে নিয়ে যে গান লিখলেন এবং গাইলেন সে অসাধারণ মুক্তির গানটি আমরা এতদিন শুনে এসেছি সমবেত কণ্ঠের বিপ্লবীর নিবেদন। বহু জনের একাত্ম সুর আর কণ্ঠের অবনবদ্য সম্মিলনে যে গানের অভূতপূর্ব আবেদন তা যে একক কণ্ঠে আরও মনোমুগ্ধকর ও শ্রুতিমধুর হয় নোবেল তা অত্যন্ত শৈল্পিক সুষমায় সবাইকে তাক লাগিয়ে দিল। ‘কারার ঐ লৌহ কপাট ভেঙ্গে ফেল কর্ণে লোপাট’ এই অনন্য জোরালো গানটি নোবেল একক কণ্ঠে ধারণ করে বিচারকসহ দর্শকদের চরম লাগিয়ে দেয়। এখানেও শ্রীকান্ত, সান্তনু, মোনালি নোবেলকে প্রশংসায় অভিষিক্ত করে কোন পুরস্ককারকেই যথার্থ মনে করেননি। তারা শুধু দিন এবং সপ্তাহ সেরা উপাধি দিয়ে নোবেলের অসামান্য প্রতিভার বিচার করলেন। অনেকের অনুরোধে নতুন করে জেমসকে কণ্ঠে নিলেন এই উদ্দীপ্ত তারুণ্য। মাকে নিয়ে জেমসের সেই সাড়া জাগানো সঙ্গীত নিবেদন। এবার শুধু মুগ্ধতা নয় অশ্রুসিক্ত আবহে সা রে গা মা পা’র মঞ্চ আবেগে আন্দোলিত হলো। বাংলাদেশের কিংবদন্তি রকস্টার জেমস নিশ্চয়ই মাকে সমর্পণ করা এই গানটি তার আসা ধারণ নান্দনিক শৈলী আর চোখের পানিতে অগণিত ভক্তের হৃদয়ে কড়া নেড়েছেন। সবার মাকে আপন ভুবনে স্মরণও করিয়ে দিয়েছেন আমাদের মতো সাধারণ গুণমুক্ত ভক্তের সে অবধি পৌঁছানোও কঠিন। তাই জেমসের মৌলিক গানে তাকে শুধু স্মরণ করা ছাড়া অন্য কিছু নয়, আর কিছু নয়। কিন্তু নোবেলের কণ্ঠে মাতৃমহিমার সে গান কতখানি দর্শক-শ্রোতার হৃদয়ের নিভৃতে তোলপাড় করে দিল সে বিবেচনায় বিচরাকম-লীকে কোন একটা রায়ে এই তরুণ শিল্পীকে আটকাতে হয়। বিচরাকম-লী ভুলে যান সোনালি মুহূর্ত ছড়িয়ে দিতে। মুগ্ধতার আবেশে আচ্ছন্ন থাকা বিচরাকরা শেষ অবধি তাকে দিন এবং সপ্তাহসেরা বিবেচনায় অভিষিক্ত করেন। ১২টি সোনালি মুহূর্ত উপহার পাওয়া নোবেল এখন অবধি ৫ বার সপ্তাহ এবং দিন সেরা নির্র্বাচিত। আগামী পর্ব ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসকে উৎসর্গ করা। সে পর্বে নোবেল গাইল যা প্রোমতে দেখানো হচ্ছে মুক্তির মন্দির সোপান তলে কত প্রাণ হলো বলিদান ‘লেখা আছে অশ্রুজলে’ গানটি উপস্থিত সবাইকে দেশাত্মবোধের উদ্দীপ্ত চেতনায় যে মাত্রায় শাণিত করে তাও অবিস্মরণীয়। শ্রীকান্ত তো বলেই ফেললেন- তুই আরও চার ধাপ এগিয়ে গেলি... জানি না নোবেল শেষ পর্যন্ত কোথায় পৌঁছবে সে শুভক্ষণে অপেক্ষায় ১৬ কোটি বাংলাদেশের মানুষ, কলকাতার অসংখ্য ভক্ত, শ্রোতা এবং সারা বিশ্বের আগ্রহী সঙ্গীত পূজারী।
×