ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

যুব থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়...

প্রকাশিত: ১১:৫৮, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

 যুব থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়...

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আলাদা হচ্ছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম। ক্রীড়া পরিদফতর পরিদর্শন করে এ ঘোষণা দিয়েছেন নতুন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। এদিকে আগামী এসএ গেমসের জন্য অপেক্ষা না করে বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশ গেমসের জন্য ফেডারেশনগুলোকে প্রশিক্ষণ শুরুর তাগিদ দিয়েছেন তিনি। দায়িত্ব গ্রহণের পর মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রম ঘুরে দেখছেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী রাসেল। তারই ধারাবাহিকতায় ক্রীড়া পরিদফতর পরিদর্শনে এলেন তিনি। পরিদফতরের কার্যক্রমের সঙ্গে চলতি বছরে তাদের পরিকল্পনাও জেনে নেন রাসেল। সেই সঙ্গে ঘোষণা দিলেন- বিভক্ত হচ্ছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। আর পরিদফতর রূপ নেবে অধিদফতরে। এসএ গেমসকে সামনে রেখে অর্থের অভাবে এখনও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি কোন ফেডারেশন। অনিশ্চয়তার কারণেই অর্থ ছাড় দিতে পারছে না বলে জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী। তবে এসএ গেমসের বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশ গেমসকে লক্ষ্য করে হলেও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করার তাগিদ দিয়েছেন তিনি। এদিকে বিভিন্ন ফেডারেশনে নির্বাচনের নামে সমঝোতার প্যানেলের ব্যাপারে খোঁজ নিতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে (এনএসসি) নির্দেশ দেবেন বলেও জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী। উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পূর্বে বাংলাদেশ তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের খেলাধুলা পরিচালনা হতো ইপিএসএফ (ইস্ট পাকিস্তান স্পোর্টস ফেডারেশন), ডিএসসি (ঢাকা স্টেডিয়াম কমিটি) এবং এনএসটিসিসি (ন্যাশনাল স্পোর্টস ট্রেনিং এ্যান্ড কোচিং সেন্টার) ... এই তিন সংস্থার মাধ্যমে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এক সার্কুলার জারির মাধ্যমে গঠন করে বিকেএনএস (বাংলাদেশ ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ সংস্থা)। তৎকালীন শিক্ষা ও সংস্কৃতি মন্ত্রী অধ্যাপক ইউসুফ আলীকে চেয়ারম্যান করে ১৬ সদস্যের একটি কমিটি এই বিকেএনএস পরিচালনা করে। ওই কমিটি পরে এনএসটিসিসি, ইপিএসএফ ও ডিসিসি- এই তিনটি প্রতিষ্ঠান একত্রিতকরণের লক্ষ্যে একটি এ্যাডহক কমিটি গঠন করে। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের খেলাধুলায় প্রাণ ফিরিয়ে আনা, বিভিন্ন ডিসিপ্লিনে ফেডারেশন গঠন, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়সহ খেলাধুলার সুযোগ সৃষ্টিই ছিল তিনটি প্রতিষ্ঠানকে একত্রিতকরণের উদ্দেশ্য। ৩০ জুলাই, ১৯৭৪ সালে তিন প্রতিষ্ঠান একত্রিতকরণ বিল জাতীয় সংসদে পাস হয়, যার নাম বাংলাদেশ স্পোর্টস কাউন্সিল এ্যাক্ট’ ১৯৭৪ এবং গঠন করা হয় বিএসসি (বাংলাদেশ স্পোর্টস কাউন্সিল) অর্থাৎ বিকেএনএস-এর পরিবর্তিত নাম বিএসসি। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ ক্রীড়া পরিষদ এ্যাক্ট সংশোধন করে গঠন করা হয় এনএসসিবি (ন্যাশনাল স্পোর্টস কন্ট্রোল বোর্ড)। ১৯৮৯ সালে পুনরায় এ্যাক্ট সংশোধনীর জন্য জাতীয় সংসদে বিল উত্থাপন করা হয়। ১৯৯১ সালে গেজেটের মাধ্যমে সরকার এনএসসিবি নাম পরিবর্তন করে এনএসসি (ন্যাশনাল স্পোর্টস কাউন্সিল) করে। এনএসসির প্রধান কার্যাবলী হচ্ছে : বাংলাদেশের ক্রীড়া কার্যক্রমের মান উন্নয়ন, নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়করণ, জাতীয় ক্রীড়া সংস্থা ও অন্যান্য অধিভুক্ত ক্রীড়া সংস্থাকে স্বীকৃতি প্রদান, জাতীয় ক্রীড়া যোগ্যতার মানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের মানের সামঞ্জস্যপূর্ণ ক্রীড়া মানের প্রবর্তন ও উন্নয়ন সাধন আন্তর্জাতিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা প্রদান বিষয়ক স্কিম প্রতিস্থাপন ও কার্যনির্বাহী, বিদেশে খেলায় অংশগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা প্রহণ, ক্রীড়া সংস্থাগুলোকে ক্রীড়া কার্যক্রমের জন্য অনুদান (আর্থিক ও ক্রীড়া সামগ্রী) প্রদান এবং অনুরূপ সহায়তা প্রানের জন্য স্টেডিয়াম, সুইমিংপুল ও জিমনেশিয়াম নির্মাণ, দেশব্যাপী বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে স্টেডিয়াম, জিমনেশিয়াম, সুইমিংপুল, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও অন্যান্য ক্রীড়া স্থাপনাদি নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ, ক্রীড়াঙ্গন থেকে অবসরগ্রহণের পর দুঃস্থ এবং খ্যাতনামা খেলোয়াড়দের আর্থিক সাহায্য ও সহযোগিতা প্রদান, ক্রীড়া সংস্থাসমূহে ও ক্রীড়াবিদদের মধ্যে নিয়মশৃঙ্খলা নিশ্চিতকরণে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ, ক্রীড়া ও ক্রীড়াবিদদের নিয়ে পুস্তকাদি ও পত্রিকা প্রকাশ করা এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার প্রদানের জন্য যথাযথভাবে প্রস্তাব প্রেরণ। এর রূপকল্প হচ্ছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্রীড়াঙ্গনকে সমুন্নত করার মাধ্যমে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে সুস্থ ও মাদকমুক্ত জাতি গঠনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে ক্রীড়া কার্যক্রমের মান বৃদ্ধি ও প্রসারের সঙ্গে ক্রীড়া অবকাঠামো উন্নয়ন, ক্রীড়া ফেডারেশন/সংস্থাকে যথাযথ অনুদান এবং উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ক্রীড়াঙ্গনকে সব ক্ষেত্রে একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে সমুন্নত করা। কিন্তু এনএসসি গঠনের পর থেকে যুব ও ক্রীড়া দুটি আলাদা বিষয় নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বারবার জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বিশেষ করে ক্রীড়া সেক্টরটি যেভাবে বিকশিত হওয়ার কথা ছিল সেভাবে হয়নি। এখন দেখার বিষয়, যুব থেকে আলাদা হলে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় কতটা কার্যকর ও উপকৃত হয়।
×