ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অভিমত ॥ জীবদ্দশাতেই যেন স্বীকৃতি মেলে

প্রকাশিত: ১১:৪৬, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

অভিমত ॥ জীবদ্দশাতেই যেন স্বীকৃতি মেলে

বাংলাদেশে পদকের বিবেচনায় স্বাধীনতা ও একুশে পদক সবেচেয়ে সম্মানীয়। স্বাধীনতা পুরস্কার বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদক। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বীর শহীদদের স্মরণে ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতিবছর এই পদক প্রদান করা হচ্ছে। একুশে পদক দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার। ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে ১৯৭৬ সালে এই পদকের প্রচলন করা হয়। (তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া)। পদক প্রদানের শুরু থেকেই বিভিন্ন সময় জীবিত ব্যক্তিত্বদের পাশাপাশি মরণোত্তর পদকও দেয়া হচ্ছে। তবে, কখনও কখনও জীবিতদের ছাড়িয়ে গেছে মরণোত্তরের সংখ্যা। কয়েক বছরের চিত্র দেখলেই তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ২০০২ সালে ১৪ জন ব্যক্তিত্বকে জাতীয় জীবনে অবদানের জন্য ‘একুশে পদক’ দেয়া হয়; যাদের ৭ জনকে মরণোত্তর পদক দেয়া হয়। ২০০৩ সালে ১২ জন একুশে পদকপ্রাপ্তের মধ্যে ৫ জন ছিলেন মরণোত্তর। ২০১৪ সালে ৯ জন ব্যক্তিত্ব এবং ১টি প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় জীবনে অবদানের জন্য ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ সম্মাননায় ভূষিত করা হয়; যাদের মধ্যে ৭ জনকে ‘মরণোত্তর’ সম্মাননা প্রদান করা হয়। ২০১৬ সালে ১৫ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও একটি সংস্থাকে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। যাদের মধ্যে ৭ জনকে ‘মরণোত্তর’ সম্মাননা দেয়া হয়। ২০১৮ সালে ১৮ জন ব্যক্তিত্বকে জাতীয় জীবনে অবদানের জন্য ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ সম্মাননায় ভূষিত করা হয়; যাদের মধ্যে ১০ জনকে ‘মরণোত্তর’ সম্মাননা প্রদান করা হয়। (তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া)। এ কথা অনস্বীকার্য যে, স্বাধীনতা অথবা একুশে পদকপ্রাপ্তদের বেশির ভাগই ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিত্ব। এই ষাটের কোটায় এসে এমন অনেক সম্মানিত ব্যক্তিই প্রয়াত হয়েছেন যারা একুশে অথবা স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়ার দাবিদার ছিলেন। পরবর্তী সময়ে কেউ কেউ মরণোত্তর পদক পেয়েছেন বটে, যা তাদের পরিবারের পক্ষে গ্রহণ করা অনেক বেদনার ছিল। প্রয়াত জনপ্রিয় লেখক, নাট্যকার ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ তার ৬৩তম জন্মদিন উপলক্ষে প্রকাশিত গ্রন্থ ‘রংপেন্সিল’ এ অভিনেতা হুমায়ুন ফরিদীর একুশে পদক না পাওয়া নিয়ে আক্ষেপ করে লিখেছিলেনÑ ‘আচ্ছা, এই মানুষটি কি অভিনয়কলায় একটি একুশে পদক পেতে পারেন না? এই সম্মান কি তাঁর প্রাপ্য নয়? (যে পাঁচ হুমায়ূনের নাম করা হলো তাঁদের মধ্যে ফরিদী ছাড়া বাকি সবাই একুশে পদক পাওয়া।) মিতার ষাটতম জন্মদিনে তাঁর প্রতি আমার শুভেচ্ছা। হে, পরম করুণাময়, এই নিঃসঙ্গ গুণী মানুষটিকে তুমি তোমার করুণাধারায় সিক্ত করে রাখ। আমিন।’ মৃত্যুর ৬ বছর পর চলতি বছর হুমায়ুন ফরিদী মরণোত্তর একুশে পদক পেয়েছেন। বাংলা নাটকে আধুনিক নাট্যধারার প্রবর্তক সাঈদ আহমদ ২০১০ সালের ২১ জানুয়ারি প্রয়াত হন। এক মাস পরই তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন। চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার, লেখক এবং গীতিকার তারেক মাসুদ ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। পরের বছর অর্থাৎ ২০১২ সালে তাকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। প্রথাবিরোধী এবং বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদ ২০০৪ সালে মারা যান। তাকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয় ২০১২ সালে। জীবদ্দশায় পদক পেয়েছেন এমন অনেকে আছেন যাদের ক্ষেত্রে ওই পদক বিবেচনার জন্য অনেক বছর সময় লেগে গেছে। বাস্তবে এমন কিছু সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের মুখোমুখি হয়েছি যারা বলেছেন, পদক তেমন কিছু নয়, মানুষের ভালবাসাই সবচেয়ে বড় পুরস্কার। কিন্তু মন যে সে কথা বলেনি তা তাদের মুখ দেখেই বুঝেছিলাম। বিলম্বে হলেও তাদের কেউ কেউ পরবর্তী সময় পদক পেয়েছেন। জীবদ্দশাতে নিজের হাতে পদক নিতে পেরে তারা এবং তাদের পরিবার যে যারপরনাই খুশি হয়েছেন তা তাদের হাস্যোজ্জ্বল মুখ দেখেই বোঝা গেছে। এক সময় পদকপ্রাপ্তির দীর্ঘসূত্রতার তালিকায় পড়ে আমাদের অনেক গুণী মানুষই হারিয়ে গেছেন। পরবর্তী সময় যাদের অনেকের পরিবারকে মরণোত্তর পদক গ্রহণ করতে হয়েছে। বর্তমান দৃঢ়চিত্তের সরকার এ বিষয়ে যদি আরও তৎপর হন তবে নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, মরণোত্তর সংখ্যা কমে এসে জীবদ্দশাতেই কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পদক পাবেন গুণীজনরা। লেখক : সাংবাদিক
×