ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিরাপদ সড়ক নিয়ে আরও কিছু কথা

প্রকাশিত: ১১:৪৯, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

নিরাপদ সড়ক নিয়ে আরও কিছু কথা

নিরাপাদ সড়ক নিয়ে লেখা যেন শেষ হয়েও হয় না। এবারও মনের তাগিদে লেখা শুরু করলাম। নিরাপদ সড়ক নিয়ে যত কর্মসূচি নেয়া দরকার তা বর্তমান সরকার আন্তরিকভাবে তা করে যাচ্ছে। এ কথা সত্য যে, দীর্ঘ দিনের সমস্যা রাতারাতি পুরাপুরি সমাধান করা সম্ভব নয়। ধীরে ধীরে সড়ক এ স্বস্তি ফিরে আসবে। দেশের ট্রাফিক ব্যবস্থাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে যে পদক্ষেপ নেয়া দরকার বলে আমার মনে হয়, তাহলো- জেলা শহরে অস্থায়ীভাবে নতুন ড্রাইভারদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ট্রাফিক রুল সংবলিত একটি পুস্তিকা দিতে হবে। যা উন্নত বিশ্বের সকল দেশে দেয়া হয়ে থাকে। তারপর প্রশিক্ষণের পর লাইসেন্স দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা যেতে পারে। সারাদেশে আনাচে-কানাচে অনেক ড্রাইভারের হাতে যে নকল ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে তা ফেরত নিয়ে তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে এবং নিয়ম সম্পর্কে অবহিত করে নতুন লাইসেন্স দিতে হবে। এতদিন কিভাবে জাল লাইসেন্স নিয়ে ড্রাইভারগণ কাদের ইন্ধনে গাড়ি চালাচ্ছেন সেই চক্রকে আইনের আওতায় আনা দরকার। এ ব্যাপারে কোন আপোস করা যাবে না। ঢাকাসহ সারাদেশে ফিটনেসবিহীন সব যানবাহন রাস্তা থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। গ্রামের সাধারণ মানুষগণ কম ভাড়ায় যাতায়াত করার জন্য এসব গাড়িতে উঠেন। দুর্ঘটনা ঘটলে গ্রামের নিরীহ সাধারণ মানুষগুলোরই বেশি ক্ষতি হয়। দেশের শহরগুলোতে ট্রাফিক পুলিশ আছে কিন্তু গ্রামে কোন পুলিশ নেই। গ্রামকে সকল নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সারাদেশে কি পরিমাণ রিক্সা চলমান, পৌরসভা থেকে যে লাইসেন্স দেয়া হয় তা আপাতত বন্ধ করে দিলে নতুন করে আর রিক্সা রাস্তায় নামবে না। রিক্সাওলার সংখ্যা বৃদ্ধি কিন্তু উন্নয়নের নেতিবাচক ধারণা দেয়। তাই ধীরে ধীরে অমানবিক মানুষ টানার পেশা থেকে এদের উন্নত মানের পেশাতে নেয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। আন্তঃজেলার যে সকল রাস্তা ফোরওয়ে করা হচ্ছে সেগুলোতে একটি লাইন শুধু মালবাহী ট্রাক, ট্র্যাক্টরের জন্য রাখা যায় কি-না তা ভেবে দেখার জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগকে অনুরোধ রাখছি। বাংলাদেশ রেলওয়ের উন্নতির জন্য অনেক প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে এবং ইতোমধ্যে অনেক কাজের অগ্রগতি হচ্ছে চোখে পড়ার মতো। একটি বিষয় আমার মনে হয়েছে, প্রায় ৫০ বছর ধরে আমি দেখে আসছি লাল রঙের মরিচা ধরা মালবাহী ট্রেন, যাত্রীবাহী ট্রেন এখনও চলাচল করছে। এই মালামাল পরিবহনে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। ফলে ব্যবসায়ীগণ মালগাড়িতে মালমাল পরিবহন করার উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন, ফলে ট্রাকের উপর নির্ভরতা বেড়ে যায়। ট্রাকের উপর নির্ভরতা কমাতে হলে মালবাহী গাড়ির জন্য আলাদা লাইন তৈরি করে দিলে সারাদেশে নিরাপদে মাল পরিবহন করা সম্ভব হবে। আর যাত্রীবাহী রেললাইনে কোন সমস্যা হবে না। পুরাতন গাড়ি পরিষ্কার করে রং করে রাস্তায় নামাতে হবে। সারাদেশে যানবাহনের দিকে তাকালে মনে হয় যেন পরিত্যক্ত জায়গা থেকে এগুলো তুলে আনা হয়েছে। সুন্দর দূষণমুক্ত, শহর গড়ে তুলতে হলে রাস্তাঘাট পরিষ্কার পরিচ্ছন রাখতে হলে। বায়ু ধোঁয়ামুক্ত, সিসামুক্ত রাখতে হলে সকল জঞ্জাল ও আবর্জনা পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। ঢাকা থেকে শুরু করে সকল জেলাতে সরকারী-বেসরকারী সংস্থা যদি ড্রাইভারদের নিয়ে ওয়ার্কশপ সেমিনার আলোচনাসভা করে তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে বুঝিয়ে দেন এবং ট্রাফিক রুল সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয় তাহলে তারা আরও যতœশীল হবে। যানবাহন মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে তিন মাসে একবার সভা করে মালিকদের কিছু দিক-নির্দেশনা দিতে হবে যাতে করে তারা গাড়ির চালককে সঠিকভাবে পরিচালিত করতে পারেন। ঢাকায় চলমান ৬ নম্বর বাস, সায়েদাবাদ থেকে বলাকা, ছালছাবিল, আবাবিল, সুপ্রভাত, যেগুলো টঙ্গী পর্যন্ত যায়, ফার্মগেট থেকে ১০ নম্বর, ১১, ১২ নম্বরের দিকে যাতায়াতকারী মাইক্রবাসগুলা, সায়েদাবাদ থেকে বাড্ডা, কুড়িল, টঙ্গী, গুলিস্তান থেকে ফার্মগেট হয়ে মোহাম্মাদপুর পর্যন্ত চলাচলকারী বাসগুলোসহ সকল লাইনের বাসগুলো কিভাবে চলন্ত গাড়ি থেকে যাত্রী নামায় এবং কিভাবে যাত্রী উঠায় যারা এই রাস্তায় চলাচল করেন কেবল তারাই উপলব্ধি করতে পারবেন, অবস্থা এমন যে, যে কোন মুহূর্তে পথচারীর প্রাণ চলে যেতে পারে। যাত্রীগণ ওই কন্ডাক্টরের কাছে যেন ও জিম্মি হয়ে থাকেন। বাস পুরোপুরি না থামিয়েই পেছন দিক থেকে ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দেন, এভাবে যাত্রী নামান যে কি পরিমাণ ঝুঁকিপূর্ণ তা বলার ভাষা আমি খুঁজে পাচ্ছি না মানুষের জীবন যে এত ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলে এই কনডাক্টর নামক অদক্ষ বিবেকহীন মানুষটি। শুধু অর্থ উপার্জন করাই তাদের লক্ষ্য, এই বিষয়গুলো কোন দিন পত্রিকার পাতায় আসে না তাই এটা বন্ধের কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। যারা মোটরসাইকেল চালান অনেকেই দেখা যায় সামনে পেট্রোল ট্যাঙ্কের উপরে নিজের সন্তানকে বসান এবং সন্তানের মাকে পেছনে বসিয়ে মোটরসাইকেল চালান যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কানাডায় সম্প্রতি পাস হওয়া ট্র্যাফিক আইন-এ বলা হয়েছে যদি কেউ লাইসেন্স ছাড়া রাস্তায় গাড়ি চালান তাহলে জরিমানা ২৫০ ডলার, যদি কোন ড্রাইভার ঠিকানা পরিবর্তন ৬ দিনের মধ্যে কর্তৃপক্ষকে না জানান তাহলে জরিমানা ৩০০ ডলার। যদি দুর্ঘটনা ঘটে এবং সে সময় গাড়ির ইন্স্যুরেন্স না থাকে তাহলে ৫০০ ডলার জরিমান এবং ১ বছর লাইসেন্স স্থগিত থাকবে। লাল বাতি ক্রস করলে ৯০০ ডলার, দুইটি হলুদ লাইন ক্রস করলে ৫০০ ডলার, ইউটার্ন ভায়লেশন ১০০০ ডলার, গাড়ির গতি ১৫ কিলো বেশি হলে ২০০ ডলার, ১৬ থেকে ২৫ কিলো হলে ৪৫০ ডলার, একেবারে ধীর গতিতে গাড়ি চালালে ৩৯৯ ডলার, গাড়ি চালান অবস্থায় মোবাইল ফোন এ কথা বলে ১০০০ ডলার এবং ৩ বছরে জন্য ড্রাইভিং লইসেন্স স্থগিত। অন্ধকারে হেডলাইট না জালালে ২০০ ডলার, সিট বেল্ট না পরলে ২০০ ডলার, শিশুরা সিট বেল্ট না পরলে ৫৯৯ ডলার, আইনের বিধান রাখা হয়েছে। এই আইন জানুয়ারি ২০১৯ থেকে কার্যকরী হবে। ড্রাইভার ভাইদের বলছি, সারাদেশে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা দেখে কি আপনাদের সঠিক পথে চলার ইচ্ছা জাগে না। কেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বৈধ লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালাবেন, সাধারণ মানুষের জীবন চিরতরে শেষ করার ঝুঁকি নেবেন। আপনার জীবনের নিরাপত্তা আপনাকেই নিশ্চিত করতে হবে। ড্রাইভার ভাইদের জন্য কয়েকটি জরুরী বার্তা- ১. দিনে ৮ ঘণ্টার বেশি গাড়ি চালাবেন না, ২. বৈধ লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালাবেন না, ৩, যাত্রী তোলার জন্য অন্য গাড়িকে ওভারটেক করবেন না, ৪. গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন বন্ধ রাখবেন, ৫. ধূমপান করা থেকে বিরত থাকবেন, ৬. রাস্তায় লাইন পরিবর্তন করবেন না, ৭, মাসিক বেতন ঠিক না করে গাড়ির স্টিয়ারিং ধরবেন না, ৮. ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালাবেন না, ৯. অতিরিক্ত যাত্রী গাড়িতে তুলবেন না, ১০. মাথা ঠাণ্ডায় নিয়ম মেনে গাড়ি চালান, ১১. চোখে ঘুম আসলে গাড়ি থামান, আধা ঘণ্টা বিশ্রাম নিয়ে পুনরায় গাড়ি চালান, ১২, ট্রাফিক সিগনালকে সম্মান করে চলুন, ১৩. সকলের সঙ্গে সহনশীল আচরণ করুন, রাগান্বিত হবেন না, ১৪. নিয়মিত এবং সময়মতো খাওয়া-দাওয়া করুন, ১৫. ছোট গাড়ি, রিক্সাকে আবহেলা করবেন না, ১৬. আপনার জন্য বাড়িতে আপনার স্ত্রী, পুত্র, কন্যা সব সময় উদ্বিগ্ন থাকে তাই তাদের কথা চিন্তা করে সাবধানে গাড়ি চালান। লেখক : আহ্বায়ক- ক্যাম্পেইন ফর রোড সেফ্টি, নিউইয়র্ক
×