ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাণিজ্যে বসতি

প্রকাশিত: ০৯:৩৮, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

বাণিজ্যে বসতি

সদ্য সমাপ্ত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার ২৪তম উৎসবে রফতানির আদেশ হয়েছে প্রায় ২শ’ কোটি টাকার, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩৫ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। উন্নয়নের অভিগামিতায় বাংলাদেশের নিরন্তর এগিয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে দেশজ পণ্য উৎপাদন এক সম্ভাবনায় উজ্জ্বল পথচলা। চলতি বছরের বাণিজ্যমেলার আনন্দঘন উৎসব ক্রেতা-বিক্রেতার মাঝে যে চমৎকার বিপণনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দেশীয় বাহারি পণ্যের আকর্ষণ সেখানে স্পষ্টতই দৃশ্যমান। ফলে প্রায় এক মাস ধরে চলা এই বিরাট আয়োজনে দর্শনার্থীর সংখ্যাও অর্ধ কোটি ছাড়িয়ে যায়। আর মেলায় সরাসরি সম্পৃক্ত হওয়া বিভিন্ন বাণিজ্যিক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অধিক সংখ্যক রফতানির অর্ডার পেতেও খুব বেশি ভাবতে হয়নি। পোশাক শিল্পে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যসীমায় এক অনন্য রফতানির ক্ষেত্র, যা ইতোমধ্যে সবার কাছে স্পষ্ট এবং সম্ভাবনাময়। দেশের পণ্যসম্ভারের উৎপাদন গতি দ্রুত হওয়ার কারণে বাণিজ্যমেলার আয়তনও দিন দিন বাড়তে থাকবে। ফলে সীমিত পরিসরে বিস্তৃত বাণিজ্যমেলার উৎসবকে হিমশিম অবস্থানে পৌঁছানো যাবে না। নারায়ণগঞ্জের পূর্বাচলে প্রায় শত কোটি টাকার প্রকল্প ২০২০ সালে সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই নতুন মেলা চত্বরে সারা বছর বিভিন্ন পণ্যমেলার আয়োজন করা সম্ভব সীমাবদ্ধ কর্মযোগে। সেখানে দেশী-বিদেশী সব গ্রাহকের জন্য মেলা প্রাঙ্গণ উন্মুক্ত থাকবে। বিভিন্ন আয়োজনে এসব মেলায় বিদেশী দর্শনার্থীর ব্যাপক সমাগম দেশীয় পণ্যের রফতানিকেও আন্তর্জাতিক বলয়ে নিয়ে যাবে। সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের আর এক ধাপ অগ্রগতি তো বটেই। এবারের বাণিজ্যমেলায় অংশ নেয়া ৬০৫টি দেশীয় পণ্য প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে ৪২টি কোম্পানিকে বিভিন্ন মাত্রায় সম্মাননা ও পুরস্কার প্রদান করা হয়। এ ছাড়া পণ্যের মূল্যের সঙ্গে ভ্যাট প্রদানকে আরও উৎসাহিত করার লক্ষ্যে তিন সেরা ভ্যাট আদায়কারী প্রতিষ্ঠানকে ক্রেস্ট উপহার দেয়া হয়, যা বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতির এক ব্যাপক সংযোজন। বাংলাদেশ ছাড়াও আরও ২২টি দেশের ৫২টি প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশের অন্যতম আরও একটি নান্দনিক বাণিজ্যিক পণ্য ফুলের সৌরভ সারাদেশকে মাতিয়ে বিদেশে এর পদচারণা শুরু হয়। ফুলেল শুভেচ্ছায় বাঙালীরা নিজেদের সিক্ত করতে ভালবাসে। উৎসবপ্রিয় জাতি আমরা। উৎসব আর আয়োজন মানেই বাহারি পুষ্পের মনমাতানো সৌরভ। সুখে-দুঃখে, আনন্দ-বেদনায় শুধু নয়, বিশেষ বিশেষ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্মরণীয় উৎসব ফুলের অকৃত্রিম রূপ, রস, বর্ণ আর শোভায় মানুষকে আবেগে আপ্লুত করে। ফুলের শুদ্ধ সুবাসে ব্যক্তি মানুষ নবআনন্দে উচ্ছ্বসিত ও উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। আর এই ফেব্রুয়ারি মাস মানেই বিভিন্ন জাতের ফুলের উৎসবে সুশোভিত হওয়ার এক মহিমান্বিত পর্যায়। ১ ফাল্গুন কিংবা ভালবাসা দিবস ফুল ব্যতীত কল্পনাই করা যায় না। ঋতুরাজ বসন্ত এমনি ফুলের সমারোহ নিয়ে প্রকৃতির আনাচে-কানাচে যে আবির ছড়ায় তা যেমন মনোমুগ্ধকর, সুশোভিত, পাশাপাশি ফুল উৎপাদন চাষীর ও যাপিত জীবনের রুজি-রোজগার। ১৯৮৩ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের শুভযাত্রা শুরু হয় যশোরে। বর্তমানে তা ২২টি জেলায় সম্প্রসারিত হয়ে ফুল ব্যবসাকে রমরমা করে তুলেছে। রাজধানীতে দুটো বড় ফুলের বাজার আছে- একটা শাহবাগে, অন্যটা আগারগাঁওয়ের শেরেবাংলা নগরে। আর এই ফুল চাষে প্রতিবছরই উৎপাদন সক্ষমতা ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাচ্ছে। শুধু ফুলের উৎপাদনই বৃদ্ধি পাচ্ছে না, ফুলপ্রেমী মানুষের সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে। তবে এই ফেব্রুয়ারি মাসেই সারা বছরের তুলনায় অনেক বেশি ফুল বিক্রি হয়। শহীদের বিদেহী আত্মাকে শ্রদ্ধা আর সম্মান জানাতে ফুলের বিকল্প অন্য কিছু নেই।
×