ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীর ৯ উপজেলায় বিএনপির প্রার্থী নেই

নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ১২:০০, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ প্রথম দফায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে রাজশাহীর ৯টি উপজেলায় বিএনপির কোন প্রার্থী নেই এবার। তবে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতারাই। জেলার ৯ উপজেলার মধ্যে পবায় আদালতের রায়ে ভোট স্থগিত থাকলেও সেখানেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। আগামী ১০ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে জেলার সব উপজেলায় ভোট গ্রহণ। রাজশাহীর নয়টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করলেও মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন সোমবার পর্যন্ত বিএনপির কাউকে পাওয়া যায়নি। ফলে আওয়ামী লীগের জন্য উপজেলা নির্বাচনের মাঠ এখন পর্যন্ত অনেকটা পরিষ্কার। কিন্তু প্রার্থী ঘোষণা পর থেকেই জেলার নয়টি উপজেলার মধ্যে অন্তত ছয়টিতেই দেখা দিয়েছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব। এখন দলীয় প্রার্থীর বিপরীতে বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন কেউ কেউ। এতে জেলার অধিকাংশ উপজেলাতেই উপজেলা নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল দেখা দিয়েছে। কোথাও কোথাও ছড়িয়ে পড়েছে উত্তেজনা। বিশেষ করে জেলার দুর্গাপুর, বাগমারা, তানোর, গোদাগাড়ী ও পবা উপজেলায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রার্থী মনোনয়নের পর বঞ্চিতদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দুর্গাপুরে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলামকে। তবে নজরুল ইসলামের চেয়ে এখানে জনপ্রিয় নেতা আব্দুল মজিদকে মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে দাবি তুলে গত শনিবারই বিক্ষোভ করেন মজিদ সমর্থকরা। এ সময় তারা নজরুলের সমর্থকদের ধাওয়া দিয়ে উপজেলা সদর থেকে তাড়িয়েও দেন। নজরুলকে মনোনয়ন দেয়ার পর থেকে দুর্গাপুরে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। এখানে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবেও ঘোষণা দিয়ে মনোনয়ন দাখিল করেছেন। তিনি আওয়ামী লীগ হলেও নৌকায় ভোট না দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। একই অবস্থা জেলার বাগমারাতেও। এখানে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম সান্টুকে মনোনয়ন না দিয়ে দেয়া হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য অনিল কুমারকে। এমপি এনামুলের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত অনিল কুমারের পক্ষে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো নেতাকর্মী মাঠে নামেনি। এখানেও বর্তমান চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম সান্টু বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। তবে সান্টু বলেন, মনোনয়ন না পাওয়ায় নির্বাচনে অংশ নেয়ার ইচ্ছে তার নেই। তিনি বলেন, তাঁর ওপর অবিচার করা হয়েছে। তাঁকে মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। জেলার পবা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ফারুক হোসেন ডাবলু। কিন্তু এখানে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মুনসুর রহমানকে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ফারুক হোসেন ডাবলু তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘হায়রে তৃণমূল দরদী নেতা, তৃণমূলের চাওয়া-পাওয়ার কোন মূল্যায়ন হয় না’। মোহনপুরে মনোনয়ন পেয়েছেন এমপি আয়েন উদ্দিনের ভগ্নিপতি ও মোহনপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুস সালাম। এর আগেও আব্দুস সালাম নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হয়েছিলেন। এদিকে জেলার তানোর ও গোদাগাড়ীতেও তৃণমূলের নতুন দুই প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তবে গোদাগাড়ীতে মনোনয়ন বঞ্চিতরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মনোনয়ন না পেলেও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বদিউজ্জামান নির্বাচনে বিদ্রোহী হিসেবে অংশ নিচ্ছেন। একই উপজেলায় সাইদুর রহমান নামের আরেক জন আওয়ামী লীগের হয়েও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুনকে মনোনয়ন না দিয়ে এখানে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি লুৎফর হায়দার রশিদ ময়নাকে। এ নিয়ে মামুনের সমর্থকরা চরমভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। ময়নার পক্ষে তারা মাঠে না নামারও ঘোষণা দিয়েছে। এ উপজেলায় কৃষকলীগের আহ্বায়ক শরিফুল ইসলাম হঠাৎ করেই ওয়ার্কার্স পার্টিতে যোগদান করে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন নিয়েছেন। জেলার পুঠিয়াতেও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহসানুল হক মাসুদকে বাদ দিয়ে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জিএম হিরা বাচ্চুকে। মাসুদ দাবি করেন, তাঁকে মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সিদ্ধান্তের বাইরে এবার নতুনদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এতে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হলেও দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না।
×