ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহী অঞ্চল

সাত বছরে আমের বাগান দ্বিগুণ

প্রকাশিত: ১২:০২, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

সাত বছরে আমের বাগান দ্বিগুণ

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ গত কয়েক বছর ধরে আমের কাক্সিক্ষত দাম না পেলেও গেল সাত বছরে রাজশাহী অঞ্চলে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে আমবাগান। এর অধিকাংশই গড়ে উঠেছে বাণিজ্যিক উদ্দেশে। এই ক’বছরে আম উৎপাদন ছাড়িয়েছে দ্বিগুণ। কৃষি দফতর বলছে, ব্যাপক উৎপাদন হওয়ায় ভরা মৌসুমে কমেছে আমের দাম। তাছাড়া রফতানি বাজারও সম্প্রসারিত হচ্ছে না। আর এ কারণেই আম কেন্দ্রিক এ অঞ্চলের অর্থনীতি আগের অবস্থায় ফিরছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আম উৎপাদনের জন্য এতদিন খ্যাতি ছিল রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার। এ তিন জেলা ছাড়াও নাটোর জেলা নিয়ে রাজশাহী কৃষি অঞ্চল গঠিত। লাভজনক হওয়ায় আমবাগান তৈরি করছিলেন কৃষক। তাছাড়া গত এক দশকে এই অঞ্চলের বাইরেও ছড়িয়েছে আমবাগান। ফলে দাম কমেছে রাজশাহীর আমের। রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি দফতরের হিসাবে, সর্বশেষ গত ২০১৭-২০১৮ কৃষি বর্ষে এই অঞ্চলে আমবাগান ছিল ৭০ হাজার ৩৪৬ হেক্টর। তা থেকে আম উৎপাদন হয় ৮ লাখ ৬৬ হাজার ৩৬১ টন। এর আগে ২০১১-২০১২ কৃষি বর্ষে রাজশাহী অঞ্চলে আমবাগান ছিল ৪২ হাজার ৪১৭ হেক্টর। সেবার আম উৎপাদন হয় ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৭৩ টন। এরপর ২০১২-২০১৩ কৃষি বর্ষে ৪৮ হাজার ৬১০ হেক্টর বাগানে উৎপাদন হয় ৬ লাখ ১ হাজার ১৩৪ টন আম। ২০১৩-২০১৪ কৃষি বর্ষে আমবাগান বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ হাজার ৮৯১ হেক্টর। উৎপাদন বেড়ে ওই বছর দাঁড়ায় ৫ লাখ ৩৯ হাজার ২৫৫ টন। ২০১৪-২০১৫ কৃষি বর্ষে ৫৪ হাজার ৭২২ হেক্টর বাগানে আম উৎপাদন হয় ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৯৩৬ টন। ২০১৫-২০১৬ কৃষি বর্ষে ৫৭ হাজার ৮৬৪ হেক্টর বাগানে উৎপাদন হয় ৬ লাখ ৪২ হাজার ১৮৩ টন আম। এছাড়া ২০১৬-২০১৭ কৃষি বর্ষে ৬৬ হাজার ৩০০ হেক্টর আম বাগান থেকে ৭ লাখ ৫৬ হাজার ৮৪৯ টন আম উৎপাদন হয়। এদিকে, এবারেও মৌসুমের আগে থেকেই মুকুলের ভারে নুয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের আমবাগানগুলো। চারদিকে মধুর ঘ্রাণ। কেবলই ভ্রমরের গুঞ্জন। জানুয়ারির শেষভাগ থেকেই শুরু হয়েছে মুকুল আসা, আসবে মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। পরিচর্যায় বাগানে বাগানে আম চাষী ও বাগান মালিকরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলিম উদ্দিন জানান, বর্তমানে এ অঞ্চলের প্রায় ৭০ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছে। চলতি ফেব্রুয়ারির মধ্যেই সব গাছে মুকুল চলে আসবে। বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না এলে এবছর ভাল ফলনের প্রত্যাশা করছেন তারা। এই ফল গবেষক আরও বলেন, এখন চাষীরা অনেক বেশি সচেতন। বছরজুড়েই বাগানের পরিচর্যা চলছে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ হচ্ছে আম। এসেছে হাইব্রিডসহ নানান আমের জাত। ফলে এখন আর সিজন বা আনসিজন নেই। এই মুহূর্তের বাগান পরিচর্যা বিষয়ে তিনি বলেন, মুকুল আসার আগেই প্রতি লিটার পানিতে আধা মিলিলিটার ইমিডাক্লোপ্রিড গ্রুপের তরল এবং দুই গ্রাম ম্যানকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে। আম গুটি হওয়ার পরও আরেক দফা একই মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া আমের বয়স ৪৫ দিন হলে আগ্রহী চাষীরা আরেক দফা কীটনাশক প্রয়োগের পর ফ্রুট ব্যাগিং করতে পারেন। এদিকে, দেশে রেকর্ড আম উৎপাদন হলেও রফতানি তালিকায় নেই বাংলাদেশ। সীমিত হলেও গত কয়েক বছর ধরেই এই অঞ্চল থেকে আম রফতানি হচ্ছে বিভিন্ন দেশে। আর এ জন্য রাসায়নিকমুক্ত আম উৎপাদন করছেন চাষীরা। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শামছুল ইসলাম বলেন, আগে কেবল রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম উৎপাদন হতো। এখন সারাদেশেই ছড়িয়েছে আম চাষ। উৎপাদনও হচ্ছে ব্যাপক। ফলে বাজারে আমের দাম কম পাচ্ছেন বাগান মালিক। তিনি আরও বলেন, এখন সরকারের প্রধান লক্ষ্য আম রফতানি। তবে কৃষকরা যেভাবে আম চাষ করেন তাতে আমের গুণগতমান রক্ষা হচ্ছেনা। আর এ কারণেই নিরুৎসাহিত হচ্ছেন বিদেশী ক্রেতারা। তবে রফতানিযোগ্য আম উৎপাদনে বাছাইকৃত বাগান মালিকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন রফতানিকারকরা।
×