ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আওয়ামী লীগে বাড়ছে বিরোধ

প্রকাশিত: ১২:০৫, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

আওয়ামী লীগে বাড়ছে বিরোধ

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ চতুর্থ ধাপে বরিশাল বিভাগের উপজেলাগুলোতে ভোটগ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে নির্বাচনী আমেজ ছড়িয়ে পড়লেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে ক্রমেই বিরোধ চরম আকার ধারণ করেছে। চেয়ারম্যান পদে সকল উপজেলার জন্য কেন্দ্রের কাছে তিনজনের নাম প্রস্তাব করার নির্দেশনা থাকলেও বরিশালের অধিকাংশ উপজেলায় জেলা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড একক প্রার্থীর নাম কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডে পাঠানোর কারণে এ বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের কাছে দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও তার সকল সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। অপরদিকে ভাইস চেয়ারম্যান পদ কেন্দ্র থেকে উন্মুক্ত করার ঘোষণা করায় এবং চেয়ারম্যান পদের দাবিদার প্রার্থীকে ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে চূড়ান্ত ঘোষণা দেয়ায় জেলা মনোনয়ন বোর্ডের কাছে আবেদনের সঙ্গে জমা দেয়া টাকা ফেরত চেয়েছেন পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫৭ এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদের ৪২ প্রার্থী। সূত্র মতে, বরিশাল জেলার ১০টি উপজেলার মধ্যে নয়টি উপজেলার চেয়ারম্যান,পুরুষ ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থীর চূড়ান্ত তালিকা ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে উজিরপুর, আগৈলঝাড়া ও বাবুগঞ্জ উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যানদের পরিবর্তন করে নতুন প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। নয়টি উপজেলার অধিকাংশস্থানে পরিবর্তন করা হয়েছে বর্তমান পুরুষ ও নারী ভাইস চেয়ারম্যানদের। ফলে তৃণমূল পর্যায়ে জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও মনোনয়ন বঞ্চিত সমর্থকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে অধিকাংশ মনোনয়ন বঞ্চিতরা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং কেন্দ্র থেকে ভাইস চেয়ারম্যান পদ উন্মুক্ত ঘোষণা করায় ওই পদে একাধিক প্রার্থী অংশগ্রহণের ঘোষণা দেয়ায় আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে কোন্দল ছড়িয়ে পড়েছে। মুলাদী উপজেলার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের ৪৭ নেতৃবৃন্দ স্বাক্ষর করে বর্তমান বহুল বিতর্কিত উপজেলা চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম খান মিঠুকে পরিবর্তন করে নতুন প্রার্থী দেয়ার জন্য জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের কাছে আবেদন করেছিলেন। তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীর দাবিকে উপেক্ষা করে পুনরায় বিতর্কিত তরিকুল ইসলাম মিঠুকে একক চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়েছে। ফলে উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের দলীয় নেতাকর্মীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নদীবেষ্টিত ওই উপজেলার চেয়ারম্যান পদে আবেদন করা পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে তৃণমূলের জনপ্রিয়তায় এগিয়ে ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহসম্পাদক বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী জহির উদ্দিন খসরু। এদিকে বাবুগঞ্জ উপজেলার বর্তমান জনপ্রিয় চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সরদার খালেদ হোসেন স্বপনকে পরিবর্তন করে কাজী ইমদাদুল হক দুলালকে দলীয় মনোনীত একক প্রার্থী করা হয়েছে। একইভাবে উজিরপুরের বর্তমান চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ইকবালের পরিবর্তে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ সিকদার বাচ্চু, আগৈলঝাড়া উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য গোলাম মোর্তুজা খানের পরিবর্তে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত, গৌরনদী উপজেলায় তৃণমূলের জনপ্রিয়তায় এগিয়ে থাকা বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিল্পপতি নুরুজ্জামান ফরহাদ মুন্সীর পরিবর্তে বর্তমান চেয়ারম্যান সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরীকে বহাল রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে বাবুগঞ্জ ও উজিরপুরে মনোনয়ন বঞ্চিতরা বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। অপরদিকে বিভাগের ঝালকাঠীর কাঁঠালিয়া উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়া বর্তমান চেয়ারম্যান বহুল বিতর্কিত গোলাম কিবরিয়া সিকদারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের একাধিক নেতৃবৃন্দ বলেন, গোলাম কিবরিয়া সিকদারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের প্রকৃত নেতাকর্মীদের মামলায় জড়িয়ে ও হামলা চালিয়ে হয়রানির একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তার নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, ভূমি দখল, দেশব্যাপী আলোচিত সাংবাদিক এইচএম বাদলকে প্রকাশ্যে নির্যাতন, টেন্ডারবাজি, টিআর, কাবিখা, জিআর, এডিবি, এলজিএসপি প্রকল্প, কর্মসৃজন প্রকল্প, ইজারার নামে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা, চাকরি বাণিজ্য, নদী খননের নামে আত্মসাতসহ বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বহুল বিতর্কিত বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া সিকদারকে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়ন না দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দর কাছে দাবি করেছেন। ওই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে নতুন প্রার্থী হিসেবে আলোচিতরা হলেন-উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তরুণ সিকদার, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এ্যাডভোকেট এমএ জলিল ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান এমাদুল হক মনির। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মনোনয়ন বঞ্চিত একাধিক চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী বলেন, কেন্দ্র থেকে তাদের নাম বাদ দেয়া হলে কোন আপত্তি ছিল না। তৃণমূল পর্যায়ে তাদের ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও জেলা মনোনয়ন বোর্ড থেকে তাদের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। এখানে যারা চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন তাদেরকে কিভাবে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী করা হয়েছে তাও প্রশ্নবিদ্ধ। তারা বলেন, নির্বাচনে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করবেন। এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট তালুকদার ইউনুস জানান, চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী চূড়ান্ত করবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড। তার আগে তৃণমূল থেকে তিনজন করে প্রার্থীর একটি তালিকা কেন্দ্র থেকে চাওয়া হয়েছে। প্রত্যেক উপজেলার তিনজনের প্যানেল চূড়ান্ত করার জন্য জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাতকার গ্রহণ করা হয়েছে। যে উপজেলাতে সকল প্রার্থীরা একমত হয়ে একজনকে সমর্থন জানিয়েছেন সেখানেই কেবল একক প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে।
×