ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

পপি দেবী থাপা

প্রজন্মের কণ্ঠস্বর আমান্ডালা স্ট্যানবার্গ

প্রকাশিত: ১৩:০৩, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

প্রজন্মের কণ্ঠস্বর আমান্ডালা স্ট্যানবার্গ

আমান্ডালা স্ট্যানবার্গ যাই করুন সেটাই এখন সংবাদ শিরোনাম। তিনি ভালই জানেন, তিনি রাজনীতির অনিশ্চিত বিপজ্জনক পথে হাঁটছেন। সব কিছুকেই অতি রাজনীতিকরণের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আমান্ডালা নিজেও স্বীকার করেন তার কিছু কাজের পেছনে রয়েছে সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। একজন টিনএজারের জন্য বিষয়টি কঠিন হলেও সেই কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে মাত্র ১৯ বছর বয়সেই তিনি হয়ে উঠেছেন হলিউডের নতুন প্রজন্মের তারকাদের মুখপাত্র। একজন সিনেমা তারকার চেয়েও তিনি বেশিকিছু। একজন এ্যাকটিভিস্ট, রাজনৈতিক পথপ্রদর্শক, জলবায়ু পরিবর্তন থেকে শুরু করে যে কোন বিষয়ে তিনি এখন তার প্রজন্মের কণ্ঠস্বর। এমনিতে আর দশটা সাধারণ তরুণের মতোই আমান্ডালার জীবনযাপন। কিন্তু তিনি যা করেন তা খুব ভেবে-চিন্তেই করেন। সোশ্যাল মিডিয়াতে জায়ান্ট ব্র্যান্ডাগুলোর অপপ্রভাবের প্রতিবাদে ইনস্টাগ্রামে নিজের নাম পরিবর্তন করে তাদের ব্যঙ্গ করতে ছাড়েন না। অভিনয়ের বেলাতেও এমন সব চরিত্র বেছে নেন যাতে রয়েছে সুস্পষ্ট বার্তা। তিনি যা বিশ্বাস করেন, যে আদর্শকে ধারণ করে লড়াই করছেন, এমন সব চরিত্রে অভিনয় করতেই তিনি আগ্রহী। তার সর্বশেষ ছবি ‘দ্য হেট ইউ গিভ’। তৈরি হয়েছে এ্যাঞ্জি থমাসের বেস্ট সেলার উপন্যাস অবলম্বনে। আমান্ডালা এই প্রজেক্টে নিজেকে যুক্ত করেন উপন্যাসটি প্রকাশ হওয়ারও আগে। সিনেমায় তার চরিত্র নিম্নবিত্ত পরিবারের এক কালো মেয়ের। যে মেয়েটি শেতাঙ্গ অধ্যুষিত একটি উচ্চবিত্ত প্রাইভেট স্কুলে নিজেকে টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম করছে। একদিন সে তার এক নিরস্ত্র কালো বন্ধুকে পুলিশের হাতে খুন হতে দেখে। সে বিষয়টির প্রতিবাদ করে। এক সময় প্রমাণিত হয় তরুণরাও সমাজের জটিল সূ² বিষয়গুলো সামলাতে পারে। ছবিতে একটি স্পষ্ট বারতা আছেÑ সেটি হলো ইচ্ছে থাকলে যে কেউ হতে পারেন পরিবর্তনের নায়ক। সিনেমায় তার সংবেদনশীল অভিনয় তাকে পরিণত করে মেগাস্টারে। ছবি নির্মাণ পর্বটি তার কাছে ছিল বেদনার। নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি জানেন শুধু গায়ের রঙের কারণে মানুষকে কতটা বৈষম্যের শিকার হতে হয়। তারপরও সব রকম ভয়ভীতির উর্ধে উঠে তিনি কাজটি করেছেন। তার ভাষায় কাজটি ছিলÑ সময়ের দাবি। আমান্ডালার সিনেমার শুরুটা ‘দ্য হাঙ্গার গেমস’ দিয়ে হলেও তার প্রথম ভাইরাল ভিডিও ২০১৫ তে স্কুল প্রজেক্টের ‘ডোন্ট ক্যাশ ক্রপ মাই কর্ণরোজ’। যে ভিডিওটি মানুষকে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিষয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে। ইনস্টাগ্রামে তার অনুসারী ১.৮ মিলিয়ন। সেখানে প্রায়ই তার প্রবল আবেগের বহির্প্রকাশ ঘটে। তার মতে কালোদের গল্প ইতিহাস বইয়ে খুব কমই ঠাঁই পেয়েছে। আর কালোরা যখন নিজেদের কথা বলে, শ্বেতাঙ্গরা তখন তা নিজেদের মূল্যবোধ দিয়ে বিচার করে। নিজেকে নিয়ে উপহাস করতেও আপত্তি নেই আমান্ডালার। নিজের সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন আমি হচ্ছি একটি ত্রিমাত্রিক গাধা! আসলে তিনিও হয়ত আর দশটা টিনএজারের মতো এখনও নিজেকে খুঁজে ফিরছেন। তিনি এটাও বোঝেন একজন কালো মেয়ে মিলিয়নের চেয়েও বেশি চোখ যাকে অনুসরণ করে প্রতি মুহূর্তে, তার দায়িত্বও অনেক বেশি। তাই তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো তিনি যা বলছেন বা করছেন তার কোন রাজনৈতিক বা সামাজিক গুরুত্ব আছে কিনা। অভিনয়ের বাইরে শুধুমাত্র নিজের জন্য সঙ্গীত চর্চা করেন। রীতিমতো গবেষণা করছেন অনেকগুলো বাদ্যযন্ত্র নিয়ে। এর মধ্যে রয়েছে ড্রাম, গিটার আর তার প্রিয় ভায়োলিন। তার ভাষায় ভায়োলিনের মাধ্যমেই তিনি নিজেকে সম্পূর্ণ প্রকাশ করতে পারেন। তবে এ মুহূর্তে তিনি তার রেকর্ডিং প্রকাশে মোটেও আগ্রহী নন। তার বিশ্বাস প্রত্যেকেরই নিজের জন্য ব্যক্তিগত জায়গা থাকা উচিত। আমান্ডালার মতে সোশ্যাল মিডিয়া হচ্ছে একটি শাঁখের করাত। তিনি বিশ্বাস করেন না, সাদাদের তৈরি এ সব প্রতিষ্ঠান কখনও কালোদের কথা বলবে। ভবিষ্যতে নিজেকে ঠিক কীভাবে দেখতে চান তা ভেবে আমান্ডালা নিজেও দ্বিধান্বিত। তার মতে, এমনও হতে পারে যে তাকে কোন সংজ্ঞাতেই ফেলা যাবে না।
×