ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তিন লাখ জনগনের জন্য একজন চিকিৎসক

প্রকাশিত: ০৪:৪৭, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

তিন লাখ জনগনের জন্য একজন চিকিৎসক

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ দুই লক্ষাধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলা ও তার পাশ্ববর্তী আরও তিন উপজেলার প্রায় এক লাখসহ মোট তিন লাখ জনগনের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। ফলে প্রতিনিয়ত ওই একজন চিকিৎসককে চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে চরম হিমশিম খেতে হচ্ছে। পাশাপাশি হাসপাতালের নানা সমস্যার মধ্যেও চিকিৎসকের তীব্র সংকটে স্বাস্থ্য সেবা ব্যহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ঘটনাটি ৫০ শয্যা বিশিষ্ট আগৈলঝাড়া উপজেলা হাসপাতালের। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ একেএম মনিরুল ইসলাম জানান, চিকিৎসক সংকটের কারণে দুই লক্ষাধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত আগৈলঝাড়া উপজেলা ছাড়াও পাশ্ববর্তী গৌরনদী উপজেলার পশ্চিমাংশ, উজিরপুরের উপজেলার উত্তরাংশ ও কোটালীপাড়া উপজেলার পূর্বাংশ মিলিয়ে কমপক্ষে তিন লাখ জনগন এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন। ৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ২১টি। এছাড়াও পাঁচটি ইউনিয়নের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের (সাব সেন্টার) দায়িত্বে থাকার কথা পাঁচজন চিকিৎসকের। সবমিলিয়ে উপজেলায় মোট ২৬জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে নেই কোন চিকিৎসক। হাসপাতালে ২১টি চিকিৎসক পদের বিপরীতে ডাক্তার রয়েছেন মাত্র তিনজন। এরমধ্যে তিনি (মনিরুল ইসলাম) ইউএইচএএফপিও হিসেবে অফিসিয়াল দায়িত্বে রয়েছেন। একজন ডেস্টাল সার্জন মমন কুমার দে ও একমাত্র আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ বকতিয়ার আল মামুন। সূত্রমতে, হাসপাতালের প্রধান ডাঃ একেএম মনিরুল ইসলামকে থাকতে হয় প্রশাসনিক কাজে ব্যাস্ত। একমাত্র আরএমও বকতিয়ার আল মামুনের উপর নির্ভর করে চলছে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। চিকিৎসক সংকটের কারনে সম্প্রতি গৌরনদী হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ আব্দুল্লাহ আল মামুনকে ডেপুটেশনে আগৈলঝাড়ায় দেয়া হলেও তিনি প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। যে কারণে ওই একজন (ডাঃ বকতিয়ার আল মামুন) জরুরি বিভাগের ডিউটিসহ সকল রোগীর চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন। সূত্রে আরও জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর হাসপাতাল পরিদর্শনে আসেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব মোঃ মোস্তাক হাসান। তিনি হাসপাতালের সকল সমস্যা জেনে গেলেও কার্যত তার ওই সফর হাসপাতালের কোন সুফল বয়ে আনেনি। যুগের পর যুগ হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ শুন্য থাকলেও অদ্যবর্ধি কার্যকরী কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। অপরদিকে স্বয়ং সম্পূর্ণ অপরেশন থিয়েটার থাকা সত্বেও একজন গাইনী বিশেষজ্ঞর অভাবে হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশন করা সম্ভব হচ্ছেনা। হাসপাতালের একটি এ্যাম্বুলেন্স ও আল্টাসনোগ্রাম মেশিন দীর্ঘদিন যাবত বিকল হয়ে পরে রয়েছে। হাসপাতালের মুল ভবন ও আবসিক ভবনসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একাধিকবার অবহিত করেও কোন সুফল মিলছেনা। হাসপাতাল প্রধান ডাঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, গত এক মাস পূর্বে আমি যোগদানের পর হাসপাতালের নির্ধারিত ফি’র মাধ্যমে ১৭ ধরনের পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু করেছি। ফলে প্যাথলজি সেবা দিয়ে জেলার মধ্যে আগৈলঝাড়া উপজেলা হাসপাতাল প্রথম স্থান লাভ করেছে। চিকিৎসক সংকটসহ অন্যান্য সমস্যার ব্যাপারে সর্বশেষ গত ১১ ফেব্রুয়ারী সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গঠিত মনিটরিং সেল ও স্বাস্থ্য মন্ত্রীর ব্যাক্তিগত সহকারীকে অবহিত করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে খুব শীঘ্রই হাসপাতালের চিকিৎসক সংকট, এ্যাম্বুলেন্স বিকলসহ অন্যান্য সমস্যার সমাধান করা হবে। এ ব্যাপারে বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডাঃ শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, বরিশাল বিভাগে ডাক্তাররা যোগদানের পর কর্মস্থলে থাকতে চাননা। সবাই ঢাকামুখী হতে চায়। যার জন্য পুরো বরিশালেই চিকিৎসক সংকট রয়েছে। চাহিদার ৩৪ থেকে ৩৫ ভাগ চিকিৎসক দিয়ে কোন রকম জোড়াতালি দিয়ে চিকিৎসকদের কাজ করানো হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ৩৯তম বিসিএসএ চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হলে এ সমস্যার সমাধান হতে পারে। অন্যান্য সমস্যার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে।
×