ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিহত চার ॥ ঠাকুরগাঁওয়ে বিজিবি গ্রামবাসী সংঘর্ষ

প্রকাশিত: ১১:১৩, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

নিহত চার ॥ ঠাকুরগাঁওয়ে বিজিবি গ্রামবাসী সংঘর্ষ

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও, ১২ ফেব্রুয়ারি ॥ জেলার হরিপুর উপজেলার বেতনা সীমান্তে বহরমপুর গ্রামবাসীর সঙ্গে বিজিবির সংঘর্ষে এবং বিজিবির গুলিতে নবাব (৩৫) সাদেক (৪৫), জয়নুল (১২) ও সাদেকুল (৩২) নামে চার গ্রামবাসী নিহত ও বিজিবি সদস্যসহ ১৬ জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে এই ঘটনা ঘটে বলে নিশ্চিত করেছেন হরিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম জে আরিফ বেগ। নিহতরা হলেন, ওই উপজেলার রুহিয়া এলাকার নজরুলের ছেলে নবাব ও মৃত জহির উদ্দিনের ছেলে সাদেক এবং বহরমপুর এলাকার নুর ইসলামের ছেলে জয়নুল ও আবদুর রহিমের ছেলে সাদেকুল। আহতরা হলেন, মিঠু, ইসহাদিতি, সাদেকুল, তৈমুর, রাসেল, জয়নুল, মুনতাহারা, বাবু, নওশাদ, হান্নান, জয়নুল ও নুর নাহার। এলাকাবাসী জানায়, বরহমপুর গ্রামের মাহাবুব আলী গত ৬ মাসে আগে একটি গরু কেনে। সেই গরু মঙ্গলবার সকালে স্থানীয় যাদুরানী বাজারে বিক্রি করার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। এ সময় বেতনা ক্যাম্পের বিজিবির সদস্যরা ভারতীয় গরু সন্দেহে গরুগুলো বিজিবি ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার জন্য মাহাবুবের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে গেলে মাহাবুবের পরিবার ও এলাকাবাসীর সঙ্গে বিজিবির সংঘর্ষ বাধে। পরে বিজিবির সদস্যরা গুলি ছুড়লে যাদুরানী বাজারের উদ্দেশে আসা ২ পথচারীসহ স্থানীয় ২জন নিহত হয় এবং ১৬জন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়। হরিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ আবদুস সামাদ বলেন, গুলিবিদ্ধ ১৪ জনের গুলি বের করে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য দিনাজপুর আবদুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হরিপুর থানার ওসি আমিরুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঠাকুরগাঁও ৫০ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল তুহিন মোঃ মাসুদ বলেন, বিজিবির একটি পেট্রল টিম চারটি গরু জব্দ করে ফেরার পথে এলাকাবাসী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বিজিবির ওপর হামলা চালায়। তাদের শান্ত থাকতে অনুরোধ করা হলেও তারা কোন কথা শোনেনি। বরং তারা উত্তেজিত হয়ে বিজিবির অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় চার বিজিবি সদস্য আহত হওয়ার পর কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে। কিন্তু তারপরও পরিবেশ শান্ত না হওয়ায় আত্মরক্ষার জন্য বাধ্য হয়ে বিজিবি গুলি করে। এ ঘটনার খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। বিজিপির গুলিবর্ষণে আতঙ্কে বান্দরবান সীমান্তের রোহিঙ্গারা ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা বান্দরবান থেকে জানান, মিয়ানমারের বিজিপির অস্থায়ী ক্যাম্প থেকে শতাধিক রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণের আওয়াজে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের নোম্যান্স ল্যান্ডে থাকা রোহিঙ্গাদের মাঝে। তবে ফাঁকা গুলি, নাকি দুপক্ষের মধ্যে কোন সংর্ঘষ হয়েছে এরকম কোন তথ্য নিশ্চিত করতে পারেনি বিজিবি। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার ভোরে জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তে গুলির শব্দে এই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে রোহিঙ্গাদের মাঝে। ঘুমধুম ইউনিয়নের ইউপি সদস্য দিল মোহাম্মদ ভুট্টো জানান, বিজিপির কয়েকটি অস্থায়ী পোস্ট ও ক্যাম্প থেকে শতাধিক রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণের আওয়াজ শুনেছি। এতে সীমান্তের স্থানীয় বাসিন্দা ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ১৭ ব্যাটালিয়নের মেজর ইকবাল বলেন, তুমব্রুর ৩৪-৩৬ পিলারের বিপরীতে মিয়ানমারের মোট ৯টি পোস্ট এবং একটি ক্যাম্প রয়েছে। কিছু পোস্ট থেকেই ভোরে ফায়ারিং হয়েছে । ১২০-২৫ রাউন্ড-এর মতো ফায়ারিং হয়েছে। এই ফায়ারগুলো কি ফাঁকা ফায়ার নাকি দু’পক্ষের মধ্যে ফায়ার কি না এরকম কোন তথ্য আমরা এখনও পাইনি। তবে দু’পক্ষের মধ্যে যদি ফায়ার হতো তাহলে আমরা খবর পেতাম, ওই রকম মনে হচ্ছে না । মাঝে মধ্যে ওদের বর্ডার গার্ড সিকিউরিটি ফোর্স এমনিতেই ফায়ার করে। তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশের উদ্দেশে বা নোম্যান্স ল্যান্ডে থাকা ব্যক্তিদের ভয়-ভীতি দেখানোর জন্য ফায়ারিং করেছে, এটা সম্পূর্ণ ঠিক না। এটা আমাদের কাছে মনে হচ্ছে না। ঘটনাস্থলেই আমরা আছি । ওরা এমনিতেই ফাঁকা ফায়ার করে। আমাদের দেশের উদ্দেশে বা নোম্যান্স ল্যান্ডে থাকা ব্যক্তিদের ভয়-ভীতি দেখানোর উদ্দেশে ফায়ারিং করেছে এটা সম্পূর্ণ ঠিক না। এদিকে বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে শতাধিক রাউন্ড গুলিবর্ষণের কারণ জানতে চেয়ে বিজিপির কাছে প্রতিবাদলিপি পাঠিয়েছে কক্সবাজার বিজিবি।
×