ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য উন্নত দেশ গড়তে চাই

প্রকাশিত: ১১:১৩, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য উন্নত দেশ গড়তে চাই

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে চাই। তাই আসুন আমরা সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী দেশের সর্ববৃহৎ জনসম্পৃক্ত শৃঙ্খলা বাহিনী। এ বাহিনীর প্রায় ৫৫ হাজার পুরুষ এবং মহিলা আনসার সদস্য সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় জনসম্পদ রক্ষা ও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে থাকেন। অন্যদিকে দুইটি পুর্ণাঙ্গ মহিলা ব্যাটালিয়নসহ ৪১টি ব্যাটালিয়নের প্রায় ১৭ হাজার সদস্য পার্বত্যাঞ্চল ও সমতলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত স্ট্রাইকিং ফোর্স এএসএফ দেশের অভ্যন্তরে কূটনৈতিক ও কুটনৈতিক জোনের নিরাপত্তায় দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুরে মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশ আনসার-ভিডিপি একাডেমিতে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৩৯তম জাতীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সম্প্রতি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪০ হাজার ১৮৩টি ভোটকেন্দ্রে প্রায় ৫ লাখ আনসার ভিডিপি সদস্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দক্ষতার সঙ্গে ভোটকেন্দ্র ও ভোটারদের নিরাপত্তা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করেছেন। দায়িত্ব পালনের সময় ৫ আনসার সদস্য জীবন দিয়েছেন। আজকের সমাবেশ অনুষ্ঠানে তাদের মরণোত্তর সাহসিকতা পদক দেয় হচ্ছে। দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এ বাহিনীর সদস্যগণ খেলাধুলা ও দেশীয় সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে দেশের গ-ি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের সুনাম বৃদ্ধি করেছেন। প্রধানমন্ত্রী আনসার সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, জাতীয় সঙ্কটকালে এবং জরুরী মুহূর্তে আপনারা কর্মদক্ষতা ও সফলতার পরিচয় দিয়ে আসছেন। প্রতিবছর আনসার সদস্যরা দেশের জাতীয়, সামাজিক ও ধর্মীয় বিভিন্ন উৎসবে ব্যাটালিয়ন ও অঙ্গীভূত আনসার সদস্যগণ আইনশৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা রক্ষা, জঙ্গীবাদ এবং মাদক প্রতিরোধে আন্তরিকভাবে কাজ করছেন। আমাদের সরকার বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন করেছে এবং তা অব্যাহত আছে। উল্লেখযোগ্য কর্মসূচীগুলোর মধ্যে রয়েছে আনসার বাহিনীকে ১৯৯৮ সালে সর্বোচ্চ সম্মান জাতীয় পতাকা প্রদান, বিসিএস কর্মকর্তাগণের পদের মানোন্নয়ন, ২০০০ সালে ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যদের চাকরি স্থায়ীকরণ, ৬৭২ জন মহিলা আনসারের পদ স্থায়ীকরণ এবং তাদের চাকরিকাল শতভাগ গণনা করার নির্দেশনা জারি, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগ, কক্সবাজারে সম্পূর্ণ নতুন একটি ব্যাটালিয়ন গঠনের কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে, ঐতিহাসিক মুজিবনগর নিরাপত্তা রক্ষায় একটি ব্যাটালিয়ন গঠন করা হবে, সেবা ও সাহসিকতা পদক প্রবর্তন, আনসার সদস্যদের ঝুঁকি ভাতা বৃদ্ধি, ১৫টি মডেল আনসার ব্যাটালিয়ন সদর দফতর নির্মাণ, ১১ হাজার ৬৬ জন উপজেলা আনসার কোম্পানি কমান্ডার এবং ইউনিয়ন আনসার প্লাটুন কমান্ডারের মাসিকভাতা অনুমোদন। জননিরাপত্তা ও শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রেখে আপনারা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছেন। আপনাদের যে কোন সমস্যা সমাধানে আমাদের সরকার সব সময় আন্তরিক এবং সহানুভূতিশীল। শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ আজ বিশে^ উন্নয়নের রোল মডেল। জাতিসংঘ মানদ-ে আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হিসেবে স্বীকৃত। মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৭৫১ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৮৬-এ উন্নীত হয়েছে। মাত্র ১০ বছরের শিক্ষার হার ৪৫ থেকে ৭৩ শতাংশ পৌঁছেছে। দারিদ্র্যের হার ২১ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে এসেছে, বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা ২০ হাজার ৮০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে যাচ্ছে। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে চলছে, পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র, মেট্র্রোরেল নির্মাণ, কর্ণফুলী টানেল স্থাপনের কাজ চলছে। এছাড়া নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। পুরুষ ও নারীর সমতার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ৪৭তম এবং টানা তিন বছর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। গত ১০ বছরে আমাদের সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলে এই অর্জন সম্ভব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে দেশকে দারিদ্র্যের অভিশাপ হতে মুক্ত করা। এ লক্ষ্যে জনগণের সঞ্চয় বাড়ানোর বিষয়ে সরকার বদ্ধপরিকর। জনগণ যাতে সঞ্চয় বাড়াতে পারে সে লক্ষ্যে ’একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীতে নিয়োজিত সদস্যদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য আনসার ভিডিপি ব্যাংক স্থাপন করা হয়েছে। এ ব্যাংক থেকে সদস্যগণ স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে বিভিন্ন আয়বর্ধক কাজে নিয়োজিত হতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী আনসার সদস্যদের উদ্দেশে করে বলেন, আমাদের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে সবার কঠোর পরিশ্রম ও সততার সঙ্গে এক যোগে কাজ করতে হবে। দেশের সর্ববৃহৎ বাহিনী হিসেবে আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব, সততা, সাহস ও আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করবেন। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল পরিবেশ। আপনারা এ পরিবেশ বজায় রাখার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। সফিপুর আনসার একাডেমির ইয়াদ আলী প্যারেড গ্রাউন্ডে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৩৯তম জাতীয় সমাবেশের বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজের সালাম নেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বাহিনীর মহাপরিচালক কাজী শরীফ কায়কোবাদ। প্যারেড পরিচালনা করেন প্যারেড কমান্ডার আইয়ুব আলী। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে সশ্রদ্ধ সালাম জানায় আনসার বাহিনীর একটি চৌকস দল। জাতীয়সঙ্গীত পরিবেশিত হওয়ার পর একটি খোলা জিপে চড়ে প্যারেড পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর আনসার বাহিনীর সদস্যরা কুচকাওয়াজ প্রদর্শন করেন। এর আগে অনুষ্ঠানে কুচকাওয়াজের পর কৃতিত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে আনসার সদস্যদের পদক পরিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর-৩ আসনের সাংসদ ইকবাল হোসেন সবুজ, গাজীপুর সিটি মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুর-৫ আসনের সাংসদ মেহের আফরোজ চুমকি, কালিয়াকৈর পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আব্দুল ওহাব মিয়া, কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুরাদ কবীর প্রমুখ। এছাড়া তিন বাহিনীর প্রদান, বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকগণও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী পরে আনসার সদস্যদের নিয়ে একটি কেক কাটেন এবং তাদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। আনসার-ভিডিপি সদস্যদের তৈরি বিভিন্ন হস্তশিল্পের স্টল ঘুরে দেখেন। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সফিপুর আনসার ভিডিপি একাডেমী বর্ণিল সাজে সজ্জিত করা হয়। পুরো এলাকায় নেয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
×