ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঘর পেলেন ৬৩ হতদরিদ্র

প্রকাশিত: ১২:০২, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

ঘর পেলেন ৬৩ হতদরিদ্র

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঝিনাইদহ, ১২ ফেব্রুয়ারি ॥ ঝিনাইদহে চলছে নির্বাহী কর্মকর্তাদের সততা লড়ায়ের প্রতিযোগিতা। আশ্রয়ণ প্রকল্পের টিনের পরিবর্তে বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে করে দেয়া হচ্ছে পাকাঘর। হরিণাকু-ু উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের হাত দিয়ে শুরু হয় টিনের পরিবর্তে পাকা ঘর নির্মাণ। তার দেখাদেখি জেলার বাকি ঝিনাইদহ সদর, শৈলকুপা, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর ও মহেশপুর উপজেলায়ও শুরু হয় টিনের পরিবর্তে পাকা ঘর নির্মাণ। তারা প্রকল্পের সম্পূর্ণ অর্থ দিয়ে পাকা ঘর করে দিচ্ছেন হতদরিদ্রদের। মঙ্গলবার হস্তান্তর করা হয়েছে হরিণাকু-ু উপজেলার বরাদ্দকৃত ৬৩ পাকা ঘর। দুর্নীতিমুক্ত এবং সততার কারণেই ১ লাখ টাকায় পাকা ঘর করা সম্ভব হয়েছে বলে জানা গেছে। সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘জমি আছে ঘর নেই’ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশে হতদরিদ্রদের টিন সেডের ঘর নির্মাণ কাজ চলছে। এই প্রকল্পে ঝিনাইদহের হরিণাকু-ু উপজেলায় বরাদ্দ আসে ৬৩ ঘরের জন্য ৬৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি ঘরের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় এক লাখ টাকা। হরিণাকু-ু উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন শুভাগত বিশ্বাস জানান, সরকারীভাবে প্রতি ঘরের মাপ দেয়া হয়েছে সাড়ে ১৬ ফুট লম্বা আর সাড়ে ১০ ফুট আড়। এছাড়া বারান্দা রয়েছে ৫ ফুট। সঙ্গে আছে একটি বাথরুম। ইট দিয়ে পোঁতা পর্যন্ত করে তার উপর টিনের বেড়া দেয়ার কথা ছিল। উপরের চালও হবে টিনের। এভাবে ঘরগুলো ওই এক লাখ টাকা ব্যয় করেই নির্মাণ শেষ করতে হবে। হরিণাকু-ু উপজেলার ৬৩টি ঘর করার জন্য সরকারী ভাবে নির্দেশ দেয় এবং বাজেট আসে ৬৩ লাখ টাকা। এই নির্দেশ পেয়ে উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তাদের নিয়ে দ্বিধায় পড়েন নির্বাহী কর্মকর্তা। কিভাবে ঘরগুলো বাস্তবায়ন করা যায়। তারা ভাবতে থাকেন ঠিকাদার বা অন্য কারও মাধ্যমে ঘরগুলো তৈরি করলে সব অর্থ ব্যয় করেও ভাল ঘর করা যাবে না। আবার এই নিম্ন মানের ঘর নিয়ে জনসাধারণের মনে নানা প্রশ্ন উঠে আসবে। এ সময় নক্সা অনুযায়ী টিনের ঘর তৈরি করতে তারা স্থানীয় একটি বাজেট করেন। সেখানে দেখতে পান সচ্ছতার সঙ্গে কাজ করার পরও টিনের ঘর তৈরিতে তাদের ব্যয় হবে ৭৫ থেকে ৮৫ হাজার টাকা। বরাদ্দ এক লাখ টাকার মধ্যে ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা সাশ্রয় হবে। তখন তারা ইটের পাকা ঘর তৈরি করতে কত খরচ হবে তার একটা পৃথক বাজেট করেন। সেখানে দেখা যায় স্থান ভেদে এক লাখের দুই তিন হাজার টাকা বেশি খরচ হবে। শহর থেকে গ্রামের দূরুত্বের কারণে খরচ কম বেশি হবে। এই বাজেট করার পর তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তারা ঘরগুলো পাকা করবেন। হতদরিদ্রের টিনের পরিবর্তে পাবেন পাকা ঘর। যা তাদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করবে। কিন্তু মূল নক্সার বাহিরে এই কাজ। তারপরও পাকা ঘর নির্মাণে জোর দেন এবং উর্ধতন কর্মকর্তাদের পরামর্শ নেন। তারপর শুরু হয়ে যায় তাদের কর্মযজ্ঞ। কাপাশাহাটিয়া ইউনিয়নের আক্কাস ম-লের ছেলে আলম ম-ল বলেন, আমি দিনমজুর। হাজার চেষ্টা করেও পাকা ঘরে ঘুমানোর স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব ছিল না। মাত্র ২ শতক জমির উপর বেড়ার ঘরে ছেলেমেয়েকে নিয়ে বসবাস করতাম। এই শীতে বেড়ার ভেতর বাতাস প্রবেশ করায় ঠিকমতো ঘুমানো যেত না। আমরা এখন পাকা ঘরে ঘুমানোর স্বপ্ন দেখি। মান্দারতলা গ্রামের মৃত আনছার শেখের স্ত্রী আমেনা বেগম বলেন, মাত্র ৩ শতক জমির উপর মাটির ঘর ছিল। অটো ব্রিকসের ইট দিয়ে পাকা ঘর করে দিচ্ছে সরকার। সেই ঘরে তারা ঘুমাচ্ছেন। যা তাদের কাছে ছিল শুধুই কল্পনা। হরিণাকু-ু উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, টিন দিয়ে তৈরি ঘরের জন্য যে বাজেট তারা পেয়েছিলেন সেই বাজেটেই সেমি পাকা ঘর নির্মাণ করেছেন। আর এটা সম্ভব হয়েছে জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথের পরামর্শে ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শুভাগত বিশ্বাসের সহযোগিতায় এবং বরাদ্দ পাওয়া টাকার সঠিক ব্যবহারের কারণে। বাড়তি কোন বরাদ্দ ছাড়াই অটোব্রিকস্রে ইট দিয়ে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে শুরু হয়ে এই কাজ শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে উপকারভোগীদের ঘর বুঝে দেয়া হয়েছে। যা পেয়ে খুবই খুশি হতদরিদ্র পরিবারগুলো।
×