ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মেঘে ঢাকা বেলের আকাশ!

প্রকাশিত: ১২:১৮, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

মেঘে ঢাকা বেলের আকাশ!

পাঁচ বছর আগের কথা। ১০১ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে গ্যারেথ বেলকে দলে ভেড়ায় রিয়াল মাদ্রিদ। বাংলাদেশী টাকায় তখন তার দাম ছিল এক হাজার ৩৬ কোটি টাকা! অর্থাৎ দলবদলের ইতিহাসে নেইমার- কুতিনহোদের আগে দামী ফুটবলারের তকমাটা এই গ্যারেথ বেলের গায়েই মাখানো ছিল! তবে টাকার হিসেবে লিওনেল মেসি কিংবা সাবেক সতীর্থ ক্রিষ্টিয়ানো রোনাল্ডোকেও ছাড়িয়ে যাওয়া বেল সেই ফর্ম মাঝে ধরে রাখতে পারেননি। ইনজুরি আর ফর্মহীনতায় যেন একেবারেই হারিয়ে বসেছিলেন ওয়েলস তারকা। তবে বেল বারবারই নিজেকে হারিয়ে খুঁজে পেয়েছেন। শনিবার মাদ্রিদ ডার্বিতেও দেখা গেল বেলের জাদু। শেষ পর্যন্ত এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে গ্যারেথ বেলের দক্ষতায় লা লিগার দ্বৈরত জিতে রিয়াল মাদ্রিদ। সান্তিয়োগো সোলারির শিষ্যরা এদিন ৩-১ গোলে পরাজিত করে নগর প্রতিদ্বন্দ্বী এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে। যা, তাদের টানা পঞ্চম জয়। এই জয়ের ফলে গত সেপ্টেম্বরের পর প্রথম বারের মতো পয়েন্ট তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে রিয়াল। তালিকার শীর্ষে থাকা বার্সিলোনার সঙ্গে এখন রিয়ালের পয়েন্ট ব্যবধান মাত্র ৫। এ্যাটলেটিকো বিলবাওয়ের বিপক্ষে পরের ম্যাচে জিতলে এই ব্যবধান অবশ্য ৮ পয়েন্টে নিয়ে যেতে পারবে কাতালান জায়ান্টরা। এস্তাদিও ওয়ান্ডা মেট্রোপলিটানোতে ম্যাচের মূল একাদশে রাখা হয়নি ওয়েলস তারকা গ্যারেথ বেলকে। এর আগে বার্সিলোনার বিপক্ষে কোপা ক্লাসিকোতেও মূল একাদশের বাইরে ছিলেন টটেনহ্যাম হটস্পারের সাবেক এই তারকা ফুটবলারকে। অর্থাৎ মাত্র চার দিনের ব্যবধানে দুইবার মূল একাদশের বাইরে থাকতে হয়েছে বেলকে। অথচ বদলি হিসেবে মাঠে নেমেই রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ক্যারিয়ারের শততম গোল করেন গ্যারেথ বেল। ম্যাচের ১৬ মিনিটে কাসেমিরো এ্যাক্রোবেটিক কৌশলে গোল করে রিয়াল মাদ্রিদকে প্রথম এগিয়ে দেন। কিন্তু ২৫ মিনিটে গোলটি পরিশোধ করে স্বাগতিকদের সমতায় ফিরিয়ে আনেন এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের ফরাসী স্ট্রাইকার এ্যান্থনি গ্রিজম্যান। ম্যাচের ৪২ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে রিয়ালকে আবারও এগিয়ে দেন সার্জিও রামোস। বিরতির পর ৭৪ মিনিটে বদলি খেলোয়াড় বেল রিয়ালের হয়ে ক্যারিয়ারের মাইলফলক স্পর্শ করা গোল করে দলকেও পৌঁছে দেন নিরাপদ দূরত্বে। ম্যাচ শেষে অবশ্য বেলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ রিয়ালের কোচ। এ বিষয়ে সান্তিয়াগো সোলারি বলেন, ‘গ্যারেথর জন্য এটি অসাধারণ একটি ব্যাপার। সে খুবই খুশি হয়েছে। খুশি হয়েছে নিজের গোলটির জন্যও। যে গোলটি ম্যাচের ফলাফল নির্ধারণে ভূমিকা রেখেছে। কারণ ওই গোলের আগে ম্যাচটি প্রতিপক্ষের জন্য বেঁচেই ছিল। যার ইতি ঘটিয়েছে বেল।’ সুযোগ পেলে যে বেল তার প্রমাণ দিতে পারেন সেটা আরও আগে দেখেছে ফুটবল দুনিয়া। কিন্তু সেই সুযোগটাই পাচ্ছেন না ওয়েলস স্ট্রাইকার। যে কারণেই বলা হচ্ছে মেঘে ঢাকা বেলের আকাশ! অভিজ্ঞ গ্যারেথ বেলকে পিছনে ফেলে কি তাহলে এগিয়ে যাচ্ছেন ভিনিসিয়াস? এই প্রশ্নটাও এখন জনমুখে। একটু একটু করে নিজের অজান্তেই জায়গা হারাতে শুরু করেছেন বেল। কোচ সান্তিয়াগো সোলারি মুখে যাই বলুন না কেন কাজে কিন্তু তিনি তেমনটাই দেখাচ্ছেন। রিয়াল মাদ্রিদের অন্তর্বর্তীকালীন কোচ সোলারি মুখে বলছেন, ‘বেল অসাধারণ।’ কিন্তু তাকে প্রথম একাদশে খেলার সুযোগ দিচ্ছেন না। দিলেও বদলে ফেলা হচ্ছে ম্যাচের মাঝে। তার জায়গায় ১৮ বছরের ভিনিসিয়াস জুনিয়র কিন্তু বদলি হিসেবে নেমে ভবিষ্যতের তারকা হয়ে ওঠার ইঙ্গিতও দিচ্ছেন নিয়মিত। সম্প্রতি স্পেনের স্থানীয় এক খবরের কাগজের শিরোনাম ছিল, ‘ভিনিসিয়াস বেলকে সমস্যায় ফেলে দিয়েছে।’ কিন্তু যাঁরা ভাবছেন ভিনিসিয়াস বেলের জায়গা নিতে চলেছে তারা ভুলে গেছেন যে, গত মৌসুমে ৪১টি ম্যাচে ২৪টি গোল করেছিলেন বেল। তার মধ্যে রিয়াল মাদ্রিদের চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনাল ম্যাচেও দুটো গোল ছিল গ্যারেথ বেলের। ভিনিসিয়াস রিয়ালে যোগ দেন ফ্ল্যামেঙ্গো থেকে ৪৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে। তার যে প্রতিভা রয়েছে সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই কারও। তবে এখনও সময় দিতে হবে তাকে। যে কারণেই এখনই বেলের সঙ্গে তুলনা করার সময় আসেনি। এ বিষয়ে সোলারির অভিমত, ‘সংবাদ মাধ্যম, ফ্যানরা ভিনিসিয়াসকে নিয়ে উত্তেজিত, সেটা খুব ভাল বিষয়। ওর গুণ তার জন্য দায়ী কিন্তু ওর দুর্বলতা হচ্ছে ওর বয়স। ও পরিণত হওয়ার সুযোগ পায়নি।’ চলতি মৌসুমের শুরুতে বার্নাব্যুর ডাগআউটে ছিলেন না সোলারি। জুলেন লোপেতেগুই চরম ব্যর্থ হওয়ার পর বরখাস্ত করে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সোলারিকে। আর সোলারির জাদুকরী স্পর্শে কী দারুণভাবেই না জেগে উঠেছে রিয়াল মাদ্রিদ। এ্যাটলেটিকোর বিপক্ষে জয়ের ফলে নগর প্রতিদ্বন্দ্বীদের টপকে পয়েন্ট টেবিলে দ্বিতীয়তে এখন সোলারির দল। ২৩ ম্যাচে তাদের ৪৫ পয়েন্ট, এ্যাটলেটিকোর ৪৪। এক শহরের অন্য দলের বিপক্ষে জয়ের আনন্দই আলাদা, আর সেটি যদি হয় প্রতিপক্ষের মাঠে গিয়ে- তাহলে তো কথা নেই। জয়ে তাই ভীষণ উচ্ছ্বসিত রিয়াল মাদ্রিদ কোচ। এ বিষয়ে সোলারি বলেন, ‘দলীয় প্রচেষ্টার ফসল এই জয়। এ্যাটলেতিকোর মতো দুর্দান্ত দলের বিপক্ষে ওদের মাঠে জেতার জন্য অবশ্য অন্য কোন উপায় নেই। খেলার প্রতিটি অংশেই আমাদের আধিপত্য ছিল। ডিসেম্বরের পর এটি সম্ভবত আমাদের সেরা পারফরম্যান্স।’ জয়ের কৃতিত্ব প্রায় পুরোটাই দিয়েছেন তিনি ফুটবলারদের, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ফুটবলাররা। যারা অনুশীলন করে, শারীরিকভাবে নিজেদের নিংড়ে দেয়, খেলে হৃদয় দিয়ে। জয়ের জন্য ৯৫ শতাংশ কৃতিত্ব তাই ওদের প্রাপ্য। বাকি যে কিছুটা, তা হয়তো আমাদের-মেডিক্যাল দল, ক্লাব পরিচালক, সমর্থকদের। এখন আমাদের পা মাটিতে রেখে কঠোর পরিশ্রম চালিয়ে যেতে হবে।’ এদিনও আলো ছড়িয়েছেন রিয়ালের ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ভিনিসিয়াস জুনিয়র। গোল করেননি, তবে গতি আর ড্রিবলিংয়ে নজর কেড়েছেন আলাদা করে। তাঁকে ফাউল করাতেই তো পেনাল্টি পায় রিয়াল মাদ্রিদ। তাঁর প্রশংসা রিয়াল কোচ সোলারির কণ্ঠেও, ‘ওর বয়স মাত্র ১৮ বছর। আমাদের অনেকের ওর বয়সী সন্তান আছে। ভিনিসিয়াস খেলায় প্রতিনিয়ত উন্নতি হচ্ছে। সেরাদের কাছ থেকে ও শিখছে আর বাকি দলও ওকে দেখভাল করছে।’
×