ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আগামী ১০ বছরে বিশ্ব অন্য এক বাংলাদেশ দেখবে ॥ এডিবি ভাইস প্রেসিডেন্ট

প্রকাশিত: ১২:৪৩, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

আগামী ১০ বছরে বিশ্ব অন্য এক বাংলাদেশ দেখবে ॥ এডিবি ভাইস প্রেসিডেন্ট

এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সফররত ভাইস প্রেসিডেন্ট শিজিন চেন আশা প্রকাশ করেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামী ১০ বছরের মধ্যে বিশ্ব অন্য এক বাংলাদেশ দেখতে পাবে। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংসদ ভবনের তার কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাতকালে শিজিন এ কথা বলেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘ডেল্টাপ্লান-২১০০’ বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহযোগিতা চেয়েছেন। চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় এডিবি ভাইস প্রেসিডেন্ট শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান এবং তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অসাধারণ আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির প্রশংসা করেন। বাংলাদেশের ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে বিশাল অর্জন উল্লেখ করে শিজিন বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি হয়েছে তাতে আগামী ১০ বছরে এ দেশ ভিন্ন এক বাংলাদেশে পরিণত হবে। খবর বাসস’র। প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের জন্য ধারাবাহিকতা একটি প্রধান ফ্যাক্টর। বাংলাদেশ এখন সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদের মতো মানব সৃষ্ট যে কোন দুর্যোগ মোকাবেলায় সক্ষম। প্রেস সচিব বলেন, এডিবি ভাইস প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা আশ্রয় দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর উদারতার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছেন, এটি মানবিক মর্যাদা সমুন্নত করার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান। ‘ডেল্টাপ্ল্যান ২১০০’ বাস্তবায়নে এডিবির সহযোগিতা কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ইতোমধ্যেই নদী খননের জন্য নেদারল্যান্ডের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকারের প্রথম লক্ষ্য জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা। এই লক্ষ্য অর্জনে সরকার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পদক্ষেপ নিয়েছে। চীনা বংশোদ্ভূত এডিবি ভাইস প্রেসিডেন্ট দারিদ্র্য দূরীকরণে তার দেশের অভিজ্ঞতা বিনিময় করে বলেন, দারিদ্র্য দূরীকরণে খাদ্যের বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। দারিদ্র্য নিরসনের জন্য সামাজিক নিরাপত্তাও জরুরী। শিজিন উন্নয়নে বিশেষ করে অবকাঠামো উন্নয়ন, পানি সম্পদের উন্নয়ন, শিক্ষা ও কৃষিতে বাংলাদেশকে অব্যাহত সহযোগিতার আশ্বাস দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তিনি জানান, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশকে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়েছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। অন্যদিকে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য সংস্থাটি দুইশ’ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৭৩ সাল থেকে বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ভূমিকার জন্য এডিবি’র প্রশংসা করেন। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত জাতি গঠন করার লক্ষ্যে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ২১ বছর পর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে সরকার বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, দেশের কোন জমি যাতে চাষাবাদবিহীন না থাকে সেজন্য তার সরকার জনগণকে উৎসাহিত করছে। উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে সবকিছুকে বেসরকারী খাতের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এডিবিও এক্ষেত্রে ব্যাপক সহায়তা করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে- এ বিষয়টি দেখে তিনি আনন্দিত। রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়ে তার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রায় ৪০ হাজার নতুন রোহিঙ্গা শিশু বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছে। এটা বাংলাদেশের জন্য একটি বিরাট বোঝা- একথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার তাদের (রোহিঙ্গা) একটি নিরাপদ এলাকায় সরিয়ে নেয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করছে, যাতে তারা অপেক্ষাকৃত ভাল পরিবেশে এবং বেশি সুযোগ-সুবিধাসহ বসবাস করতে পারে। উন্নয়নের লক্ষ্যে তার সরকারের গৃহীত বিভিন্ন বৃহদাকার প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, শহরের সুযোগ-সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে তার সরকার ‘আমার বাড়ি, আমার খামার’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার শিশু সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠানোর লক্ষ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণসহ মায়েদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। এডিবি ভাইস-প্রেসিডেন্ট বলেন, গতবছর ইতালিতে ইফাদ-এর সম্মেলনে মূল বক্তব্য হিসেবে প্রদত্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণে তিনি মুগ্ধ। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোঃ নজিবুর রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
×