ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শুভঙ্করের ফাঁকি

প্রকাশিত: ১১:৩৭, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

শুভঙ্করের ফাঁকি

সুস্থতা সকলের কাম্য। কিন্তু সব সময় তা হয়ে ওঠে না। কে কখন কিভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বে তা বলা মুশকিল। বয়োবৃদ্ধ হলে প্রাকৃতিকভাবেই শরীরে অসুস্থতার নানা উপসর্গ দেখা দেয়। আবার শিশু থেকে যুব বয়সীদেরও অসুস্থ হয়ে পড়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু অসুস্থতায় সকলের সুস্থতা লাভের প্রত্যাশা রয়েছে। তাই মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে সুচিকিৎসা অন্যতম। সুচিকিৎসায় সকলেই সুস্থতা লাভ করতে চায়। আর অসুস্থতা থেকে সুস্থতা লাভের আশায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় চিকিৎসা খরচ বাবদ যে অর্থ ব্যয় করতে হয় তা অবশ্যই মাত্রাতিরিক্ত। দিন যতই অতিবাহিত হচ্ছে ততই হাসপাতাল ব্যয়, বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ওষুধপথ্য ও চিকিৎসকের খরচ শুভঙ্করের ফাঁকির মতো বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু সেই তুলনায় অসুস্থ ব্যক্তির আয়ের পরিমাণ কোনভাবেই বাড়ছে না। হাসপাতালের এ বিরাট অঙ্কের বিল পরিশোধ করার সাধ্য আমাদের দেশের অধিকাংশ মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারের জন্য অবশ্যই দুরূহ একটি ব্যাপার। তাই ঋণ বা পারিবারিক সম্পত্তি বিক্রি করে অনেককে চিকিৎসার খরচ মেটাতে হচ্ছে। ফলে অনেকেই হয়ে পড়ছেন নিঃস্ব, অসহায় ও সম্বলহীন। মানুষ চিকিৎসকের ওপর নির্ভর করে জীবন বাঁচাতে চায়। কিন্তু কিছু চিকিৎসক যখন মানুষের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে ব্যবসায় মেতে ওঠেন তখন তা রোগীর কষ্টের পরিমাণকে আরও বাড়িয়ে তোলে। কিন্তু এমনটি কখনোই কাম্য নয়। মানুষ হিসেবে সকলেরই সুচিকিৎসার মধ্য দিয়ে সুস্থতা লাভের অধিকার রয়েছে। অনেক সময় বলা হয়ে থাকে যে, দেশে চিকিৎসার নামে টেস্টবাণিজ্য ও রোগীর গলাকাটার সংস্কৃতি প্রচলিত। সবক্ষেত্রে অবশ্য এ কথা প্রযোজ্য নয়; তবে হ্যাঁ, বেশ কিছু ডাক্তাররূপী মুনাফা অর্জনকারীর জন্য সম্পূর্ণ চিকিৎসা ব্যবস্থাপনাতে কালো কালি যে লাগে না- এ কথা অস্বীকার করা যায় না। আবার অনেকে স্বাস্থ্যসেবার নামে বাণিজ্য শুরু করেছে। ব্যাঙের ছাতার মতো দেশের যেখানে সেখানে গড়ে উঠছে ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ফার্মেসি। কোন প্রকার প্রশিক্ষণ ছাড়া আবার অনেক সময় স্বল্প প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এক একজন হয়ে উঠছে ডাক্তার ও নার্স। ফলে রোগী ভুল চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠার পরিবর্তে হয়ে পড়ছে আরও অসুস্থ। জীবন হচ্ছে সঙ্কটাপন্ন। কিন্তু চিকিৎসা ও ওষুধ বাবদ অর্থের ব্যয় ঠিকই রোগীর পরিবারের ঘাড়ে চেপে বসছে। অসুস্থ মানসিকতার এই ধরনের চিকিৎসকদের অসুস্থ চিকিৎসা বাণিজ্য প্রতিযোগিতার কারণে দিনকে দিন রোগীর নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা। সত্যি কথা বলতে কি- অনেক সময় দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় নির্ভর করতে না পেরে অনেকেই পার্শ্ববর্তী দেশে যাচ্ছেন সুচিকিৎসার জন্য। স্বল্প খরচে সুস্থতা লাভ করে দেশে ফিরে আসছেন। আমাদের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার জন্য অবশ্যই এটা সুখকর বিষয় নয়। বেসরকারী অনেক হাসপাতালে ভাল চিকিৎসা সম্ভব হয়; কিন্তু প্রায়ই মাত্রাতিরিক্ত চিকিৎসা ব্যয়ের কারণে অনেকে চিকিৎসা করাতে ভয় পান। আবার অনেকে সরকারী হাসপাতালগুলোতে সুযোগ-সুবিধার অভাবে চিকিৎসা করাতে অসম্মতি জানান। উভয় ব্যবস্থাই আমাদের জন্য ক্ষতিকারক। চিকিৎসা ব্যবস্থায় শুভঙ্করের এই ফাঁকি বন্ধ হওয়া উচিত। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে যে হাসপাতাল নীতিমালা রয়েছে সেগুলোর যথাযথ প্রয়োগ ও নতুন কোন আইন-নীতিমালা প্রয়োজন পড়লে তা প্রণয়ন করে স্বাস্থ্য খাতকে সুনিশ্চিতকরণ সময়ের চাহিদা। চিকিৎসা ব্যবস্থাপনাকে সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণ, পর্যবেক্ষণ ও আইনের আওতায় এনে চিকিৎসা ব্যয় জনগণের হাতের নাগালে এনে যথাযথ সুচিকিৎসার নিশ্চয়তা দিতে পারলেই মানুষের মৌল মানবিক চাহিদার একটি ধাপ পূরণ হবে। বনানী, ঢাকা থেকে
×