ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অনন্য রেজা করিম

বলিউডি সিনেমায় প্রেম...

প্রকাশিত: ১৩:০০, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

বলিউডি সিনেমায় প্রেম...

লাভ স্টোরি। মানে প্রেমের গল্প। প্রেমের গল্প থাকে বেরিশভাগ সিনেমাতেই। বলিউডের হিন্দী সিনেমাতে তো বটেই। বলিউডের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, শুরু থেকে প্রেমের গল্পকে উপজীব্য করে সিনেমা নির্মাণের হুজুগ শুরু হয়েছিল। নরনারীর চিরন্তন ভালবাসার আবেগ, টানাপোড়েন, নাটকীয়তা রুপালি পর্দায় দেখে দর্শক আলোড়িত এবং আপ্লুত হন খুব সহজেই। দর্শকদের আকৃষ্ট করতে সহজ পন্থা হিসেবে চিত্রনির্মাতারা রোমান্টিক ধাঁচের সিনেমা নির্মাণকে বেছে নেন। এ্যাকশন ধাঁচের সিনেমা হলেও সেখানে নায়ক-নায়িকার ভালবাসার রসায়ন, টানাপোড়েন, নাটকীয়তা থাকে। এভাবেই যুগের পর যুগ ধরে চলে আসছে হিন্দী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। কিন্তু এর পরও শুধুই ভালবাসাকে উপজীব্য করে অনেক কালজয়ী সিনেমা তৈরি হয়েছে বলিউডে। যেগুলো যুগের পর যুগ ধরে দর্শকদের আলোড়িত করে যাচ্ছে। পুরনো হয়ে গেলেও গভীর আগ্রহ নিয়ে দর্শক সেই ভালবাসার সিনেমাগুলো দেখেন। এ প্রসঙ্গে দিলীপ কুমার-মধুবালা অভিনীত ‘মুগলই আজম’ ছবিটির কথা বলা যায়। শাহজাদা সেলিমের সঙ্গে আনারকলির অমর প্রেম কাহিনীর অসাধারণ ক্ল্যাসিক সিনেমাটি নির্মিত হয়েছিল। ব্যাপক সফলতা লাভ করেছিল অনবদ্য প্রেম কাহিনীর চলচ্চিত্রটি। আজও এ ছবিটি বলিউডের জন্য একটি প্রেস্টিজিয়াস ফিল্ম প্রজেক্ট হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। এ ছবিতে অভিনয় শিল্পীদের অভিনয়, সংলাপ, গান, নাচ, চিত্রগ্রহণ সব কিছুতেই নান্দনিকতার ছোঁয়া ছিল ‘মুগলই আজম’-এর কাছাকাছি সময়ে নির্মিত ‘আন’, ‘আন্দাজ’ প্রভৃতি হিন্দী সিনেমাতেই প্রেম ভালবাসার বিষয় বেশ প্রাধান্য পেয়েছিল। কিন্তু ‘মুগলই আজম’ ছবির সাফল্যকে অতিক্রম করে যেতে পারেনি সেই ছবিগুলো। সত্তর দশকে বলিউডে প্রেমের সিনেমায় নতুনত্বের চমক নিয়ে আসেন প্রখ্যাত চিত্রনির্মাতা রাজকাপুর। ‘ববি’ ছবিতে প্রেম রোমাঞ্চের ব্যাপারগুলো অনেক আধুনিক স্মার্ট ভঙ্গিতে সেলুলয়েডে তুলে ধরে দর্শকদের ভীষণভাবে চমকিত করেন তিনি। ‘ববি’ ছবিতে ঋষি-কাপুর-ডিম্পল কাপাডিয়াকে প্রেমিক প্রেমিকা জুটি হিসেবে তুলে ধরার ক্ষেত্রে তারুণ্যদীপ্ত আধুনিক স্মার্টনেসকে বেশ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। ‘ববি’ ছবিটিকে বলিউডের প্রেমের সিনেমার ইতিহাসে অনন্য মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আশির দশকের আরেকটি আলোচিত প্রেমের সিনেমা ‘এক দুজে কে লিয়ে’ দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছিল দারুণভাবে দুই ভিন্ন ভাষাভাষী এক জোড়া তরুণ-তরুণীর নিখাঁদ ভালবাসার বেদনাদায়ক পরিণতি দর্শকদের আপ্লুত করেছিল খুবই সহজেই। কমল হাসান-রতি অগ্নিহোত্রী ‘এক দুজে কে লিয়ে’ ছবিতে মন উজাড় করে তাদের অভিনীত চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছিলেন একইভাবে বলিউডে ‘কাভি কাভি’, চপকে চপকে, আঁধি, দেবদাস, সিলসিলা, প্রভৃতি সাড়া জাগানো সিনেমা তৈরি হয়েছে। সিনেমায় প্রেমিক প্রেমিকাদের কিছুটা ম্যাচিওরড দেখানো হলেও পরবর্তীতে ‘ম্যায়নে পেয়ার কিয়া’, ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক কম বয়সী নায়ক-নায়িকার প্রেমে তরতাজা ভাবটি ফুটিয়ে তোলার ক্ষেত্রে চিত্রনির্মাতা, অভিনয় শিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক সবাইকে একটু বেশি মনোযোগী মনে হয়। এরপর দিওয়ানা, দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে, ডর, চাঁদনী, হাম আপকে হ্যায় কোন, ‘হাম দিল দে চুকেসানাম’, ‘কুচ কুচ হোতা, হ্যায়’, ‘মোহাব্বাতে’, ‘দিল তো পাগল হ্যায়‘, ‘ভাল’, ‘চলতে চলতে’, ‘হাম তুম’, ‘দিল সে বীর জারা’, ‘বার নে বানা দে জোড়ির’ মতো প্রেমের ছবি অনেক হয়েছে বলিউডে। মিষ্টি প্রেমের গল্প থেকে শুরু করে ট্রাজিক প্রেমের গল্প সেলুলয়েডে উঠে এসেছে নানাভাবে। প্রয়াত চিত্রপরিচালক ইয়াশ চোপড়া বলিউডে রোমান্টিক ছবি নির্মাণের ক্ষেত্রে এক ধরণেনর চমৎকারিত্ব দেখিয়েছেন তার জীবদ্দশায়। ওদিকে সঞ্জয় লীলা বানসালি, ইমতিয়াজ আলি, করণ জোহর রুপালি পর্দায় প্রেমের গল্প তুলে ধরার ক্ষেত্রে নিজস্ব স্টাইল অনুসরণ করেন। সঞ্জয় লীলা বানসালি ঐতিহাসিক পটভূমিকায় ‘রামলীলা, ‘বাজিরাও মাস্তানি’, ‘পদ্মাবত’ ছবিগুলো নির্মাণ করেছেন বটে প্রতিটিতে প্রেমের গল্প তুলে ধরেছেন অনেক নাটকীয়তার মাধ্যমে। ইমতিয়াজ আলী ‘জবউই মিট’, ‘লাভ আজকাল’, ‘হাইওয়ের’ মতো সফল প্রেমের ছবি বানিয়েছেন তার সর্বশেষ ছবিটিও ছিল প্রেমভালবাসাকে উপজীব্য করে। তবে তার সর্বশেষ ছবি ‘লাইলি মজনু’ প্রেম কাহিনী নির্ভর হলেও দর্শক তা গ্রহণ করেনি। বলিউডে নিটোল প্রেমের কাহিনীর ছবি যেমন হয়েছে এক সময়ে যুগের পালাবদলের সঙ্গে দর্শক রুচি পছন্দের প্রেক্ষিতে নতুন ধারার সাহসী প্রেমের কাহিনীনির্ভর ছবিও হয়েছে। নিষ্পাপ নিষ্কাম প্রেমের বদলে নায়ক নায়িকার প্রেমে কিছুটা শরীরী ব্যাপার তুলে ধরতে আজকাল বলিউডি চিত্রনির্মাতারা অনেকটা সাহসী হয়ে উঠেছেন। প্রেমের পাশাপাশি অপ্রেমের সাহসী গল্প নিয়ে আজকাল বলিউডে হরদম সিনেমা তৈরি হচ্ছে। সেখানে নায়ক নায়িকারা প্রেমকে স্বার্থসিদ্ধির উপায় হিসেবে ব্যবহার করে, এ ধরনের সিনেমাগুলোকে ভায়োলেন্ট লাভ স্টোরি হিসেবে গণ্য করা হয়। গতানুগতিক প্রেমের সিনেমা দেখতে দেখতে বোরড হওয়া দর্শকরা যখন বৈচিত্র্যের জন্য হাঁপিয়ে ওঠে, নতুন ধরনের প্রেম কাহিনী দেখতে উদগ্রীব হয় তখন এ ধরনের ভায়োলেন্ট লাভ স্টোরির সিনেমাগুলো দর্শকদের আকৃষ্ট করে। এ প্রসঙ্গে আশিক বানায়া আপনে, হেট স্টোরি জিসম মার্ডার প্রভৃতি বোল্ড লাভ স্টোরির হিন্দী সিনেমাগুলোর কথা বলা যায়। যেগুলোতে যৌনতাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে অপ্রেমের নানা বিষয় পর্দায় তুলে ধরতে গিয়ে। এ ধরনের সিনেমাগুলোতে অভিনয় করে বিপাশা বসু, সানি লিওন, পাওলি দাম, জেরিন খান, তনুশ্রী দত্ত প্রমুখ আবেদনময়ী অভিনেত্রী বেশ তোলপাড় তুলেছেন বলিউডে। ইমরান হাসমি এ ধরনের সাহসী প্রেমের সিনেমার জন্য ব্র্যান্ডেড হিরো হয়ে গেছেন বহু আগেই। দিনে দিনে বলিউডের সিনেমায় নানা পালাবদল ঘটছে। গল্পের আঙ্গিক বদলে যাবার সঙ্গে সঙ্গে রোমাঞ্চের আদলও বদলে গেছে। আজকাল বলিউডি সিনেমায় প্রেম ভালবাসার বিষয়গুলো স্রেফ স্বপ্নময়, অলীক কল্পনা হিসেবে না দেখিয়ে বাস্তবতার আলোকে তুলে ধরা হচ্ছে। যার সঙ্গে দর্শক খুব সহজেই মিশে যেতে পারছেন। যেমন অতি সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে ‘এক লাড়কি কো দেখা তো অ্যায়সা লাগা’, ‘কেদারনাথ’, ‘ধাড়াক’ প্রভৃতি সিনেমা। আগামী দিনগুলোতে বলিউডি সিনেমায় প্রেমের পাশাপাশি অপ্রেমের বিষয়গুলো কিভাবে আসবে তা নিয়ে ইতোমধ্যে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে দর্শক মহলে হয়ত রুপালি পর্দায় রোমাঞ্চের নতুন পসরা সাজানো হবে, যা দর্শকদের বিশেষভাবে আলোড়িত করবে।
×