ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সৌদি সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরের বৈধতা নিয়ে সংসদে প্রশ্ন

প্রকাশিত: ০৯:৩৫, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

সৌদি  সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরের বৈধতা নিয়ে সংসদে প্রশ্ন

সংসদ রিপোর্টার ॥ সংসদকে পাশ কাটিয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জাতীয় সংসদে। বৃহস্পতিবার রাতে পয়েন্ট অব অর্ডারে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সিনিয়র সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম এ প্রশ্ন তুলে এমন চুক্তি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিনা, সে ব্যাপারে সংসদে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি দাবী করেছেন তাঁরা। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে রাতে সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, ইতোমধ্যে বিবিসিতে সংবাদ দিয়েছে সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশ একটি প্রতিরক্ষা সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করছে। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্বীকার বা অস্বীকার কোনটাই করে নাই। ওই সমঝোতা চুক্তির আওতায় ইয়েমেন সীমান্তে বাংলাদেশের ১৮০০ সেনা নিয়োগ দেওয়ার কথা। তিনি বলেন, সৌদি আরবে ইসলামী সেনাবাহিনী কাউন্টার টেরিজম কমিশন আইএমসিটিসি বাংলাদেশ থেকে একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেলসহ ৪ কর্মকর্তাকে নিয়োগের জন্য নামও দেওয়া হয়েছে বলে খবরে প্রকাশ । ২০১৫ সালে যখন সৌদি নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাস বিরোধী উদ্যোগে বাংলাদেশ নাম লিখেছিল, তখনই আমরা বলেছিলাম আমাদের জন্য কতটা ইতিবাচক হবে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ জরুরী। খটকা ছিল তখনই । সেই সময় সৌদি আরব যেটাকে ৩৪ জাতি সামরিক জোন বলেছিল, আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইনিয়ে বিনিয়ে তখন বলেছিল এটা একটি সন্ত্রাস বিরোধী সমন্মিত উদ্যোগ। সেই সময় জনগণের আশঙ্কাকে নিরসন করে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে সৌদি আরবে যে দুটি পবিত্র মসজিদ রয়েছে মক্কা এবং মদিনায় হাদেম শরীফ- এই মসজিদ দুটি যদি আক্রমণের মুখে পড়ে তখনই কেবল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পাঠাবে। এর বাইরে কখনো কোনো সেনাবাহিনী পাঠাবে না। মেনন আরও বলেন, আমরা জেনেছি এই চুক্তি স্বাক্ষর সম্পন্ন পর্যায়ে। এরমধ্য দিয়ে আমাদের সংবিধানের ২৫ বিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে কি না, সেটা অবশ্যই পরীক্ষা করা প্রয়োজন। সংবিধানের শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থান বজায় রাখতে বলা হয়েছে। এই দুই দিক দিয়ে বিষয়টি পর্যালোচনার দাবি রাখে। প্রথমটি হচ্ছে এই সেনাবহিনী মোতায়েন এটা জাতিসংঘের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গিতপূর্ণ কি না? দ্বিতীয়ত আমাদের সেনাবাহিনী বিদেশ উপস্থিতিতে আমাদের রাজনৈতিক ভাবমুর্তি কি হবে? আমরা জানি ইয়েমেনে সৌদি আরবের নেতৃত্ব যে সমঝোতা এবং যুক্তরাষ্ট্র মিলে সেখানে প্রতিমুর্তে আক্রমণ চালাচ্ছে হুতি বিদ্রোহীদের দমন করার জন্য। আমরা জানি আরব দেশের বসন্তের তার বিকৃত প্রয়োগ ঘটিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেখানে কি ধরণের পরিণতি সৃষ্টি করেছিল এবং সৌদি আরব সেখানে কোন সুবিধা নিতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিব স্পষ্ট করে বলেছেন ইয়েমেনে ঘটনা এখন পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানবিক বিপর্যয়। সেখানে আমাদের সেনাবাহিনী উপস্থিত হয়ে সেখানে সীমান্তে মাইন অপসারণ করবেন। আমাদের সেনাবাহিনী যারা একদিন কুয়েতে মাইন অপসারণ করে সুনাম অর্জন করেছিল, ইরাকী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তারা কেন মাইন অপসারণের নামে নিজেদের জীবন দেবে? যেটা সংবিধান অনুমোদন করে না। আমাদের সংবিধানে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, কোন বিরোধপূর্ণ ঘটনায় আমাদের সেনাবাহিনী বা বাংলাদেশ সেখানে অংশ নেবে না। আমরা এবিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো বিবৃতি পাইনি দাবি করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ৩০০ বিধিতে একটি বিবৃতি দেবেন এবং আপনিও স্পীকার হিসেবে বিষয়টি সংবিধানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কি না আপনার কাছ থেকে রুলিং আশা করছি। রাশেদ খান মেননের বক্তব্যের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে বিরোধী দলের ফখরুল ইসলাম বলেন, যদি কোনো বৈদেশিক চুক্তি হয় তাহলে সেটা রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেবেন এবংং রাষ্ট্রপতি সেটা সংসদে দেবেন। এটা আলোচনা করলে কি অসুবিধা ছিল? সংসদকে পাশ কাটিয়ে এই চুক্তি আমাদের অধিককার ক্ষুন্ন করছে কিনা সেটাও আমার সাবমিশন। তিনি বলেন, সংসদের অধিবেশন যদি না থাকতো তাহলে বুঝতাম যে, সংসদকে অবজ্ঞা করা হয়নি। আমার মনে হয়, সংসদকে অবজ্ঞা ও পাশ কাটিয়ে, সংসদকে মূল্যহীন ভেবে এমন চুক্তির প্রচেষ্টা সরকারের কতটুকু যুক্তিযুক্ত হয়েছে? যেখানে রাষ্ট্রের প্রধান অঙ্গ সংসদ। আমরা টিফা চুক্তিও দেখেছি, কোন চুক্তি স্পীকারের দফতরে জমা পড়েছে কি না আমি জানি না। তবে এ ব্যাপারে আরও পরিচ্ছন্ন হওয়া উচিত। এই সংসদের মান-মর্যাদা আমাদের গণতন্ত্রের মূল্যায়নের জন্য আস্তে আস্তে এগিয়ে যাক।
×