ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফজলুল হক খান

মাতৃভাষা দিবস ও অমর একুশে

প্রকাশিত: ১১:০৩, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

মাতৃভাষা দিবস ও অমর একুশে

মহান একুশে বাঙালী জাতির চেতনা, বিশ্বাস। বাঙালী জাতীয়তাবাদের দর্শন, আদর্শের স্বপ্ন, বেঁচে থাকার অবলম্বন। ১৯৫২ এর ২১ ফেব্রুয়ারি সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারের বুকের তাজা রক্তের আলপনায় আঁকা মহান একুশে বাঙালী জাতির কণ্ঠের অলঙ্কার। বাংলাদেশের ইতিহাস সচেতন মানুষ মাত্রই জানেন বাঙালী জাতির জীবনে ভাষা, সাহিত্য, সমাজ সংস্কৃতির ক্ষেত্রে যা কিছু গৌরবময় তা মহান একুশের শহীদদের অবদান। এ সত্যটি উপলব্ধি করিয়ে দেয়ার প্রয়োজন নেই। আমাদের জনপদ, নদী, বৃক্ষ, আকাশ প্রকৃতি সবকিছুই তার সাক্ষী। সাম্প্রতিককালে এর পরিধি আরও বিস্তৃত হয়েছে। আমাদের জনপদ পেরিয়ে মহান একুশের তাৎপর্য সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। সারা বিশ্ব মহান একুশকে মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারের বুকের তাজা রক্ত আমাদের জন্য বয়ে এনেছে এক বিরল সম্মান। তাদের রক্তে গড়া ইতিহাস, সময়ের হাত ধরে আজ বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে পেয়েছে স্থান। এ গৌরব সমগ্র বাঙালী জাতির। মাতৃভাষায় মানুষ তার মনের কথা বলবে এটা প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার। এ অধিকার যেমন হরণ করা যায় না, কেড়ে নেয়া যায় না তেমনি গতির সীমাবদ্ধতার রেখা টেনে দেয়া যায় না। এ প্রসঙ্গে জ্ঞানতাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ‘নদীর যেমন গতিপথ নির্দেশ করে দেয়া যায় না, ভাষারও তেমনি। একমাত্র কালই ভাষার গতি নির্দিষ্ট করে। কিন্তু আমাদের দুটি কথা স্মরণ রাখা উচিত ভাষা ভাব প্রকাশের জন্য, ভাব গোপনের জন্য নয়, আর সাহিত্যের প্রাণ সৌন্দর্য, গোড়ামী নয়’ (বাংলাদেশ, বাঙালী আত্মপরিচয়ের সন্ধানে পৃঃ-১৬৬১)। জ্ঞানতাপস ডঃ শহীদুল্লাহর উক্তির প্রতিফলন দেখতে পাই আমাদের সমাজ জীবনের বাস্তবতায়। নদীর গতিপথ বন্ধ হলে যেমন পাল্টায় তার গতিপথ, নিমিষে গ্রাস করে ঘর-বাড়ি, গাছপালা, বিস্তীর্ণ জনপদ তেমনি যখন মানুষের মুখের ভাষা কেড়ে নিয়ে মানুষকে বাকরুদ্ধ করার চেষ্টা করা হয় তখন হৃদয়ে সৃষ্টি হয় বিক্ষোভের তরঙ্গ, বোবা হওয়ার দুঃসহ যন্ত্রণা থেকে মুক্তির আশায় জ্বালায় বিদ্রোহের আগুন। ’৫২ এর ভাষা আন্দোলন এ বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়। মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং অন্যায়ও অসত্যের বিরুদ্ধে একটি বিদ্রোহ। সে বিদ্রোহের প্রেরণার উৎস ছিল শহীদদের রক্ত। ১৯৪৭ এর মাঝামাঝি, সমগ্র উপমহাদেশে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। নানা রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহে লর্ড মাউন্টব্যাটন আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত বিভাগের ঘোষণা দিলেন। দ্বিজাতিতত্ত্বের কাছে মার খেল বাঙালী জাতীয়তাবাদ। জন্ম হলো ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটো রাষ্ট্রের। পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকেই পাকিস্তান শাসক গোষ্ঠী আমাদের সঙ্গে প্রভুসুলভ আচরণ শুরু করে, রাষ্ট্রের অখ-তা বজায় রাখার নামে বাঙালী জাতির মুখের ভাষা কেড়ে নেয়ার চেষ্টা চালায়। ২১ মার্চ ১৯৪৮ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানের ¯্রষ্টা এবং প্রথম গবর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা দিলেন, ‘উর্দু কেবল মাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।’ ২৪ মার্চ ১৯৪৮ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তন উৎসবে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। কিন্তু দুটো ঘটনাই বিনা চ্যালেঞ্জে যেতে পারেনি। রেসকোর্স ময়দানে জিন্নাহর উক্তির প্রতিবাদে ছাত্র সমাজ যেমন প্রতিবাদ জানায় তেমনি ২৪ মার্চ ১৯৪৮ ঢাকার কার্জন হলও ছাত্রদের ‘নো’ ‘নো’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। রাষ্ট্র ভাষার নামে বাংলা ভাষার বিরোধিতা মূলত ১৯৪৮ সাল থেকেই নয়, পাকিস্তানের জন্মলগ্নের আগেই অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে দক্ষিণ ভারতের ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত মুসলিম শিক্ষা সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণ দানকালে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য ড. জিয়াউদ্দিন আহম্মদের উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার সপক্ষে বক্তব্য, ১৯৪৭ এর ৫ ডিসেম্বর করাচীতে অনুষ্ঠিত ‘পাকিস্তান শিক্ষা সম্মেলন’ এর সভাপতি আবদুল হক এবং প্রধান অতিথি বাঙালী শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমান কর্তৃক উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করার সুপারিশ থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মাঝে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। রাষ্ট্রভাষার নামে বাংলা ভাষাভাষী বাঙালী জাতির ওপর উর্দু ভাষাকে চাপিয়ে দেয়ার হীন প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করার লক্ষ্যে ১২ ডিসেম্বর ১৯৪৭, গঠিত হয় ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’। ২ মার্চ, ১৯৪৮ পাকিস্তান গণপরিষদে পূর্ববঙ্গের মুসলিম লীগ দলীয় সদস্যদের ভূমিকা এবং মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিনের বাংলা ভাষার বিরুদ্ধাচরণের সংবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মাঝে দারুণ উত্তেজনার সৃষ্টি হয় এবং নেতৃস্থানীয় ছাত্ররা ফজলুল হক হল মিলনায়তনে মিলিত হয়ে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদকে পুনর্গঠন করে ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করেন। ২৪ মার্চ, ১৯৪৮ সালে কার্জন হলে জিন্নাহর ঘোষণার প্রতিবাদে এই ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ পক্ষ থেকেই বাংলা ভাষার সমর্থনে জিন্নাহকে একটি স্মারকলিপি দেয়া হয়। তবে উভয় পক্ষের মধ্যে রাষ্ট্রভাষা নিয়ে তুমুল বাক-বিত-ায় আলোচনা ভেঙ্গে যায়। ১১ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৮ জিন্নাহ ইন্তেকাল করায় ক্ষমতার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে মুসলিম লীগের নেতৃবৃন্দ ব্যস্ত হয়ে পড়ায় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাঙালী জাতির ওপর চাপিয়ে দেয়ার সরকারী প্রচেষ্টা আপাতত স্তিমিত হয়ে পড়ে। মাত্র চার বছরের ব্যবধানে রাষ্ট্রভাষা নিয়ে ষড়যন্ত্র আবার নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ১৯৫২-এর ২৬ জানুয়ারি ঢাকার পল্টন ময়দানে মুসলিম লীগ আয়োজিত এক জনসভায় ভাষণ দান কালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন ঘোষণা দিলেন, ‘উর্দুই পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে।’ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিনের উক্ত ঘোষণার প্রতিবাদে ছাত্র সমাজ আন্দোলন গড়ে তোলে। ১৯৫২ এর ২৭ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের প্রতিবাদ সভা, ৩০ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ধর্মঘট, ৩১ জানুয়ারি বার লাইব্রেরীতে ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন এবং ৪ ফেব্রুয়ারি সমগ্র ঢাকা নগরীতে ছাত্র-ধর্মঘট পালিত হয়। পাশাপাশি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর সভাপতিত্বে ঢাকার বার লাইব্রেরীতে অনুষ্ঠিত সভায় প্রথম ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়। আহ্বায়ক নির্বাচিত বরিশাল আওয়ামী লীগের কাজী গোলাম মাহবুব। সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ ২১ ফেব্রুয়ারিকে ভাষা দিবস ঘোষণা করে প্রদেশব্যাপী হরতাল আহ্বান করে। এদিকে ২০ ফেব্রুয়ারি বিকেলে আকস্মিকভাবে ঢাকা নগরীতে ১৪৪ ধারা জারি করা হলে রাতে পরিষদের জরুরী বৈঠক বসে। পরদিন ১৪৪ ধারা ভঙ্গ নিয়ে বাক-বিত-ার পর বৈঠকে উপস্থিত ১৬ জন সদস্যের মধ্যে ১১ জন ১৪৪ ধারা ভঙ্গের বিরুদ্ধে ভোট দেন এবং ৪জন ছাত্র ও যুব প্রতিনিধি ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে ভোট দেন। অন্যতম সদস্য কমরেড মোহাম্মদ তোয়াহা ভোটদানে বিরত ছিলেন। আবুল হাশিমের সভাপতিত্বে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্ম পরিষদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অগ্রাহ্য করে ২০ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে ফজলুল হক হলের পুকুর পাড়ে সংগ্রামী ছাত্রদের গোপন বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করলে পুলিশ ছাত্রদের মিছিলের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। পুলিশের গুলি বর্ষণের ফলে শহীদ হয় সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার এবং তাদের রক্তে রঞ্জিত হয় ঢাকার রাজপথ। সেদিন পাকিস্তান সরকারের পদলেহনকারী বড় বড় পদে অধিষ্ঠিত কতিপয় বাঙালী আমলা, ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের কতিপয় মন্ত্রী এবং তাদের পদলেহনকারী কতিপয় দালাল ছাড়া পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাধারণ নেতাকর্মী, সমর্থকগণ সবাই উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার সপক্ষে ছিলেন এমন নয়। ভাষা, সাহিত্য সমাজ সংস্কৃতি সম্পর্কে অজ্ঞ, অদুরদর্শী রাজনৈতিক দৃষ্টিসম্পন্ন পাকিস্তান সরকারের পদলেহনকারী কতিপয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি বুঝতে চাননি পাকিস্তান ডোমিনিয়নের বিভিন্ন অধিবাসীদের উর্দুই একমাত্র মাতৃভাষা নয়। পশতু, বেলুচী, পাঞ্জাবি, সিন্ধু এবং বাংলাভাষা বিভিন্ন অঞ্চলের মাতৃভাষা রূপে প্রচলিত ছিল এবং জনসংখ্যার ভিত্তিতে ৫৬% জনের মাতৃভাষা ছিল বাংলা এবং উর্দু ছিল মাত্র ৩% ভাগের মাতৃভাষা। তাছাড়া সাংস্কৃতিক সম্পদের ভা-ারের দিক থেকে বিচার করলেও দেখা যায় বাংলাভাষা পৃথিবীর যে কোন ভাষার চেয়ে কম সমৃদ্ধ নয়। এমতাবস্থায় জনসংখ্যার ভিত্তিতে মাত্র ৩% ভাগের মাতৃভাষা উর্দুকে সংখ্যাগরিষ্ঠ ৫৬% বাঙালীদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার হীন প্রচেষ্টা পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর মারাত্মক চিন্তাধারার ফসল ছাড়া আর কিছুই নয়। ’৫২ এর ভাষা আন্দোলনে শহীদ সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারের রক্ত বৃথা যায়নি। ১৯৪৮ এর ১৪ মার্চ দৈনিক আজাদে প্রকাশিত একটি রিপোর্টের যেখানে শিরোনাম ছিল ‘বঙ্গ ভাষায় গাড়ির নম্বর প্লেট : ড্রাইভারের ৫ টাকা জরিমানা’ সেখানে ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সংবিধানে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয় এবং পরবর্তী সময়ে পুলিশ কর্তৃপক্ষ মাঝে মধ্যেই ঢাকায় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করত যে, ‘গাড়ির নম্বর প্লেট সঠিকভাবে বাংলায় না লিখলে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ ’৫২ এর শহীদদের রক্ত শুধু বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে তাই নয় সেদিন শহীদদের রক্ত থেকেই জন্ম নিয়েছিল বাঙালী জাতীয়তাবাদের আদর্শ। বাঙালী জাতির সৌভাগ্য যে, সেদিন বাংলা ভাষার জন্য সংগ্রাম করতে গিয়ে সবার অলক্ষ্যে স্বাধীনতার বীজটিই রোপণ করা হয়েছিল। পাকিস্তান শাসনামলের ২৩ বছরে উপনিবেশবাদী স্বার্থে শাসকচক্র অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে বাঙালী জাতীয়তাবাদের চিন্তা চেতনাকে বিনষ্ট করার লক্ষ্যে প্রয়াস চালায়। কিন্তু তাদের প্রতিক্রিয়াশীল জঙ্গী কর্মকা- ’৫২ এর চেতনায় যে উদার জাতীয়তাবাদ গড়ে উঠেছিল তা আরও শাণিত হয়, বাঙালী জাতি আরও প্রতিবাদী হয়ে উঠে। পর্যায় ক্রমে ’৬২ এর ছাত্র আন্দোলন, ’৬৬ এর ছয় দফা, ’৬৯ এ গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচন এবং ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন সার্বভোম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান লেখা হয় বাংলায় এবং সংবিধানের ৩ অনুচ্ছেদে সুস্পষ্টভাবে লেখা হয় ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা’। আমাদের সাংস্কৃতিক আদর্শ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, অসাম্প্রদায়িকতা, বাঙালী জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থার অঙ্গীকার নিয়ে যে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছিল ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির জনককে হত্যার মধ্য দিয়ে তার পরিসমাপ্তি ঘটে, উত্থান হয় নাজিম উদ্দিনদের, অবমাননা করা হয় শহীদের রক্তের। দীর্ঘ ২১ বছর পরে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় “ভাষা দিবস” আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। কানাডার ভ্যানকুভার শহরে বসবাসরত দুই বাঙালী রফিকুল ইসলাম এবং আবদুস সালাম প্রাথমিক উদ্যোক্তা হিসাবে একুশে ফেব্রুয়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ঘোষণার আবেদন জানিয়েছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে ১৯৯৮ সালে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ঘোষণা করা হয় এবং ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্য দেশসমূহে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে। এখন থেকে ২১ ফেব্রুয়ারীকে সারাবিশ্ব মাতৃভাষা দিবস হিসাবে পালন করবে। এটা বাঙালী জাতির গৌরবের বিষয়। লেখক : গীতিকার ও প্রাবন্ধিক
×