ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বৈচিত্র্যময় ফুল

প্রকাশিত: ১২:৩১, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

বৈচিত্র্যময় ফুল

ফুলের সৌন্দর্য আর সুবাস মুগ্ধ করে সবাইকে। তবে পৃথিবীর সব ফুলই যে সুন্দর এবং সুবাসে ভরপুর এমন নয়। কিছু কিছু ফুল রয়েছে যেগুলো সৌন্দর্য গুণে সকলকে মুগ্ধ করলেও এর আড়ালে লুকিয়ে থাকে অসহনীয় মাত্রায় বিশ্রী গন্ধ। আবার কিছু ফুল রয়েছে যা দেখতে তেমন আকর্ষনীয় না হলেও এদের রয়েছে ভেষজগুন! বিভিন্ন ধরনের বৈচিত্র্যময় ফুল নিয়ে লিখেছেন-মুনতাসির সিয়াম অরাম ডিসকর্ডিস বিখ্যাত গ্রীক উদ্ভিদবিদ পেভানিয়াস ডায়োসকরিডেসের নাম অনুসারে নামকরণ করা হয়েছে অরাম ডিসকর্ডিস ফুলটির। সৌন্দর্যে রূপায়িত এই ফুলটি দেখতে অনেকটা ভেলভেটের কচু ফুলের মতো। এই ফুলের গাছের পাতার রং হয় গাঢ় সবুজ ধরনের। অরাম ডিসকর্ডিস ফুলটি সাধারণত গ্রীস, সাইপ্রাস, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়। এই ফুলের গাছ গ্রীষ্মকালে সুপ্ত অবস্থায় থাকে এবং বসন্তকালে তাতে ফুল ধরে। সাধারণত হালকা ছায়াযুক্ত এবং রৌদ্র উজ্জ্বল স্থানে এই ফুলের গাছ খুব ভাল জন্মে। দেখতে আকর্ষণীয় হলেও পচনশীল মৃতদেহ এবং গোবরের গন্ধ একত্রে মেশালে যে ধরনের বিশ্রী গন্ধ পাওয়া যায়, এমন এক ধরনের গন্ধ বের হয় এই ফুল থেকে। র‌্যাফেলশিয়া আরনল্ডি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফুল হচ্ছে র‌্যাফেলশিয়া আরনল্ডি। লাল রঙের পাপড়ির উপর সাদা রঙের ছোপ ছোপ দাগ বিশিষ্ট এই ফুলটি দেখতে বেশ চমকপ্রদ। মোট ৫টি পাঁপডি থাকে এই ফুলে। তবে দেখতে চমকপ্রদ হলেও এই ফুলের রয়েছে তীব্র দুর্গন্ধ। পচা গলিত মাংসের মতো তীব্র গন্ধের জন্য র‌্যাফেলশিয়া আরনল্ডি বিশেষভাবে পরিচিত। পচা গন্ধের মাধ্যমে আকৃষ্ট হয়ে মাছি এই ফুলের পরাগায়ন ঘটায়। বিরল প্রজাতির এই ফুলটি বোর্নিয় এবং সুমাত্রার রেইনফরেস্ট ছাড়া আর তেমন কোথাও একটা দেখতে পাওয়া যায় না। এই ফুলের উদ্ভিদের কোন পাতা বা শিকড় থাকে না এবং এর উদ্ভিদের দেহে কোন ক্লোরোফিল না থাকায় এটি নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে না। অন্য উদ্ভিদের থেকে খাদ্য সংগ্রহের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকে এই ফুলের উদ্ভিদ। র‌্যাফেলশিয়া আরনল্ডির ভর সাধারণত ১১ কেজি এবং ব্যাস প্রায় ১ মিটারের মতো হয়ে থাকে। স্টাপেলিয়া জাইগানটিয়া স্টাপেলিয়া জাইগানটিয়া ফুল দেখতে অনেকটা তারা আকৃতির। ফুলটি ফোটার পর এর ৫টি পাঁপড়ি এমনভাবে সুসজ্জিত হয় যেন ঠিক একটি ফুটন্ত তারা। এই ফুলের ব্যাস প্রায় ৩৫ সেন্টিমিটারের মতো হয়ে থাকে। সাধারণত লালচে কিংবা হলুদ রং বিশিষ্ট এই ফুলটি দক্ষিণ পূর্ব আফ্রিকা অঞ্চলের একটি অঞ্চলভিত্তিক ফুল। যা মূলত এক ধরনের ক্যাকটাস। তারা আকৃতির স্টাপেলিয়া জাইগানটিয়া ফুলের সৌন্দর্য দূর থেকে মানুষকে মুগ্ধ করলেও, এর কাছাকাছি গেলে ফুল থেকে পচনধরা মাংসের মতো অসহনীয় মাত্রায় দুর্গন্ধ পাওয়া যায়। এই ফুলের গাছ ব্যাঙের গাছ নামেও পরিচিত। ফুলটি ফোটার পর এর রং এবং গন্ধ মাছিদের প্রবলভাবে আকৃষ্ট করে। যার ফলে মাছিরা এই ফুলের পরাগায়ন ঘটিয়ে থাকে। টাইটান অরাম বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ফুল টাইটান অরাম। এটি একক কোন ফুল নয়, একটি পুষ্পবিন্যাস। যাতে শত শত কিংবা হাজার হাজার ছোট ছোট ফুল থাকে। চওড়ায় এই ফুলটি সাধারণত ১০ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। কালচে লাল মাংসের মতো রং বিশিষ্ট টাইটান অরাম ইন্দোনেশিয়া এবং মধ্য সুমাত্রার কিছু অঞ্চলজুড়ে জন্মায়। টাইটান অরাম ফুল থেকে পচনশীল মৃত মানবদেহের তীব্র দুর্গন্ধ বের হয়। যার ফলে ফুলের কাছে আসলেই মনে হয় যেন কোন পচনশীল মৃতদেহ বা লাশের পাশে অবস্থান করছি। এজন্য এটিকে লাশ ফুলও বলা হয়ে থাকে। চার থেকে পাঁচ বছর পরপর মাত্র একবার করে টাইটান অরাম ফুল ফোটে এবং ফোটার পর এক থেকে দুই দিনের মতো এটি সতেজ থাকে। প্রায় ১২ ঘণ্টার মতো সময় ধরে এই ফুলের তীব্র পচা গন্ধ আশপাশের এলাকাজুড়ে পাওয়া যায়। টাইটান অরামকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে দুর্গন্ধময় ফুল। এরিস্টোলোসিয়া জাইগানটিয়া এরিস্টোলোসিয়া জাইগানটিয়া নামের এই ফুলটি ব্রাজিলিয়ান ডাচম্যান’স পাইপ নামেও পরিচিত। ব্রাজিলের স্থানীয় এই ফুলটির গাছের দৈর্ঘ্য প্রায় ৮-১০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। ফুলটির চকচকে পাঁপড়ি দেখে সকলে খুব সহজেই মোহরিত হলেও, এর ঘ্রাণ থেকে পাওয়া যায় ইঁদুরের পচা মল এবং বিষ্ঠার মতো তীব্র দুর্গন্ধ। এই ফুলের এমন গন্ধই প্রজাপতি, মাছিসহ বিভিন্ন পোকাকে এই ফুলটির প্রতি আকৃষ্ট করে তোলে এবং এ সকল পোকার মাধ্যমেই এরিস্টোলোসিয়া জাইগানটিয়া ফুলের পরাগায়ন ঘটে। হাইডনোরা আফ্রিকানা বিজ্ঞানীরা হাইডনোরা আফ্রিকানাকে প্রথমদিকে ফাংগস ভেবে ভুল করলেও পরবর্তীতে জানা যায় যে, এটি প্রকৃতপক্ষে একটি ফলযুক্ত উদ্ভিদ। পরজীবী এই উদ্ভিটিকে দক্ষিণ আফ্রিকার অনুর্বর শুকনো মরুভূমিতে দেখতে পাওয়া যায়। এই উদ্ভিদের দেহে কোন ক্লোরোফিল না থাকায় এটি সাধারণত মাটির নিচেই জন্মায়। কেবলমাত্র ফোটার পর ফুলটি মাটির উপরে উঠে আসে। হাইডনোরা আফ্রিকানা ফুলটি ফুটলে ফুলের পাঁপড়ির স্পঞ্জের মতো উপরিভাগ থেকে তীব্রভাবে গোবরের গন্ধ বের হয়। এই গাছের পরাগায়নের অন্যতম প্রধান ম্যাধ্যম হলো গুবরেপোকা। এই গাছের তীব্র গোবরের গন্ধ গুবরেপোকাকে প্রবলভাবে আকৃষ্ট করে। যার ফলে অন্য পোকাসহ গুবরেপোকা এই ফুলে এসে বসে এবং এর পরাগায়ন ঘটায়।
×