ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘ব্যস্ত মায়ের দৈনন্দিন রুটিন’

প্রকাশিত: ১২:৩৩, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

‘ব্যস্ত মায়ের দৈনন্দিন রুটিন’

আমি একজন ‘মা’। কর্মজীবী মা। আমার কর্মক্ষেত্র আমাকে দিয়েছে স্বাধীনতা, স্বচ্ছলতা আরও দিয়েছে নিজের একটা পরিচয়, যা আমাকে স্বাবলম্বী করার সঙ্গে সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রেই অনেক সাহসী করে তোলে। আরও করে আত্মতৃপ্ত যখন দেখি আমার সস্তান তার ‘কর্মজীবী মা’কে নিয়ে গর্ববোধ করে। কিন্তু মাঝে মাঝেই নিজেকে অপরাধী মনে হয় আমার সন্তানদের কাছে কারণ আমার এই কর্মক্ষেত্রে দেয়া সময়গুলো আমার আর আমার বাচ্চাদের নিজস্ব সময় থেকে কেড়ে নেয়া। যখন বাসায় ফিরে ওদের শত শত প্রশ্ন, আবদার, বানিয়ে বলা গল্প এমন অনেক কিছুই শুনি, সেই সঙ্গে ওদের মনের চাপা অভিযোগ-যা আমার বাড়িতে অনুপস্থিতির জন্য তৈরি, সেটা বুঝতেও আমার সময় লাগে না। ঠিক তখই নিজেকে বড় অপরাধী মনে হয়। একজন শিক্ষিত নারী হিসাবে আমার চাকরি যা আমাকে স্বাবলম্বী করেছে, সেটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমনি, একজন মা হিসেবে বাচ্চাদের অফুরন্ত সময় দেয়াও সমান গুরুত্বপূর্ণ যা সঠিকভাবে না দিতে পেরে আমি সন্তানদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ ও অসহায়। ঠিক তখনই মনে হয়- এই জন্যই জ্ঞানীজনেরা বলেছেন- ‘জীবন ফুলশয্যা নয়।’ এর মধ্য দিয়েই আমরা কর্মজীবী মায়েরা এগিয়ে যাচ্ছি এবং এগিয়ে যাবো ‘ইনশাআল্লাহ’। তবে কোন কিছুকেই পেছনে ফেলে নয়। কর্মক্ষেত্রকে যেমন গুরুত্ব দিতে হবে তেমনি পরিবারকেও। মনে রাখতে হবে ‘আজিকার শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত।’ কাজেই ওদের আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব তো আমাদেরই। ঠিক যেমন- আমাকে তৈরি করার পেছনে আমার বাবা-মা’র অবদান সবচেয়ে বেশি। ১. প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার আগেই ঠিক করে নিতে হবে ঐদিনের প্রতি বেলার খাবার মেন্যু। বিশেষ করে বাচ্চারা কখন কি খাবে, তাকে টিফিনে কি দিতে হবে। গৃহপরিচারিকা যদি থাকেন তাকে ভাল করে বুঝিয়ে দিতে হবে। ২. বাচ্চার স্কৃল ছুটির সময় ড্রাইভারকে অথবা বাসায় ফোন করেও নিশ্চিত হতে হবে সে ফিরেছে কি-না এবং সেই সঙ্গেই ওকে খাওয়ানোর ব্যাপারেও মনে করিয়ে দিতে হবে। ৩. অফিস থেকে ফিরে বাচ্চাদের যতুটুকু পারা যায় কোয়ালিটি টাইম দিতে হবে। নিজের অনুপস্থিতির কষ্টটাকে মুছে দিতে হবে ওর স্কুলের নানা ধরনের গল্প শুনে, সেই ফাঁকে স্কুলে টিচার কি পড়িয়েছে সেটাও শুনতে হবে। ৪. কোথাও ব্যথা পেয়েছে কি-না, বাসার টিফিন না খেয়ে বাইরের খাবার খেল কি-না এগুলোও গল্পের ছলে শুনে নিলে ভাল। ৫. অবশ্যই প্রতিদিন রুটিন করে বাচ্চাদের পড়াতে হবে। তাহলে প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন তৈরি করার অভ্যাস তৈরি হবে। নিজের অপরাধী বোধ থেকেও বেরিয়ে আসা যাবে। গান, ছবি আঁকা এসব দিকে যদি ঝোঁক থাকে তবে আমাদের অফিসে থাকার সময়টায় যেন সেগুলোর চর্চা করে। সেটা বাচ্চাদেরও বুঝিয়ে দিতে হবে। এতে করে ওর চর্চাও হবে আবার আমাদের অনুপস্থিতির সময়টাও ওর ভাল কাজে কাটবে। ৬. শুধু পড়ার বই-ই না, ওকে কাছে নিয়ে ওর বয়স উপযোগী গল্পের বই পড়ে শোনাতে হবে। এতে বড় হয়ে বাচ্চার বই পড়ার মতো ভাল অভ্যাস তৈরি হবে। ৭. ছুটির দিনগুলোতে নিজের যত্ন নিতে হবে। নিজেকে সুন্দর রাখতে চেষ্টা করতে হবে। তাতে মনও ভাল থাকবে। মাসের এক থেকে দুইটা ছুটির দিন বাচ্চাদের বাইরে কোথাও অর্থাৎ পার্কে, চিড়িয়াখানায় অথবা কোন আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় বেড়াতে নিয়ে যেতে হবে। এতে বাচ্চাাদর মন প্রফল্ল থাকবে। নিজেদেরও একঘেয়েমি কাটবে। ৮. এই কাজগুলো করা যে অনেক কঠিন তা কিন্তু নয়। একটু রুটিন করে গুছিয়ে চলা আর একটু বাড়তি উদ্যোগই যথেষ্ট। এতে করে আমরা আমাদের কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে যাব এবং একজন মা হিসেবেও থাকবে না কোন অপরাধ বোধ।
×