ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

স্বপ্নময় জগতে মেয়েদের অবকাশ যাপন

প্রকাশিত: ১২:৩৪, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

স্বপ্নময় জগতে মেয়েদের অবকাশ যাপন

অতি বাল্যকাল থেকে স্বাপ্নিক আবিষ্টতায় মেয়েদের শৈশব-কৈশোর পার হয়। সেই পুতুল খেলার মধ্য দিয়ে একটি কন্যাশিশু প্রিয়ার আবরণে নিজেকে ঢেকে নেয়। চিরায়ত মাতৃত্বের আকাক্সক্ষায় পরিপূর্ণ হয়। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়Ñ ছিলি আমার পুতুল খেলায় প্রভাতের শিব পুজোর বেলায় তোকে আমি ভেঙ্গেছি আর গড়েছি তুই আমার ঠাকুরের সনে ছিলি পূজার সিংহাসনে তারই পূজায় তোমার পূজা করেছি। এই মাতৃত্ব হঠাৎ জেগে ওঠা স্নেহ বিলাসী রূপের আবেদন মাত্র নয়। সেই ছোট বেলা থেকে একটি কন্যাশিশুর কল্পনায় যে মাতৃশৌর্য বিরাজ করে কিংবা শিব দেবতাকে পূজার মাধ্যমে আরাধ্য স্বামীর প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধার আবেগী স্বপ্ন পরিস্ফুুট হয় সেখান থেকেই ছোট্ট মেয়েরা নিজেদের মধ্যে প্রিয়া এবং মাকে খুঁজে বেড়ায়। বাস্তবের করাঘাতে এই স্বপ্নময় জগত নিজের চারপাশে শৃঙ্খল গড়ে তোলে। বিয়ে হয়ে যায়- স্বামীর সাহচর্যে মাতৃত্বের চেতনাও পরিপক্ব হয়। দশ মাস দশ দিন জঠরে লালন করে যে সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখায় সেখানেও নতুন স্বপ্নদ্রষ্টার ভূমিকায নামতে হয় সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুটির জীবনকে তৈরি করার সঙ্কল্পে। এ ছাড়া একটি মেয়ে শুধুমাত্র নিজেকে তৈরি করতে কিভাবে কাল্পনিক জগতকে আমন্ত্রণ জানায়। সেটা জানতেও আমাদের রবীন্দ্রনাথের কাছে যেতে হয়। কবির ‘সাধারণ মেয়ে’ কবিতাটি নিশ্চয়ই অনেকেরই পড়া। কী করে জিতিয়ে দেবে? উচ্চ তোমার মন, তোমার লেখনী মহীয়সী। তুমি হয়তো ওকে নিয়ে যাবে ত্যাগের পথে, দুঃখের চরমে, শকুন্তলার মতো। কিংবা ইতিমধ্যে মালতী পাস করুক এমএ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে, গণিতে হোক প্রথম তোমার কলমের এক আঁচড়ে। আমার দশা যাই হোক খাটো কোরো না তোমার কল্পনা। মেয়েটাকে পাঠিয়ে দাও য়ুরোপে। কিন্তু এতো কবির কল্পনা। বাস্তবে কি তাই? একজন কন্যাশিশু বড় হতে হতে চার পাশে যে সামাজিক অভিশাপ প্রত্যক্ষ করে রক্ষণশীল, পশ্চাদপদ সমাজে সেখানে নিজেকে তৈরি করতে গেলে স্বপ্ন দেখা ছাড়া কোন পথও নেই। বৈষম্যপীড়িত সমাজে মানুষে মানুষে ফারাক, ছেলে-মেয়ের মধ্যে ব্যবধান সব মিলিয়ে অনেক মেয়ে স্বপ্ন দেখে সে ছেলে কিংবা মেয়ে নয় মানুষ হিসেবে নিজেকে তৈরি করতে চায় তার সমস্ত নাগরিক অধিকার অর্জন করে। এক সময় সে নিজেকে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়েও তোলে। কিন্তু সম্মানজনক একটি পেশার সাথে নিজের অংশীদারিত্ব প্রমাণও করে। এরপরে বিয়ের প্রসঙ্গ এসে যায়। বিয়ে হয়। নতুন সংসারে ভিন্ন এক অচেনা মানুষের সাথে জীবনের গ্রন্থি বেঁধে নিতে হয়। এখানে কিছু মেয়ের স্বপ্ন এবং আশা ভঙ্গ হয়। অনেকে আবার সহজ স্বাভাবিক যাত্রায় স্বপ্নের দরজায় পৌঁছে যায়। এক সময় চিরায়ত মাতৃত্ব নতুন ভাব কল্পনা জাগিয়ে তোলে। সুস্থ সন্তান পৃথিবীতে আনাই শুধু নয় যথার্থ পরিচর্যায় স্পর্শকাতর শিশু পর্বটিও মনোযোগ এবং স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পার করার স্বাপ্নিক আবেশে পরিশুদ্ধ হয়। সন্তানকে যথার্থ মানুষ করতে ভাবকল্পনাকে যেমন সচকিত করে পাশাপাশি বাস্তব পথ চলাও যাতে নির্বিঘœ আর নিশ্চিত হয় সে মাত্রায়ও ভেতরের বোধ তাড়িত হয়। তবে তথ্যপ্রযুক্তির আধুনিক সময়ে মেয়েরা নিজেদের কর্মজীবনকেও নানামাত্রিকে শাণিত করে। এখানে স্বপ্নের চাইতেও চলমান বাস্তব জীবনের অনুকূল প্রতিবেশে নারীরা অনেকখানি এগিয়ে যায়। ফলে শিক্ষকতা জীবন কিংবা চিকিৎসক, প্রকৌশলী হিসেবে যেমন কর্পোরেট পেশায়ও একই গতিতে নিজের অবস্থানকে শক্ত ও মজবুত করে শীর্ষস্থানে চলে যেতেও সময় লাগে না। একজন নারীর দক্ষতা, যোগ্যতা, নিষ্ঠা এবং সততা তাকে স্বপ্নের স্রোতে খুব বেশি না ভাসিয়েও পেশাগত জীবনকে আকাক্সক্ষার সোপানে পৌঁছে দেয় বাস্তবের কষাঘাতেও। সুতরাং মেয়েরা এক সময় স্বপ্ন দেখতেই বেশি পছন্দ করত। আধুনিকতার সম্প্রসারিত বলয়ে তারা কর্মক্ষম নারী হিসেবে সফলতা অর্জনেও পিছপা হচ্ছে না। স্বপ্নতাড়িত নারীরা আজ অনেকেই বাস্তব পরিস্থিতির মুখোমুখি। সেখানেও তারা স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যাচ্ছে। অপরাজিতা প্রতিবেদক
×