ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রুশো তাহের

রূপপুর ॥ অগ্রগতির ধারাবাহিকতায় সেই মাহেন্দ্রক্ষণে

প্রকাশিত: ০৯:০৯, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

রূপপুর ॥ অগ্রগতির ধারাবাহিকতায় সেই মাহেন্দ্রক্ষণে

দুই ইউনিট বিশিষ্ট নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে ২০২৩ সালে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে বারোশ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত এবং দ্বিতীয় ইউনিট থেকে ২০২৪ সালে যুক্ত হবে আরও বারোশ’ মেগাওয়াট। আসলে ২০২৩ ও ২০২৪ সালের ওই মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য বাঙালী জাতি অপেক্ষার প্রহর গুনছে। বস্তুত অনেকগুলো অগ্রগতির মাইলফলক অতিক্রম করে বাঙালীর অর্ধশতকের লালিত স্বপ্ন ‘রূপপুর’ ওই মাহেন্দ্রক্ষণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আর বাঙালীর এই পারমাণবিক মহাকর্মযজ্ঞের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে আছেন আমাদেরই স্বপ্ন-সারথী বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আচ্ছা, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮-এর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যদি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার বিশেষত, আওয়ামী লীগ যদি নিরঙ্কুশ বিজয়ে টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসীন না হতে পারতেন, তাহলে রূপপুর তথা পুরো দেশের কী অবস্থা হতো, তা কি এখন কল্পনা করা যায়? নির্বাচনের পূর্বে কেউ কেউ স্বপ্ন দেখেছিলেন বিএনপি-জামায়াত জোটের পক্ষে নীরব ভোট বিপ্লব হতে যাচ্ছে। এ যেন আরব বসন্ত! কিন্তু কথিত ওই আরব বসন্তের হাত ধরে মধ্যপ্রাচ্যে এসেছে দানব আইএস ও অন্তহীন ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত। যাহোক, বাঙালী জাতি ভুল করেনি। তাই তো শেখ হাসিনার হাতেই দেশের ভার দিয়েছে জনগণ। কিন্তু নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকে এখনও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপপ্রয়াসে কাজ করছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কতিপয় মহল। আর ওই মহলকে অব্যাহতভাবে মিডিয়া কাভারেজ দিয়ে যাচ্ছে ‘ভালর সঙ্গে’ থাকা একটি গণমাধ্যম। বিশেষত, নির্বাচন-পরবর্তী এই গণমাধ্যমের সংবাদ পরিবেশনের পুরো অংশেই ছিল নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার সব পরিকল্পিত আয়োজনের প্রকাশ। বস্তুত, মুক্ত সাংবাদিকতার সুযোগে ‘ভালর সঙ্গে’র ওই গণমাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অপতিরোধ্য অগ্রগতিতে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের বিরুদ্ধে রীতিমতো মিডিয়াওয়ারে শামিল হয়েছে বলেই প্রতীয়মান হয়। এদিকে ‘ভালর সঙ্গে’ থাকা মিডিয়া নির্মাণ কাজের শুরু থেকেই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র নিয়ে পরিকল্পিতভাবে নেতিবাচক নানা সংবাদ পরিবেশন, কলাম ছাপানো, গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন প্রভৃতি করে যাচ্ছে অব্যাহতভাবে। এসব নেতিবাচক কর্মকা-ের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে তারা কখনও দাবি করছে আমরা রূপপুর বিরোধী নই, কখনওবা বলছে রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ যথাযথ নিয়মনীতি মেনে হচ্ছে না, তাই আমাদের এই সমালোচনা, আবার কখনও নিউক্লিয়ার বিরোধী চক্রের (দেশীয় ও আন্তর্জাতিক) কাউকে দিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য-উপাত্তের সম্বলিত কলাম ছেপে দেশের জনগণকে নিউক্লিয়ার সচেতন করার দাবি করছে। বস্তুত, এর মধ্য দিয়ে পারমাণবিক উৎস থেকে বিদ্যুত উৎপাদন তথা বিদ্যুত উৎপাদনে বাংলাদেশের নন-নিউক্লিয়ার থেকে নিউক্লিয়ার যুগে পদার্পণ সম্পর্কে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে বাংলাদেশকে বিশ্ব নিউক্লিয়ার ক্লাবের গর্বিত সদস্য দেশ হতে বঞ্চিত করার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত নানা মহলের পৃষ্ঠপোষকতাই করছে কথিত প্রচার সংখ্যার শীর্ষের ‘ভালর সঙ্গে’ থাকা গণমাধ্যমটি। ৩১ জানুয়ারি, ২০০৯ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রের জ্বালানি ইউরেনিয়াম সরবরাহে বাংলাদেশ ও রাশিয়া প্রাথমিক চুক্তি সই করছে। উল্লেখ্য, চুক্তি সই অনুষ্ঠানের পূর্বে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা শেষে এ বিষয়ে চূড়ান্ত চুক্তি সই হবে। বস্তুত ‘ভালর সঙ্গে’ থাকা মিডিয়া রূপপুরে জ্বালানি সরবরাহে চুক্তির সংবাদ পরিবেশনের সঙ্গে বিভ্রান্তিকর তথ্যও প্রচার করেছে। বোঝা যাচ্ছে, রূপপুরবিরোধীরা এখনও সক্রিয় আছে। বিভ্রান্তিকর সংবাদটি এ রকম, ‘২০১১ সালে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের করা সাধারণ চুক্তি অনুযায়ী, রূপপুর পরমাণু বিদ্যুতকেন্দ্রের সব যন্ত্রপাতি স্থাপন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও তা পরিচালনার দায়িত্ব থাকবে রাশিয়ার হাতে। কিন্তু ২০১৭ সালের ৮ এপ্রিল বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি পৃথক পরমাণু চুক্তি সই হয়। এই চুক্তিতে বলা হয়, ভারত কেন্দ্র নির্মাণ ও কেন্দ্র পরিচালনায় যুক্ত থাকবে। আবার ভারতের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রের সবকিছুর বিষয়ে পরামর্শও দেবে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়া থেকে আনা যন্ত্রপাতি যদি ভারত উপ-ঠিকাদার হিসেবে বাংলাদেশকে দেয়, তাহলে ওই যন্ত্রপাতিতে কোন ত্রুটি ও প্রযুক্তির মানের বিষয়ে ভারতীয় পরামর্শক দিয়ে যাচাই করাটা হবে প্রশ্নবিদ্ধ।’ বস্তুত, রূপপুর নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে করা প্রতিটি চুক্তির ধারাবাহিকতা ও আবশ্যিক প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে। আর প্রতিবেশী হিসেবে ভারতের সঙ্গে করা সহযোগিতামূলক চুক্তিসমূহেরও গুরুত্ব রয়েছে। কারণ, পারমাণবিক বিদ্যুত উৎপাদনে আমাদের প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের রয়েছে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা। এমনকি নিকট ভবিষ্যতে ভারত থোরিয়ামভিত্তিক নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ করবে বৈকি। আর পৃথিবীতে থোরিয়ামের প্রাচুর্যের বিষয়টি এখন সর্বজনবিদিত। তাই থোরিয়ামভিত্তিক নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের জ্বালানির কোন অভাব হবে না। যাহোক, খন্ডি তভাবে রূপপুর সম্পর্কিত কোন একটি চুক্তিকে তুলে ধরে এর ওপর বিশেষজ্ঞ মন্তব্য চাওয়া এমনকি মন্তব্য প্রদান বিভ্রান্তিরই কারণ হবে। বস্তুত ‘ভালর সঙ্গে’র মিডিয়া রূপপুরের জ্বালানি সরবরাহে চুক্তি সংবাদ পরিবেশনের আড়ালে বিভ্রান্তিকর তথ্য-উপাত্তই পরিবেশন করেছে। আদৌ এই মিডিয়া এ বিষয়ে কোন বিশেষজ্ঞের মন্তব্য নিয়েছে, না-কি নিজেদের বানোয়াট মন্তব্যকে বিশেষ মন্তব্য বলে পরিবেশন করেছে-কে জানে! আসলে বিশেষ কোনো স্বার্থসিদ্ধির লক্ষ্যে কথিত ‘ভালর সঙ্গে’র মিডিয়া মত প্রকাশের স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুকেন্দ্রের প্রত্যেকটি মাইলফলকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত। তবে আশার কথা হলো, সব বাধাবিপত্তি ও ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সাহসী ও স্বপ্নদর্শী নেতৃত্বে রূপপুর থেকে উৎপাদিত পারমাণবিক বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার সেই মহেন্দ্রক্ষণে পৌঁছে যাবে বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশ। লেখক : গবেষক
×