ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জ্যোৎ স্নালিপি

শিকারি বন্ধু

প্রকাশিত: ০৯:১৭, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

শিকারি বন্ধু

এক মজা পুকুরে বাস করত এক ডাহুক। ডাহুকটি কচুরিপানার ওপর দিয়ে ভীরু পায়ে হেঁটে হেঁটে খাবার খোঁজে আর শিকারির শব্দ পেলেই লুকিয়ে যায়। সব সময় ডাহুকটি ভয়ে ভয়ে থাকে- এই বুঝি শিকারির ফাঁদে আটকা পড়ে সে। ডাহুকটি শালিকের কাছে গিয়ে বলে, এভাবে ভয় নিয়ে কি বাঁচা যায়! আমার মনে খুব কষ্ট, কেন আমি তোমার মতো হলাম না। তোমাকে তো কেউ ফাঁদ পেতে ধরে না, তোমার কতো সুখের জীবন। তুমি উঠানে শুকোতে দেয়া ধান খাও, আর আরামে দিন কাটাও। শালিক বলে তা ঠিক। আমার খাবারের কোন অভাব নেই। আবার ধরা পড়ার ভয়ও নেই। এমনি করে দুজনে সুখ-দুঃখের গল্প করে। ভোর হলেই কচুরিপানার ফুলের ওপর দিয়ে হেঁটে যায় ডাহুক। কচুরিপানার নীল ফুলের ওপর হেঁটে যেতে খুব ভালো লাগে তার। কোনদিন মাছরাঙার সঙ্গে দেখা হলে ওরা দুজন লুকোচুরি খেলে। মাছরাঙা টুপ করে জলে লুকিয়ে কোথায় যেন হারিয়ে যায়; ডাহুক তাকে খুঁজে পায় না। এক বিকেলে ডাহুক কচুরিপানার ওপর পা ফেলে ফেলে মনের সুখে গান গাইছিল। হঠাৎ শিকারির ফাঁদে পা আটকে যায় তার। সারারাত ফাঁদে আটকা থাকার পর সকালে শিকারির কথা শোনা যায়। ডাহুককে পেয়ে তো সে খুব খুশি। অনেকদিন পর সে ডাহুকটিকে ধরতে পেরেছে। ডাহুক ভাবে, কী হবে তার! কী করে সে ছাড়া পাবে। হয়ত পাবে না। মারা যেতে হবে। জালে ভরে ডাহুককে নিয়ে চলে শিকারি। ডাহুকটি মনে একটু সাহস নিয়ে জানতে চায়, শিকারি তাকে নিয়ে কী করবে? শিকারি কথা বলে না, শুধু হাসে। ডাহুকটি আবার জানতে চায়, তাকে নিয়ে কী করা হবে? এবারও শিকারিটি কোন কথা বলে না, শুধু হেঁটে চলে। ডাহুকটি বুঝতে পারে তাকে মেরে ফেলা হবে। তাই শিকারিকে সে বলে, আমি জানি তুমি আমায় নিয়ে কী করবে। এবার শিকারিটি কথা বলে, কী করব? তোমরা মানুষেরা যা কর। কী করি? এই আমারদের ধরে নিয়ে রান্না করে খাও। তাই বুঝি? তা নয় তো কী। তোমরা খুব খারাপ। আচ্ছা আমি তোমার কী অপকার করেছি যে, আমায় তুমি ধরে নিয়ে যাচ্ছ? কিছুই না। তাহলে ধরলে কেন? এমনি এমনি? এমনি এমনি কাউকে দুঃখ দেয়া যায় বুঝি? আমরা তো কাউকে দুঃখ দেই না। হুম। হুম বলছো কেন। দেই কী। না দাও না। তাহলে তোমরা দাও কেন। দেই বুঝি! হেঁয়ালি রাখো শিকারি। তুমি ভাল নও। একটা জলার ধারে এসে থামে শিকারিটি। এখানে থামলে কেন? এখানেই বুঝি তোমাদের ভোজ হবে। শিকারিটি আবার হাসে। কে যেন কোয়াক কোয়াক শব্দে একটানা ডেকে চলে। শব্দটা আসে ঝোপের কাছ থেকে। ডাহুক তার কান খাড়া করে। মনে পড়ে যায় হারিয়ে যাওয়া বোনটির কথা। শিকারি এবার ডা-হু-ক বলে ডাকে। তখন একটা ডাহুক চারটি ছানাসহ ঝোপের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে। মা ডাহুকটিকে চেনা চেনা লাগে জালে আটকা পড়া ডাহুকটির। ডাহুকটি বলে, কে ও। শিকারি মিটিমিটি হাসি হেসে বলে, দেখ তো চিনতে পার কি না- বলে জাল থেকে মুক্ত করে ডাহুকটিকে। ছাড়া পেয়ে ডাহুক বলে, চেনা লাগছে, আবার অচেনাও। শিকারি বলে, আমি মনে করিয়ে দিই- ও তোমার বোন। অনেক দিন আগে এক চিল তোমাদের জলা থেকে ওকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। তারপর ও চিলের মুখ থেকে আমার সামনে এসে পড়ে। আমি ওকে সেবা করে সারিয়ে তুলি, তারপর এই জলাতে ছেড়ে দেই। তারপর থেকেই ওর সঙ্গে আমার ভাব হয়ে যায়। ও একদিন বলল, অন্য জলাতে ওর একটা বোন আছে, ওকে একবার দেখতে ইচ্ছে করে। অনেকদিন তোমার জলার ধারে তোমাকে খুঁজেছি। ধরতে চেয়েছি, পারিনি। তোমায় বললে কি তুমি আমায় ভরসা করতে? তাই তোমায় ফাঁদ পেতে ধরে আনলাম। জানি আমার উচিত হয়নি, কিন্তু কী করব বলো, এছাড়া তো কোন উপায় ছিল না। আমি ভাবলাম, তুমি বুঝি আমায় রেধে খাবে। আমি তোমায় ভুল বুঝেছি। আমার এখন খারাপ লাগছে। না জেনে আমরা তোমাদের কত ভুল বুঝি। তবে আমার আবায় ফিরিয়ে দিয়ে আসবে তো? ওই জলাতে আমার পরিবার-পরিজন থাকে। তারা আমায় না দেখতে পেলে খুব দুঃখ পাবে। এদিকে ডাহুক দেখতে পেয়ে বোন ডাহুক কান্না করে খুশিতে। ঠোঁট দিয়ে পালকে আদর করে দেয়। শিকারি ডাহুককে ফিরিয়ে দিয়ে আসে জলাটায় ধারে। ডাহুক শিকারিকে অন্য পাখিদের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়ে বলে, ও আমার বন্ধু। পাখিরা বলে, মানুষ আবার আমাদের বন্ধু হয় না কি? ওরা তো শিকারি হয়। ডাহুক বলে, না, না, সবাই এক রকম নয়। ও খুব ভাল, আমার ভাল বন্ধু, তোমরাও ওকে বন্ধু ভাবতে পার। অলঙ্করণ : প্রসূন হালদার
×