ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নিজ ভাষায় পড়তে চায় দিনাজপুরের নৃতাত্ত্বিক শিশুরা

প্রকাশিত: ০১:৪৫, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

নিজ ভাষায় পড়তে চায় দিনাজপুরের নৃতাত্ত্বিক শিশুরা

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ দিনাজপুরের বিরামপুর, নবাবগঞ্জ, হাকিমপুর ও ঘোড়াঘাট উপজেলার সংখ্যালঘু নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর প্রায় ২০ হাজার শিশু নিজ ভাষায় পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এসব শিশুর জন্য নিজ ভাষার কোন পাঠ্যপুস্তক নেই। এতে নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর বিদ্যালয়গামী শিশুদের বেশিরভাগই বাংলা ভাষায় পড়া আয়ত্ত করতে পারে না এবং প্রাথমিক পর্যায় থেকেই অনেকেই ঝরে যায়। জানা গেছে, বিরামপুর, হাকিমপুর, নবাবগঞ্জ ও ঘোড়াঘাট –এই চার উপজেলা মূলত সংখ্যালঘু নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী অধ্যুষিত। এখানে উরাও, সাঁওতাল, মাহালি, মাহাতো, মুচি সম্প্রদায়সহ ৬-৭টি নৃ-গোষ্ঠীর লাখেরও বেশি মানুষের বসবাস। এখানকার আদিবাসী শিশুরা যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যায়, তার কোনোটিতেই নিজ ভাষায় পড়ার সুযোগ নেই। তাদের ভাষার শিক্ষক দূরে থাক, পাঠ্যপুস্তকই নেই। নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীগুলোর অনেকের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, নিজ ভাষায় পড়ার সুযোগ না পেয়ে তাদের সন্তানদের অনেকেই শিক্ষা জীবনের শুরুতেই ঝরে পড়ে। এ ছাড়া, যারা বাংলা ভাষায় লেখাপড়া করে, তারা শেষমেশ নিজ ভাষা বা সংস্কৃতি সমৃদ্ধের সুযোগ পায় না। তাদের দাবি, সন্তানদের ঝরে পড়া রোধে এবং নিজ নিজ ভাষা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে স্বতন্ত্র পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও শিক্ষক নিয়োগ জরুরি। নৃ-গোষ্ঠীর শিশুরা জানায়, তারা নিজ নিজ বাড়িতে মা-বাবা ও ভাইবোনদের সঙ্গে যে ভাষায় কথা বলে, সে ভাষায় স্কুলে পড়ার সুযোগ পায় না। স্কুলে তাদের বাংলা ভাষায় কথা বলতে হয়, বাংলা ভাষায় লেখা বই পড়তে হয়। যা আয়ত্ত করাটা তাদের জন্য কঠিন। তাদের বক্তব্য, নিজ নিজ মাতৃভাষায় বই থাকলে তাদের জন্য খুব উপকার হতো। তারা ভালোভাবে পড়তে ও বুঝতে পারতো। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের নেতা মিকাইল টুডু ও কেরোবিন হেম্ব্রম বলেন, ‘আমাদের শিশুরা নিজ ভাষায় পড়ালেখার সুযোগ পায় না। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে আমাদের শিশুদের জন্য নিজ মাতৃভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করতে হবে। সেইসঙ্গে এসব বিদ্যালয়ে নৃ-গোষ্ঠী থেকে শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে, যাতে শিশুরা প্রাথমিক পর্যায় থেকে ঝরে না পড়ে। এছাড়া আমাদের ছাত্রছাত্রীদের জন্য সরকারিভাবে বৃত্তি ও উচ্চশিক্ষার সুবিধার্থে বিভিন্ন শহরে হোস্টেলের ব্যবস্থা করতে হবে। হাকিমপুর উপজেলা আদিবাসী ফেডারেশনের চেয়ারম্যান রূপলাল তির্কি বলেন, দিনাজপুরের হাকিমপুর, বিরামপুর, নবাবগঞ্জ ও ঘোড়াঘাট উপজেলায় বিভিন্ন সংখ্যালঘু নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর লক্ষাধিক মানুষ বসবাস করেন। কিন্তু আমাদের ছেলেমেয়েরা নিজ নিজ ভাষায় পড়ার সুযোগ পায় না। সরকারের কাছে অনুরোধ, আমাদের নিজ ভাষায় বইপুস্তক প্রণয়ন করা হোক। অন্তত পক্ষে প্রাথমিক পর্যায়ের স্কুলগুলোতে যেন শিগগিরই এটা চালু হয়। নবাবগঞ্জ উপজেলার সহকারী শিক্ষা অফিসার ওহেদুজ্জামান সরকার জানান, এ উপজেলায় ১শ’ ৪৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে ১ হাজার ৫০ জন আদিবাসী শিশু শিক্ষার্থী রয়েছে। তবে একটি বিদ্যালয়েও আদিবাসী শিশুদের জন্য নিজ ভাষার পাঠ্যপুস্তক নেই। এখন পর্যন্ত তা সরবরাহ করা হয়নি। ভবিষ্যতে আদিবাসীরা যেন নিজ ভাষায় পড়তে পারে, সে ব্যবস্থা বর্তমান সরকার করবে বলেই আশাবাদী তিনি।
×