ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্বস্তি ফিরেছে, পছন্দের বই সংগ্রহের এখন সময়

প্রকাশিত: ১০:৪৬, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

স্বস্তি ফিরেছে, পছন্দের বই সংগ্রহের এখন সময়

জনকণ্ঠ ফিচার ॥ স্বস্তি ফিরেছে মেলায়। গত কয়েকদিন শুধু ভিড় বাড়াতে যারা এসেছিলেন, একটু বোধ করি ক্লান্ত হয়েছেন তারা। মেলামুখো হননি। আয়োজনের ১৬তম দিনে শনিবার এ অংশটি, বলা চলে, অনুপস্থিত ছিল। সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন বইপ্রেমীরা। যেটুকু ভিড় ছিল তাতে বই দেখায় তেমন অসুবিধে হয়নি। ফলে আপন মনে স্টল ও প্যাভিলিয়ন ঘুরে বই সংগ্রহ করেছেন তারা। দুপুরের দিকে মেলায় প্রবেশ করে সন্ধ্যায় ফেরার সময় পর্যন্ত এমন দৃশ্য দেখা গেছে। এদিন বেলা ১১টায় খুলে দেয়া হয় মেলার প্রবেশদ্বার। এ সময় শিশুপ্রহরের নানা আয়োজনে মুখরিত ছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা শিশু চত্বর ঘুরে বেড়িয়েছে। বাবা মায়ের হাত ধরে যেতে যেতে এই স্টলের সামনে থেমেছে। ওই স্টলের বই হাতে নিয়ে ছবি দেখেছে। এভাবেই চলে যায় প্রথমার্ধ। বিকেলে নতুন চেহারা পায় মেলা। এবার বড়দের উপস্থিতিই বেশি। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং উদ্যান উভয় অংশেই ছোটাছুটি করছিলেন বইপ্রেমীরা। না, সবাই তো আর বইপ্রেমী হতে পারেন না। অন্যরাও ছিলেন। তবে বইপ্রেমীর সংখ্যা এদিন বেশি ছিল বলেই মনে হয়েছে। কারণও আছে। মেলা পূর্ণ যৌবন পার করছে এখন। ভাল ভাল বইয়ের অধিকাংশই এসে গেছে। এখন সংগ্রহের সময়। বই সংগ্রহে মন দিয়েছেন পাঠক। নির্বাচিত বই ॥ বই সংগ্রহের মূল সময়ে এসে একটা সমস্যায় অনেকেই পড়ছেন। ভাল বইয়ের তথ্য তালাশ করতে সময় চলে যাচ্ছে তাদের। এ অবস্থায় অনুসন্ধিৎসু পাঠকদের জন্য কিছু নির্বাচিত বইয়ের নামধাম উল্লেখ করা যেতে পারে। অসংখ্য বই থেকে নির্বাচিত কিছু বইয়ের কথা বলা যাক আজ। এই যেমনÑ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আগামী থেকে মেলায় এসেছে জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের প্রবন্ধ সংকলন ‘ভাষাতাত্ত্বিক প্রবন্ধাবলি।’ বিভিন্ন একাডেমিক পত্রিকায় এসব বিশ্লেষণধর্মী লেখা ছাপা হয়েছে। প্রবন্ধগুলোর নির্বাচিত সংকলন এ বই। একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে বের হয়েছে সত্তরের দশকের অন্যতম জনপ্রিয় কবি আবিদ আনোয়ারের কাব্যগ্রন্থ ‘ধলপহরের পদাবলি।’ বহু প্রিয় কবিতার জনককে আরও একবার সামনে এনেছে আগামী। আধুনিক কবিতার নামে যা তা লেখার বিপরীতে প্রকৃত স্বাদ দিতে পারে এ কাব্যগ্রন্থ। জার্নিম্যান বুকস প্রকাশ করেছে ‘লালনের ঈশ্বর ও অন্যান্য।’ লেখক আবুল আহসান চৌধুরী। গত পঞ্চাশ বছর ধরে নানা দৃষ্টিকোণ থেকে সাধক পুরুষ লালন সাঁইকে দেখার চেষ্টা করেছেন তিনি। আবিষ্কারের করার চেষ্টা করেছেন। এবারের বইটিতে প্রায় অচর্চিত বা কম চর্চিত কিছু বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে। সেদিক থেকে যথেষ্ট নতুনত্ব রয়েছে। সংগ্রহ করার মতো একটি বই। অন্যপ্রকাশ থেকে অনেক আগেই মেলায় এসেছে বর্তমান সময়ের অত্যন্ত জনপ্রিয় কথাশিল্পী হরিশংকর জলদাসের উপন্যাস ‘প্রস্থানের আগে।’ লেখকের নামের প্রতি এতদিনে যে আস্থা তৈরি হয়েছে, তার প্রভাব পড়েছে বই বিক্রিতেও। ভাল বিক্রি হচ্ছে উপন্যাসটি। বইয়ের পরিচিতি পর্বে বলা হয়েছেÑ ভাষা সহজ। ভারহীন, ভানমুক্ত। এই উপন্যাসটি পাঠকের কাহিনী- তৃষ্ণা মেটাবে। বাস্তবে তাই হওয়ার কথা। উৎস প্রকাশন থেকে এসেছে ‘সিলেটি নাগরীলিপি সাহিত্যের ইতিবৃত্ত।’ লেখক মোস্তফা সেলিম। মূলত প্রকাশক। লেখেনও ভাল। গবেষণাধর্মী কাজে বিশেষ সময় দিয়ে থাকেন। এর আগে তার প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে সিলেটের প্রাচীন নাগরীলিপিতে লেখা বইয়ের একটি সিরিজ প্রকাশিত হয়। বিস্মৃত প্রায় লিপিতে লেখা সাহিত্যকর্ম উদ্ধার এবং ছাপার ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রশংসিত হন মোস্তফা সেলিম। সে ধারাবাহিকতায় এসেছে নতুন বইটি। অপেক্ষাকৃত সহজ ভাষায় নাগরীলিপি সাহিত্যের ইতিহাস তুলে ধরার প্রয়াস লক্ষ্য করা যায় বইতে। পাঞ্জেরী থেকে এবারের মেলায় এসেছে সুসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের বই ‘গল্পের নদীতে খেয়াঘাট।’ সহজ আর ঝরঝরে ভাষায় লেখা ২২টি গল্প বইতে স্থান পেয়েছে। গল্পগুলো পড়তে পড়তে বাংলাদেশটাকে আরও জানা যাবে বলেই মনে হয়েছে। ২০৬ নতুন বই ॥ মেলার ১৬তম দিনে নতুন বই এসেছে ২০৬টি। ‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন প্রকাশিত গ্রন্থ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন আসাদ মান্নান, শাকুর মজিদ, পাপীয়া জেরিন, আবদুল্লাহ আল ইমরান, মাহফুজ রিপন। মেলা মঞ্চের সেমিনার ॥ এদিন মেলা মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘চিত্রশিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীর : শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মইনুদ্দীন খালেদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ফরিদা জামান, নিসার হোসেন এবং মলয় বালা। সভাপতিত্ব করেন শিল্পী হাশেম খান। প্রাবন্ধিক বলেন, শিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীর পঞ্চাশের দশকের নিরীক্ষানিষ্ঠ শিল্পীদের মধ্যে স্বাতন্ত্র্যের বৈশিষ্ট্যে সুচিহ্নিত। তার জীবন-পাঠ ও শিল্পকৃতির বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন সময়ের আরও আবর্তনে স্পষ্টতা পাবে। তার শিল্প নিয়ে আজও তেমন গবেষণা হয়নি। যদিও তিনি পঞ্চাশের প্রজন্মের শিল্পীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক একক প্রদর্শনী করেছেন। তিনি বলেন, সৈয়দ জাহাঙ্গীর শুধু শিল্পী নন, কর্মবীরও। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিভাগে তিনি দীর্ঘদিন পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তার দায়িত্ব পালনের সময়ই এ বিভাগ যেন শৈশব থেকে তারুণ্যে উন্নীত হয়েছে। চারুকলা বিভাগে দায়িত্বকালে সৈয়দ জাহাঙ্গীর দেশের প্রধান শিল্পীদের একক প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন। কর্মবীর এ মানুষটির একটি বড় অর্জন এশীয় দ্বিবার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনীর আয়োজন। এ আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর ফলে এদেশের শিল্পী ও শিল্পানুরাগী দর্শক বিভিন্ন দেশের ছবি দেখার এক বিরল সুযোগ লাভ করেছেন। এ শৈল্পিক আয়োজন আমাদের শিল্পচর্চাতেও এনেছে বিশেষ অভিঘাত। আলোচনায় অংশ নিয়ে অন্য বক্তারা বলেন, সৈয়দ জাহাঙ্গীর বাংলাদেশের চিত্রশিল্পের জগতে এক অনন্য নাম। তার চিত্র কাজে বাংলাদেশের ভূবৈচিত্র্য অসামান্য শৈল্পিক ব্যঞ্জনায় অভিষিক্ত হয়েছে। সৈয়দ জাহাঙ্গীরের আত্মজীবনী স্মৃতির মানচিত্র বাংলাদেশের পঞ্চাশ দশকের শিল্পসাহিত্য জগতের এক বিশ্বস্ত ভাষ্য। সভাপতির বক্তব্যে হাশেম খান বলেন, সৈয়দ জাহাঙ্গীর বাংলাদেশের শিল্পকলা আন্দোলনে এক অবিস্মরণীয় নাম। শুধু চিত্রশিল্পে নয়, এদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনেরও তিনি এক অগ্রণীজন। তার মানুষ ও মৃত্তিকালগ্ন শিল্পকাজ এবং অঙ্গীকার জাতি চিরকাল শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ॥ এদিন মেলা মঞ্চে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ করেন কবি কাজী রোজী এবং মারুফ রায়হান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী মুস্তাফা ওয়ালিদ এবং কাজী মাহতাব সুমন। নৃত্য পরিবেশন করেন মৈত্রী সরকারের পরিচালনায় নৃত্যসংগঠন ‘স্বপ্নবিকাশ কলা কেন্দ্র’-এর নৃত্যশিল্পীবৃন্দ। সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী লীনু বিল্লাহ, চম্পা বণিক, বশিরুজ্জামন সাব্বির, প্রিয়াংকা বিশ্বাস, অপু আমান।
×