ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শেষ উইকেটে ৭৮ রানের জুটি, ১ উইকেটের অবিশ্বাস্য হার প্রোটিয়াদের

কুসলের অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে ঐতিহাসিক জয় শ্রীলঙ্কার

প্রকাশিত: ১০:৪৭, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

কুসলের অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে ঐতিহাসিক জয় শ্রীলঙ্কার

মোঃ মামুন রশীদ ॥ কিংসমিড তৈরি হচ্ছিল স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার আরেকটি সুনিশ্চিত জয়ের উৎসবে মেতে ওঠার জন্য। বিশ্বব্যাপী যারাই শনিবার ডারবান টেস্টের চতুর্থদিনে খেলার দিকে লক্ষ্য রাখছিলেন তারাও প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন সম্প্রতিক সময়ে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কার পরাজয় সম্পর্কে। কারণ ৩০৪ রানের জয়ের লক্ষ্যে নেমে ২২৬ রানেই ৯ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল সফরকারীরা। কিন্তু সবাইকে চমকে দিলেন কুসল পেরেরা আর বিশ্ব ফার্নান্দো। দশম উইকেটে ৭৮ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে শ্রীলঙ্কাকে ১ উইকেটের অবিস্মরণীয় জয় এনে দিয়েছেন তারা দু’জন। যে কোন দলের বিজয়ী ম্যাচে দশম উইকেটে এটিই সর্বোচ্চ রানের জুটি। আর বিদেশের মাটিতে এই প্রথম চতুর্থ ইনিংসে এত রান তাড়া করে জিতল লঙ্কানরা। দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলা ১৪ টেস্টে এটি ২০১১ শলের পর দ্বিতীয় জয় শ্রীলঙ্কার। দলীয় এ রেকর্ডগুলো হয়েছে কুশলের রেকর্ড শতকে। চতুর্থ ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম এশিয়ান হিসেবে শতক যেমন পেয়েছেন তেমনি প্রোটিয়া ভূমিতে দলকে জেতাতে টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১৫৩ রানের অপরাজিত ইনিংসটিও খেলেছেন কুসল। এটি তার ক্যারিয়ারেরও সেরা। ডারবান টেস্টের প্রথমদিন থেকেই পেশরদের দাপটে কোন দলই বড় সংগ্রহ গড়তে পারেনি। এরপরও স্বাগতিক দল অভ্যস্ত কন্ডিশনে তুলনামূলকভাবে ভাল খেলে ৩০৪ রানের বিশাল এক টার্গেট দিয়েছিল শ্রীলঙ্কাকে। তৃতীয়দিন শেষে ৮৩ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে চাপের মুখেই ছিল সফরকারীরা। চতুর্থদিনের শুরুতেই ওশাদা ফার্নান্দো (৩৭) আর নিরোশান ডিকভেলার (০) উইকেট দ্রুত তুলে নিয়ে লঙ্কানদের তাঁবুতে পরাজয়ের ডঙ্কা বাজিয়ে দেন বিধ্বংসী ডেল স্টেইন। তবে ষষ্ঠ উইকেটে কুসল ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ৯৬ রানের জুটি গড়ে লঙ্কানদের আবারও ঠিক পথে ফিরিয়ে আনেন। তবে ধনঞ্জয়া ৭৯ বলে ৬ চারে ৪৮ রান করার পর কেশব মহারাজের স্পিনে এলবিডব্লিউ হয়ে গেলে আবারও পরাজয়ের শঙ্কা জেগে ওঠে। সেই আশঙ্কার মেঘ আরও ঘনীভূত হয় মাত্র ২০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলাতে। তবে কুসল পেরেরা ছিলেন এর ব্যতিক্রম। বেশ আক্রমণাত্মক মনোভাব নিয়ে খেলে তিনি তখন ১৩২ বলে ৮৬ রানে ছিলেন অপরাজিত। অন্যরা তাকে সঙ্গ দিতে না পারাতেই নিশ্চিত পরাজয় দেখতে পাচ্ছিল লঙ্কানরা। কুশলের যে সঙ্গটা প্রয়োজন ছিল তা যেমন উপলব্ধি করেছেন পেস বোলার বিশ্ব ফার্নান্দো। অথচ সেই ফার্নান্দোর ৫৮টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলে ব্যাট হাতে সর্বোচ্চ রান ৩৫। এদিনও তিনি খুব বেশি রান করলেন না, তবে যেটা দরকার ছিল সেটিই করেছেন। দারুণ শবলীলভাবে ব্যাট চালিয়ে যাওয়া কুসলকে দিয়েছেন বারবার স্ট্রাইক। সেই সুযোগে ১৪৬ বলেই ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন কুসল। আর দলকেও এগিয়ে নিতে থাকেন অভীষ্ট লক্ষ্যে। শেষ পর্যন্ত ২৭টি বল খেলে ৬ রানে অপরাজিত থেকেছেন বিশ্ব, আর তাতে শ্রীলঙ্কাকে বিশ্বজয়ের আনন্দ উপহার দিয়েছেন কুসল। ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস খেলে তিনি ২০০ বলে ১২ চার, ৫ ছক্কায় ১৫৩ রানে অপরাজিত থাকেন। এটি দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে চতুর্থ ইনিংসে প্রথম এশিয়ান হিসেবে শতকের রেকর্ড। তবে সবমিলিয়ে মাত্র ১২টিই আছে প্রোটিয়া মাটিতে শেষ ইনিংসে সেঞ্চুরি। রানের হিসেবে সেখানে কুশলের স্থান চারে। তবে যে কোন দলের জয়ী ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এটিই সর্বোচ্চ আর যে কোন দলের বিপক্ষে বিজয়ী ম্যাচে টেস্ট ইতিহাসের দশম স্থানে। অবশ্য এশিয়ান কোন ক্রিকেটার হিসেবে এক্ষেত্রে দুইয়ে কুসল। এর আগে ২০১৫ শলের জুলাইয়ে পাকিস্তানের ইউনুস খান পাল্লেকেলেতে এই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই অপরাজিত ১৭১ রান করেছিলেন। শেষ উইকেটে ৭৮ রানের অবিশ্বাস্য জুটিতে ১ উইকেটের জয় তুলে নেয় শ্রীলঙ্কা। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে রান তাড়া করে জেতার ক্ষেত্রে এটি চতুর্থ সর্বোচ্চ। এর আগের তিনটিই অস্ট্রেলিয়ার দখলে (৩৩৬, ৩৩৪ ও ৩১০)। তবে এশিয়ান কোন দলের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ রান তাড়া করার রেকর্ড দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে পরে ব্যাট করে শুধু পাকিস্তানই জিতেছিল এশিয়ান দলগুলোর মধ্যে। তারা ২০০৭ শলে পোর্ট এলিজাবেথে ১৯১ রান তাড়া করে ৫ উইকেটে জিতেছিল। আর শ্রীলঙ্কার রান তাড়া করে জেতার ক্ষেত্রে এটি তাদের চতুর্থ সর্বোচ্চ লক্ষ্য স্পর্শ করা। তাদের সেরা রান তাড়া করার রেকর্ড জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে। ২০১৭ শলের জুলাইয়ে কলম্বোয় ৩৯১ রান তাড়া করে তারা ৪ উইকেটে জিতেছিল। তবে বিদেশের মাটিতে এটিই তাদের সেরা রান তাড়া করার রেকর্ড। দলীয় রেকর্ডগুলো হয়েছে শেষ উইকেটে ৭৮ রান যোগ হওয়াতে। পরে ব্যাট করে জেতা ম্যাচে শেষ উইকেটে এটি শ্রীলঙ্কার রেকর্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যে কোন দলের ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ড জুটি। এর আগে ইনজামাম উল হক ও মোহাম্মদ আসিফ দশম উইকেটে ৭৪ রানের রেকর্ড জুটি গড়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২০০৭ শলে পোর্ট এলিজাবেথে। আর চতুর্থ ইনিংসের ক্ষেত্রে যে কোন দেশের জন্যই রান তাড়া করে জেতা ম্যাচে দশম উইকেটে এটি সর্বোচ্চ জুটি। স্কোর ॥ দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংস- ২৩৫/১০; ৫৯.৪ ওভার (কক ৮০, বাভুমা ৪৭, প্লেসিস ৩৫; বিশ্ব ৪/৬২, রাজিথা ৩/৬৮) ও দ্বিতীয় ইনিংস- ২৫৯/১০; ৭৯.১ ওভার (প্লেসিস ৯০, কক ৫৫, এলগার ৩৫; আম্বুলদেনিয়া ৫/৬৬, বিশ্ব ৪/৭১)। শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংস- ১৯১/১০; ৫৯.২ ওভার (কুসল ৫১, করুনারত্নে ৩০; স্টেইন ৪/৪৮, ফিল্যান্ডার ২/৩২, রাবাদা ২/৪৮) ও দ্বিতীয় ইনিংস- ৩০৪/৯; ৮৫.৩ ওভার (কুসল ১৫৩*, ধনঞ্জয়া ৪৮, ওশাদা ৩৭; মহারাজ ৩/৭১, অলিভিয়ের ২/৩৫, স্টেইন ২/৭১)। ফল ॥ শ্রীলঙ্কা ১ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ কুসল পেরেরা (শ্রীলঙ্কা)। সিরিজ ॥ ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে শ্রীলঙ্কা ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে।
×