ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ॥ প্রেরণার মশাল ‘স্ফুলিঙ্গ’

প্রকাশিত: ১১:৪৩, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ॥ প্রেরণার মশাল ‘স্ফুলিঙ্গ’

কোন এক আগুনের শিখা হতে নিরন্তর আগুনের ফুলকি ছড়িয়ে পড়ছে। আর সেই ফুলকি চারদিকের সমস্ত অন্ধকারকে ধুয়ে মুছে আলোকিত করছে। যে আলো কখনও শেষ হবার নয়। জ্বলছে এবং জ্বলবেই অনন্তকাল। বলছিলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত এমনি এক স্মৃতিস্তম্ভের নিদর্শন ‘স্ফুলিঙ্গের’ কথা। যে স্মৃতিস্তম্ভটি স্মরণ করিয়ে দেয় এক মহান শিক্ষকের আত্মত্যাগের কথা। বাংলাদেশের ইতিহাসে যিনি এক অনন্য নাম ড. শামসুজ্জোহা। লাখো, কোটি শিক্ষার্থীদের যিনি প্রেরণার উৎস। যিনি নিজ ছাত্রদের রক্ষা করতে পাকসেনাদের বুলেটের সামনে বুক পেতে দিতে কুণ্ঠাবোধ করেননি। নিজের জীবনের বিনিময়ে রেখে গেছেন এক অনান্য দৃষ্টান্ত। যিনি তার প্রিয় শিক্ষার্থীদের নরপিশাচ পাকসেনাদের কাছ থেকে রক্ষা করার নির্মিতে দৃঢ় কণ্ঠে বলেছিলেন ‘কোন ছাত্রের গায়ে গুলি লাগার আগে আমার গায়ে যেন গুলি লাগে।’ দৃঢ়চেতা এ কথাগুলোর মধ্য থেকেই বোঝা যায় একজন শিক্ষক হিসেবে নিজ দায়িত্বের প্রতি কতটা শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে এমন শিক্ষকের সংখ্যা হাতেগোনা। মেধা, মনন আর ভালবাসা দিয়ে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য জীবন দিয়ে দেয়া মানুষের সংখ্যা নিতান্তই কম। তাদেরই মধ্যে অন্যতম ড. শামসুজ্জোহা। যিনি ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী। ৬৯‘র গণঅভুত্থানে ১৮ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে পুলিশের দেয়া ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাস্তায় নেমে আশে আপামর ছাত্র-জনতা। সেদিন বসে থাকেনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। ক্ষিপ্ত পুলিশ সদস্যরা ছাত্রদের ওপর গুলি করার জন্য প্রস্তুতি নেয়। তখনই এগিয়ে আসেন তৎকালীন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. শামসুজ্জোহা। তিনি ছাত্রদের গুলি না করার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু শোনেননি পাক সরকারের পুলিশ বাহিনী। এক পর্যায়ে শামসুজ্জোহাকেই গুলি করে পুলিশ। আর এভাবেই নিজের জীবন দিয়ে ছাত্রদের রক্ষা করেন মহান শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহা। লক্ষ ছাত্রদের পথ চলার অনুপ্রেরণা, ছাত্রদের অধিকার আদায়ে নিজ জীবনকে উৎসর্গ করা শহীদ ড. শামসুজ্জোহা। যার আত্মত্যাগের বিনিময়ে স্বাধিকার আন্দোলনে যুক্ত হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। মহান এ শিক্ষকের স্মৃতি রক্ষার্থে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১২ সালে নির্মিত হয় স্মৃতিস্তম্ভটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজোহা হলের মূল ফটকের পাশের পুকুর পাড়ে চারুকলা বিভাগের সাবেক সভাপতি কনক কুমার পাঠকের হাতে নির্মিত ভাস্কর্যটি যেন আলোর কথায় বলে। ড. শামসুজ্জোহা ও ‘স্ফুলিঙ্গ’ সস্পর্কে ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী এবং শহীদ শামসুজ্জোহা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘জোহা স্যারের মহান আত্মত্যাগ ও ছাত্রদের প্রতি তার যে ভালবাসা ছিল তা কখনও ভুলবার নয়। আর স্ফুলিঙ্গ তার স্বাক্ষরকেই বহন করছে। তরুণ প্রজন্মের কাছে এটি যুগ যুগ ধরে অনুপ্রেরণা দিবে আর জোহা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী হিসেবে সবসময় স্যারের আত্মত্যাগ ও ভালভাসার কথা স্মরণ করে নিজেকে গর্বিত মনে হয়।’ এ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী হিসেবে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করে তিনি আরও বলেন, ‘সবসময় স্যারের ভালবাসা আর আত্মত্যাগ আমাকে অনুপ্রাণিত করে। তিনি তার জীবন দিয়ে আমাদের প্রতি যে অগাধ ভালবাসা প্রমাণ করে গেছেন সে ঋণ আমরা কখনও শোধ করতে পারব না। স্ফুলিঙ্গ তার স্মৃতিকেই ধরে রাখবে। তবে সরকারের প্রতি দাবি একটিই ১৮ ফেব্রুয়ারিকে যেন শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তাহলেই আমরা আমাদের এই মহান শিক্ষককে যথাযথ মর্যাদা দিতে পারব বলে মনে হয়।’ এমনটিই মনে করেন শহীদ শামসুজ্জোহা হলের আরেক আবাসিক শিক্ষার্থী জয় চন্দ্র সাধু। এছাড়া ‘আলোর পথ নির্দেশ হয়ে মাথা উঁচু করে প্রেরণার মশাল হয়ে থাকবে এই স্মৃতিস্তম্ভটি বলে মনে করেন এই শিক্ষার্থী।’
×