ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দিনাজপুরে ফসলী জমির উপর ইটভাটা

প্রকাশিত: ০১:৩২, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

দিনাজপুরে ফসলী জমির উপর ইটভাটা

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ দিনাজপুরের ‘শস্যভান্ডার’ বলে খ্যাত সদর উপজেলার ঘুঘুডাঙ্গা গ্রামে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই ফসলি জমিতে নির্মান করা হচ্ছে ইটভাটা। এই ভাটা নির্মাণে নেয়া হয়নি কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের কোন অনুমতি। ইট ভাটা নির্মান করা হলে এর আশপাশের কয়েক শ’ একর আবাদী জমি চাষাবাদের ক্ষমতা হারাবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। একই সাথে পরিবেশেরও মারাত্মক ক্ষতি হবে। দিনাজপুর সদর উপজেলার ৬নং ইউনিয়নে অবস্থিত ঘুঘুডাঙ্গা গ্রাম। এলাকাটি ঘুরে দেখা গেছে, দিগন্তজোড়া ধানসহ বিভিন্ন সবজীর উর্বরা জমি। এখন সেই উর্বরা জমিতে নির্মান করা হচ্ছে ইটভাটা। শ্রমিকরা পুরোদমে নির্মান কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। নির্মিত ইটভাটার পাশেই চলছে জমিতে বোরো রোপন-এর কাজ। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এই ইটভাটা নির্মান করতে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ছাড়পত্র নেয়নি ইটভাটা কর্তৃপক্ষ। নেয়া হয়নি কৃষি বিভাগেরও কোন অনুমতি। এমনকি জেলা প্রশাসনের কোন অনুমতি নেয়নি। স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেছেন, ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে ভাটা মালিক ফসলী জমিতে এই নির্মান কাজ করছেন। স্থানীয় কৃষক জমির উদ্দীন বলেন, ইটভাটা নির্মান হলে আমাদের ফসলী জমি নষ্ট হয়ে যাবে। ইটভাটার আশপাশে রয়েছে কয়েক শ’ একর আবাদী জমি। যেখানে ধান, গম, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি ফলানো হয়। ইটভাটা চালু হলে আমরা চরম বিপদে পড়বো। তিনি জানান, নির্মানাধীন ইটভাটার মালিক প্রভাবশালী এবং ক্ষমতাসীন দলের লোক হওয়ায়, ভয়ে এই কাজের কেউ প্রতিবাদ করতে পারছেন না। ইটভাটার ম্যানেজার মমিনুল ইসলাম জানান, মালিকের নির্দেশে ইটভাটা নির্মানের কাজ চলছে। চিমনির কাজ শেষ হলে আগামী মৌসুম থেকে ইট তৈরী শুরু হবে। ইটভাটার মালিক মোঃ মহসিন আলী জানান, তিনি পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ছাড়পত্র এখনও পাননি। তবে তা কয়েকদিনের মধ্যে পেয়ে যাবেন বলে তিনি দাবী করেন। কৃষি বিভাগের ছাড়পত্রও এ মাসেই পেয়ে যাবেন বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, ‘এমআর ব্রিকস’ নামে এই নতুন ভাটার জন্য জেলা প্রশাসনে টাকা জমা দেয়া হয়েছে। দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মোহাম্মদ শামীম জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে এমআর ব্রিকস নামক ইটভাটার কোন ছাড়পত্র দেয়া হয়নি। ফসলী জমিতে ইটভাটা নির্মান হলে আশপাশের সফলের অনেক ক্ষতি হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর রংপুর কার্যালয়ের পরিদর্শক কাজী সাইফুদ্দিন জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না নিয়ে ফসলী জমিতে ইট ভাটা নির্মান শাস্তিযোগ্য অপরাধ। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়েই ইটভাটা নির্মানের কাজ করতে হবে। ইটভাটার ধোঁয়ার ফলে আশপাশের পরিবেশের ক্ষতি হবে। কৃষি বিভাগ থেকে অনাবাদি জমির প্রত্যয়ন না দিলে পরিবেশগত ছাড়পত্র প্রদানের প্রশ্নই আসে না। দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ জয়নুল আবেদীন জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না নিয়ে ইটভাটা নির্মান দন্ডনীয় অপরাধ। তদন্ত করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×