ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

যে কোন মূল্যে দুর্নীতি দমন করতে হবে ॥ আইনমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১০:০৪, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

 যে কোন মূল্যে দুর্নীতি দমন করতে  হবে ॥ আইনমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, এদেশে আর দুর্নীতি হতে দেয়া যায় না। কারণ দুর্নীতি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ও চেতনাকে আঘাত করেছে। দুর্নীতি দেশের উন্নয়নকে ব্যাহত করেছে। দুর্নীতি সামাজিক অবক্ষয় ও সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। দুর্নীতির কারণে অনেক পেশা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে সে পেশার আদর্শ ও নৈতিকতা। তাই যে কোন মূল্যে আমাদের দুর্নীতি দমন করতে হবে। রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম আয়োজিত ‘দুর্নীতিবিরোধী অভিযান ও নেতৃত্বের সাফল্য’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বাংলাদেশে মূলত ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে বঙ্গবন্ধুসহ তাঁর পরিবারকে নৃশংসভাবে হত্যার পর থেকে দুর্নীতির ডালপালা মেলতে শুরু করে। এরপর প্রায় দুই দশকে দুর্নীতি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করে। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে দেশে দুর্নীতির মাত্রা চরম আকার ধারণ করে। ওই সময়ে বাংলাদেশ পরপর পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়। ফলে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে পরিচিত হয়। এমন প্রেক্ষাপটে ২০০৯ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা জনগণের বিপুল ভোটে সরকারের দায়িত্ব পেলে তিনি এই দুর্নাম ঘোচানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন। দুর্নীতি বিরোধী অস্ত্র নামে খ্যাত তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন করেন। এক্সেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্প গ্রহণ করেন। জনগণকে অল্প সময়ে, সহজে ও অল্প ব্যয়ে নাগরিক সেবা দেয়ার জন্য ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের কার্যক্রম গ্রহণ করেন। সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্য তাদের বেতন-ভাতা প্রায় দ্বিগুণ হারে বাড়িয়ে দেন। দুর্নীতি দমন কমিশনকে সক্রিয় করান এবং দুর্নীতিবাজদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করান। তার সরকারের এরকম বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার ফলে দুর্নীতির পথগুলো ক্রমান্বয়ে সঙ্কুচিত হচ্ছে এবং দুর্নীতির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। বিশে^ বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে। তিনি বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে আমাদের সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্য সর্বক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। কারণ সবকিছু ডিজিটাল হলে দুর্নীতি এমনিতেই কমতে থাকবে। তাই সরকারী-বেসরকারী অফিসগুলো যাতে তাদের সবকিছু ডিজিটাইজড করে সে ব্যাপারে সরকারের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনেরও দৃষ্টি দেয়া উচিত। মন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি দমনে রাজনৈতিক সদিচ্ছাও থাকতে হবে যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার দেখাচ্ছেন। জনগণের মন- মানসিকতা দুর্নীতি প্রতিরোধে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তাই মানুষের মনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হবে। এক্ষেত্রে শুধু জ্ঞান দিয়ে কাজ হবে না। এজন্য মানুষকে যুক্ত করতে হবে, নতুবা কোন কাজেই সাফল্য আসবে না। দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরও শক্তিশালী ও কৌশলী হতে হবে। মন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি দমনে তথ্য অধিকার আইন সম্পর্কে জনগণকে আরও সচেতন করতে হবে এবং এ আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে। কারণ এ আইন অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করে এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের সকল স্তরে স্বচ্ছতা আনয়ন, জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ ও দুর্নীতি হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এই আইন জনগণকে ক্ষমতায়িত করেছে। জনগণের তথ্য জানার অধিকারকে আইনগত স্বীকৃতি দিয়েছে। তাই এই আইনের সঠিক প্রয়োগে দুর্নীতি কমানো সম্ভব। বলেন, দুর্নীতি দমনে তথ্য প্রদানে সরকারী তথ্য ভা-ার গড়ে তোলা যেতে পারে। সেই সঙ্গে ছবিযুক্ত জাতীয় পরিচয়পত্র, ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও স্বাক্ষর যুক্ত ডাটাবেসের ব্যবহার বাড়াতে হবে। দুর্নীতিবাজদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। শুধু দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দিয়ে সম্ভব নয়, এ জন্য প্রয়োজন গণসচেতনতা, দেশপ্রেম এবং তারুণ্যের অঙ্গীকার। প্রতিজ্ঞা করতে হবে আমি দুর্নীতি করব না, অন্যকে দুর্নীতি করতে দেব না।
×