ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জুনের মধ্যে প্রতি জেলায় ৩২ হাজার ঘর ॥ দুর্যোগ সহনীয় আবাস

প্রকাশিত: ১০:২৮, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

 জুনের মধ্যে প্রতি জেলায় ৩২ হাজার ঘর ॥ দুর্যোগ সহনীয় আবাস

তপন বিশ্বাস ॥ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সব কার্যক্রমে আরও স্বচ্ছতা আনা হচ্ছে। সারাদেশে গৃহহীনদের ঘর নির্মাণের কর্মসূচী হাতে নিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের কর্মসূচী টেস্ট রিলিফ (টিআর) কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) কর্মসূচীর বিশেষ বরাদ্দের টাকায় এই ঘর নির্মাণ করা হবে। এই নির্মাণ কার্যক্রম স্বচ্ছতার সঙ্গে করার লক্ষ্যে প্রতিটি বিভাগে সরকারী কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে এই কমিটিতে থাকবেন সব জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলাপ্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের মন্ত্রণালয়ের অধিনস্ত কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডাঃ এনামুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, আমি ‘ইনোভেটিভ’ মানুষ। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। টিআর কাবিটার বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে মাঠ পর্যায়ে তেমন একটা উন্নয়ন হয় না। তাই পরিকল্পনা করেছি বিশেষ বরাদ্দের টাকা দিয়ে দেশের গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ করে দেব। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার, খেলাধুলার সরঞ্জামাদি দেয়ার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড বাড়াতে চাই। খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের মধ্যে থাকলে মানসিক বিকাশের পাশাপাশি নতুন প্রজন্ম সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ থেকে মুক্ত থাকবে। তিনি বলেন, আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে দৃশ্যমান উন্নয়নের কথা বলা আছে। তাই আমরা দৃশ্যমান উন্নয়নও করতে চাই। সূত্র জানায়, এখন থেকে টিআর কাবিটার পরিবর্তে এসব কর্মসূচীর অর্থ দিয়ে গৃহহীন পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে। যার নাম দেয়া হয়েছে ‘দুর্যোগ সহনীয় ঘর নির্মাণ’। শীঘ্রই এর কার্যক্রম শুরু হবে। মূলত টিআর ও কাবিটা বরাদ্দ নিয়ে নানা সময়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় এবং মাঠে দৃশ্যমান উন্নয়ন না হওয়ায় এই কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শাহ কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, দুর্নীতি বন্ধ করতে যে কোন কঠিন পদক্ষেপ নিতে আমরা বদ্ধপরিকর। যেসব কর্মসূচী নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে সেগুলো বাতিলের চিন্তাভাবনা করছি। দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্পষ্ট নির্দেশনার প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। সূত্র মতে, প্রতিবছর টিআর খাতে দুইশ’ কোটি টাকা এবং কাবিখা খাতে একশ’ কোটি টাকা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে বরাদ্দ দেয় অর্থ বিভাগ। তাই এমপিদের বরাবরে টিআর ও কাবিটা বরাদ্দ না দিয়ে সেই অর্থে বছরে ৬৪ জেলায় ৬৪ হাজার ঘর নির্মাণ করে দেবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে এ বছরের জুনের মধ্যে প্রতি জেলায় পাঁচশ’ অর্থাৎ ৬৪ জেলায় ৩২ হাজার ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে। এরপর ডিসেম্বরের মধ্যে ৬৪ জেলায় আরও ৩২ হাজার সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে। সব মিলিয়ে এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ৬৪ জেলায় ৬৪ হাজার ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে। চারশ’ বর্গফুটের সেমিপাকা প্রতিটি ঘরে দুইটি রুম, দু’টি বারান্দা, একটি বাথরুম ও একটি রান্নাঘর থাকবে। এতে প্রাথমিক খরচ ধরা হয়েছে ঘরপ্রতি দেড় লাখ টাকা। যাদের জমি আছে কিন্তু ঘর নেই তাদের বিষয়টি প্রথমেই চিন্তা করবে মন্ত্রণালয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, স্থানীয় পর্যায়ে গৃহহীন ঠিক করবেন জনপ্রতিনিধিরা। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা সদস্যরা গৃহহীনদের তালিকা পৌঁছে দেবেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের কাছে। এরপর ওই তালিকা অনুযায়ী ইউএনওরা ব্যবস্থা নেবেন। আগামী পাঁচ বছর এই কার্যক্রম চালালে সারাদেশে তিন লাখের বেশি ঘর নির্মাণ করা যাবে। এতে আর কেউ গৃহহীন থাকবে না, মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। সূত্র জানায়, গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের কর্মসূচী হচ্ছে টিআর। বিভিন্ন সময় গ্রামে কাজের সুযোগ কমে যায়। এ সময় গ্রামের বেকার হয়ে পড়া মানুষের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা দেয়ার জন্য টিআর কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হয়। রাস্তা সংস্কার, বাঁশের সাঁকো তৈরি, নালা-নর্দমা খনন ও সংস্কার, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন করা হয় এ কর্মসূচীর মাধ্যমে। তবে এসব কাজ ঠিকভাবে না হওয়ার অভিযোগ অনেক পুরনো। এর আগে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত বছরের মার্চে প্রাক-বাজেট আলোচনায় টিআর, কাবিটা বন্ধের প্রস্তাব করেন। সে সময় বিভিন্ন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিসহ অনেকেই তার এ প্রস্তাব সমর্থন করেন। ওই বৈঠকে অর্থমন্ত্রী বলেন, টিআর কাবিটা কর্মসূচীতে সবচেয়ে বেশি চুরি হয়। তাই এখনই টিআর কাবিটা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুও টিআর, কাবিটা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকদের বলেন, টিআর কাবিটা কর্মসূচীতে কোটি কোটি টাকা চুরি হচ্ছে। বরাদ্দের কিছুই সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছে না। এমপি আমলা ও ইউপি চেয়ারম্যানরা এ খাতে চুরির চক্র তৈরি করেছেন। এটাকে দূর করতে হবে। মন্ত্রীদের কথাবার্তার পরও টিআর, কাবিটা কর্মসূচী বন্ধ হয়নি। দেরিতে হলেও টিআর কাবিটা বিশেষ বরাদ্দ বাতিলের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতি সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যে কোন দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় চাল, জিআর, তাঁবু মজুদ রয়েছে, কেনা হয়েছে দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার যন্ত্রপাতি। স্কাউট, গার্লস গাইডসসহ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ৫০ হাজারের মতো স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে রোহিঙ্গা এখন কোন চ্যালেঞ্জ নয়। তাদের জন্য প্রয়োজনীয় খাবার, ল্যাট্রিন প্রস্তুত করা হয়েছে। তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন তাদের প্রত্যাবর্তন নিয়ে কাজ চলছে। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজে কাজ করছেন। জাতিসংঘে তিনি পাঁচ দফা দাবিও রেখেছেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আলোচনা চলছে। পাশাপাশি জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থাও এ নিয়ে কাজ করছে।
×