ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীর মধ্যাঞ্চলে কাল গ্যাস থাকবে না

প্রকাশিত: ১০:৩১, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

 রাজধানীর মধ্যাঞ্চলে কাল গ্যাস থাকবে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মেট্রোরেল নির্মাণের কাজের জন্য রাজধানীর মধ্যাঞ্চলের বড় অংশে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখবে তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানি। শাহবাগে তিতাসের পাইপ লাইন স্থানান্তরের জন্য সন্ধ্যা ৬টা থেকে আমিন এমন আবহাওয়া আজ সোমবারও অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। রবিবার ভোর থেকেই রাজধানীর আকাশে ছিল গুমোট ভাব। অনুভূত হতে থাকে মাঝারি ধরনের শীত। হঠাৎ বৃষ্টির কারণে ভোগান্তিতে পড়ে সকালে স্কুল-কলেজে যাওয়া শিক্ষার্থীরা। এছাড়া জীবিকার তাগিদে চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী ও শ্রমজীবীরা ঘরের বাইরে বের হয়ে বিপাকে পড়েন। বৃষ্টির কারণে যানবাহন কমে যাওয়ায় অনেকেই নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে যেতে পারেননি। বৃষ্টিতে অনেকে কাকভেজা হন। স্কুলগামী ও কর্মজীবীদের গরম কাপড় পরতে দেখা গেছে। সকাল আটটার পর হঠাৎ করে শুরু হয়ে যায় মাঝারি ধরনের বৃষ্টি। পরক্ষণেই বৃষ্টির সঙ্গে পড়তে থাকে ছোট ছোট শিলা। বইতে থাকে ঝড়ো হাওয়া। ছাতা নিয়ে বাইরে বের হওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে। নগরীর এজি চার্চ স্কুলে পৌঁছার আগেই অনেক শিশু ও তাদের অভিভাবকদের ভিজে যেতে দেখা গেছে। অবশ্য আবহাওয়া অধিদফতর ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে রবিবার বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা আগেই জানিয়েছিল। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, ফেব্রুয়ারি মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাবে। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে ১/২ দিন বজ্রঝড় হতে পারে বলে জানায় আবহাওয়া অধিদফতর। নিজস্ব সংবাদদাতা নেত্রকোনা থেকে জানান, রবিবার ভোরে কেন্দুয়া উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়োবৃষ্টিতে দুই গ্রামের কমপক্ষে ৪০টি কাঁচা ঘরবাড়ি ও বেশকিছু গাছপালা বিধ্বস্ত হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে রবিশস্য। তবে বোরো ফসলের ক্ষেত্রে এ বৃষ্টি আশির্বাদ বয়ে এনেছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। বৃষ্টি ও বাতাসের কারণে শীতের তীব্রতা কিছুটা বেড়েছে। রবিবার ভোরে কেন্দুয়া উপজেলার দলপা ইউনিয়নের রামনগর ও আশুজিয়া ইউনিয়নের চান্দপাড়া গ্রামের ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে যায়। ঝড়ের সঙ্গে বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টি হয়। ঝড়ে ওই দুই গ্রামের অন্তত ৪০টি কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল ইমরান রুহুল ইসলাম রবিবার দুপুরে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। নিজস্ব সংবাদদাতা রাঙ্গামাটি থেকে জানান, জেলার শস্য ভা-ার হিসেবে খ্যাত বাঘাইছড়ি উপজেলায় রবিবার দুপুরে প্রচুর শিলাবৃষ্টি হয়েছে। বড় আকারের শিলাবৃষ্টি হওয়ায় মৌসুমি ফসল ও তরমুজের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বোরো ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রবিবার দুপুরে কালবৈশাখীর মতো মেঘ করে শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। শিলাবৃষ্টিতে মৌসুমি ফসল মরিচ, কুমড়া, লাউ পেঁপেসহ নানা রকম ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পুলিশ ও এলাকাবাসী শিলাবৃষ্টিতে ফসল ক্ষতি হওয়ার কথা জানিয়েছেন। নিজস্ব সংবাদদাতা নাটোর থেকে জানান, নাটোরের তিনটি উপজেলায় হঠাৎ শিলাবৃষ্টিতে রবি শস্যসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দশ থেকে পনের মিনিটের শিলাবৃষ্টিতে আম, লিচু, পেয়ারা, পিঁয়াজ, রসুন, বোরো ধান, সরিষা, গম, কালাই, ভুট্টা, সবজি, পান বরজসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও বাড়িঘরের ক্ষতি হওয়াসহ বিভিন্ন পাখি মারা গেছে। ঋণ করে ফসল ফলিয়ে হঠাৎ এই শিলাবৃষ্টিতে যে ক্ষতি হয়েছে তাতে কৃষকের মাথায় হাত পড়েছে। এদিকে শিলাবৃষ্টিতে ২ হাজার ৭৭৪ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। শিলাবৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক রফিকুল ইসলাম জানান, শিলাবৃষ্টিতে ২ হাজার ৭৭৪ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে কৃষি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। কৃষকরা জানান, রবিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে জেলার নলডাঙ্গা, সিংড়া ও সদর উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় হঠাৎ করে শুরু হয় শিলাবৃষ্টি। দশ থেকে পনেরো মিনিটের শিলাবৃষ্টিতে আম, লিচু, পেয়ারা, সরিষা, গম, পিঁয়াজ, রসুন, বোরো ধান, কালাই, ভুট্টা, সবজি, পান বরজসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শিলাবৃষ্টিতে সকাল ১০টা পর্যন্ত টিনের চালা, খড়ের গাদা, রাস্তাসহ কোন কোন স্থানে শিল জমে থাকতে দেখা গেছে। শিল পড়ে টিনের চালা ফুটো হয়ে গেছে। সদর উপজেলার ছাতনী এলাকার কৃষক নাসির উল্লাহ জানান, হঠাৎ শিলাবৃষ্টিতে তার অনেক কষ্টের ফসল একেবারে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। এত শিল তারা আগে কখনও দেখেননি। একই এলাকার পেয়ারা চাষী আবদুল গফুর জানান, শিলাবৃষ্টিতে তার ৭ বিঘা পেয়ারা বাগান একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। ঋণ করে অনেক কষ্টের করা ফসল নষ্ট হওয়াতে তারা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তেমনি ঋণের টাকা কিভাবে পরিশোধ করবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না। সিংড়ার গৃহবধূ জোবেদা খাতুন জানান, শিলাবৃষ্টিতে তার ঘরে চালা নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক পাখি মরে বাড়ির আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। বোরো ধানের পাতা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অনেক বেশি ক্ষতি হয়ে গেছে। এজন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন তারা।
×