ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মামলা জট নিরসনে জোর দেয়া হচ্ছে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ওপর

প্রকাশিত: ১০:৪০, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

মামলা জট নিরসনে জোর দেয়া হচ্ছে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ওপর

বিকাশ দত্ত ॥ মামলা জট নিরসনে আইন মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট প্রশাসন বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ছোটখাটো ঘটনায় যাতে কেউ মামলায় জড়াতে না পারে তার জন্য বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) ওপর জোর দেয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় লিগ্যাল এইড কমিটিতে ৩০ জেলায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার স্থলে স্থায়ী কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। যাতে এ সমস্ত কর্মকর্তা এডিআরের ভিত্তিতে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে পারেন। ফাইলটি এখন সুপ্রীমকোর্টে পরামর্শের জন্য পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ে ফাইল এলেই নিয়োগ দেয়া হবে বলে আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এদিকে আইন বিশেষজ্ঞদের অভিমত, মামলাজট নিরসনে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) পদ্ধতি অনুসরণ করলেই সুফল পাওয়া যাবে। উভয় পক্ষকে যদি বোঝানো যায় মামলা করলে ১০ বছর ক্ষতি হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিতে এগিয়ে এলে দুই পক্ষই লাভবান হবেন। দেশের আদালতসমূহের মামলাজট কমাতে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ওপর জোর দিতে হবে। অন্যদিকে দেশের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় দ-িত অপরাধীদের সাজা ভোগের ক্ষেত্রে কারাগারের বাইরে রেখে আসামির সংশোধন-সংক্রান্ত প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিনেন্স, ১৯৬০ এর বিধানাবলীর যথাযথ প্রয়োগ ও প্রতিপালনে সুপ্রীমকোর্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থা পক্ষগুলোর সম্মতির ভিত্তিতে লিগ্যাল এইড অফিসে বিকল্প উপায়ে বিরোধ নিষ্পত্তি হচ্ছে। বিকল্প উপায়ে বিরোধ নিষ্পত্তির ফলে আদালতে মামলা জট হ্রাসে সহায়ক হচ্ছে। পক্ষগুলো তথা বিচারপ্রার্থী মানুষও উপকৃত হচ্ছে। লিগ্যাল এইড অফিসে বিকল্প উপায়ে বিরোধ নিষ্পত্তি শুরুর পর পক্ষগুলো এখন মামলা নিষ্পত্তিতে আগ্রহী হচ্ছে। দিন দিন বিকল্প উপায়ে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য লিগ্যাল এইড অফিসে বিচারপ্রার্থীদের ভিড় বাড়ছে। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে যে সমস্ত জেলায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রয়েছেন সেখানে পূর্ণ দায়িত্ব পেলে কাজগুলো আরও দ্রুত হবে। সে লক্ষেই দ্রুত এ সমস্ত জেলায় পূর্ণ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। গত মাসে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার সাবেক পরিচালক জাফরোল হাসানের অবসরজনিত বিদায় অনুষ্ঠান শেষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছিলেন , জনগণের কাছে আইনী সেবা পৌঁছে দিতে না পারলে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার কোন মূল্য থাকবে না। তাই আইনী সহায়তা কার্যক্রম জোরদার করার জন্য সংস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে। তিনি বলেন, শীঘ্রই সংস্থার অধীন লিগ্যাল এইড অফিসারের সকল শূন্যপদ পূরণ করা হবে। জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে প্রচার কার্যক্রম জোরদার করা হবে। এক্ষেত্রে টেলিভিশনের মাধ্যমে প্রচারকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। এ প্রসঙ্গে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, সুয়োমটো পাবলিক ইন্টারেস্টে দিচ্ছে। বিচার বিভাগের ক্ষমতা আছে। গ্রাম-গঞ্জে সালিশ হচ্ছে সেখানে মহিলাদের পেটানো হচ্ছে। সালিশের নামে নির্যাতন, ঘর থেকে বের করে দেয়াসহ নানা ধরনের কর্মকান্ড হয়ে থাকে। সালিশের নামে সেখানে ইচ্ছা করে আইন ভঙ্গ করা হচ্ছে। এটা আদালত নজরে নিতে পারে। এটার কারণে মামলার ডিলে (বিলম্বিত) হচ্ছে না। মামলাজট নিরসনে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) পদ্ধতি অনুসরণ করলেই সুফল পাওয়া যাবে। উভয় পক্ষকে যদি বোঝানো যায় মামলা করলে ১০ বছর ক্ষতি হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিতে এগিয়ে এলে দুই পক্ষই লাভবান হবেন। দেশের আদালতসমূহের মামলাজট কমাতে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ওপর জোর দিতে হবে। ২০১৫ সালে আইনগত সহায়তা প্রদান (আইনী পরামর্শ ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি) বিধিমালা, ২০১৫ প্রণয়নের পর এ কার্যক্রম শুরু করে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা। দরিদ্র ও অসহায় বিচারপ্রার্থী জনগণকে সরকারী খরচে আইনগত সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে সরকার ২০০০ সালে আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০ নামে একটি আইন প্রণয়ন করে। এ আইনের আওতায় সরকার জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা প্রতিষ্ঠা করে এবং দরিদ্র অসহায় মানুষের আইনের আশ্রয় ও প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার উদ্দেশে এ সংস্থার অধীনে প্রত্যেক জেলায় জেলা ও দায়রা জজকে চেয়ারম্যান করে একটি করে জেলা কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা লিগ্যাল এইড কমিটি এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিয়ন লিগ্যাল এইড কমিটি গঠন করা হয়।
×