ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

শুধু জামায়াত নয়, বিএনপিকেও জাতির কাছে ক্ষমতা চাইতে হবে

প্রকাশিত: ১২:৫৪, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

শুধু জামায়াত নয়,  বিএনপিকেও জাতির কাছে ক্ষমতা চাইতে হবে

সংসদ রিপোর্টার ॥ রাষ্ট্রপতির ভাষণ সম্পর্কিত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারী দলের সংসদ সদস্যরা বলেছেন, যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে শুধু জামায়াতকে নয়, বিএনপিকেও জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। কারণ তারাই যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসিত করেছে, মন্ত্রী বানিয়ে লাখো শহীদের রক্তস্নাত জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছিল। আগুন সন্ত্রাস করে মানুষ হত্যা ও সীমাহীন দুর্নীতির জন্যও বিএনপিকে ক্ষমা চাইতে হবে। আর ক্ষমা না চাওয়ার কারণেই দেশবাসী একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে রবিবার রাতে রাষ্ট্রপতি ভাষণ সম্পর্কে আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন তারা এসব কথা বলেন। আলোচনায় অংশ নেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সরকারী দলের মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূঁইয়া, মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী, মীর মোস্তাক আহমেদ রবি প্রমুখ। আলোচনায় অংশ নিয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেছিল, তারাই জঙ্গী সৃষ্টি এবং অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে দেশকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করেছিল। জনগণ সেই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করেছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যে উন্নয়নের মহাসড়কে তা রাষ্ট্রপতির ভাষণে ফুটে উঠেছে। গত ১০ বছরে দেশের নৌপরিবহন খাতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে দেশের নদ-নদীগুলো মৃতপ্রায় অবস্থায় গিয়েছিল। এখন তাদের জীবন ফিরিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে সুবিদ আলী ভূইয়া বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের রূপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন নিজেই নিজের তুলনা। তার সুদূরপ্রসারী নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। আর এই উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে দেশবাসী আবারও নৌকায় ভোট দিয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংরক্ষণের দাবি ॥ বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনের বহু আন্দোলন-সংগ্রামের স্বাক্ষী আর স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক সোহরাওায়ার্দী উদ্যানের পুরোটাকেই সংরক্ষণের দাবি উঠেছে জাতীয় সংসদে। সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের যে স্থানটিতে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন এবং যে স্থানটিতে পাকিবাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিলেন, সেই স্থান দুটিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের প্রস্তাব করেছেন। শাজাহান খানের বক্তব্যের রেশ ধরে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও সাবেক গৃহায়নমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকেই সংরক্ষণের দাবি জানান। রবিবার রাতে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে এ নিয়ে দীর্ঘ অনির্ধারিত আলোচনা হয়। তবে আওয়ামী লীগের সদস্য সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান ৭১ বিধিতে ২ মিনিটের বেশি কথা বলায় আপত্তি জানান বিরোধী দলের চীফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙা। এ নিয়ে তার সঙ্গে সভাপতির আসনে থাকা ডেপুটি স্পীকারের মৃদু বিতর্ক হয়। ডেপুটি স্পীকার এ বিষয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে কথা বলেছেন বিধায় শাজাহান খানকে ২ মিনিটের বেশি কথা বলার সুযোগ দিয়েছি। ৭১ বিধিতে কথা বলা নির্ধারিত ২ মিনিটের মধ্যেই শেষ করতে হবে। উনি(শাজাহান খান) বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে কথা বলেছেন বিধায়ই তাকে ২ মিনিটের বেশি বলতে দিয়েছি। আপনি (রাঙা) কি বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে কথা বলা নিয়ে আপত্তি করছেন? বঙ্গবন্ধুর কারণেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, আপনি চীফ হুইপ হতে পেরেছেন। তা না হলে আপনি চীফ হুইপ হতে পারতেন না। এরপর মশিউর রহমান রাঙা দাঁড়িয়ে বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে কথা বলার জন্য আপত্তি করিনি। আমি বলতে চেয়েছি ২ মিনিটের বেশি কথা বলা নিয়ে। আমারও ’৭১ বিধিতে নোটিস আছে। সময়ের কারণে এর আগে আমি কথা বলতে পারিনি। সেই বিষয়টি বলতে চেয়েছি। ’৭১ বিধিতে শাজাহান খানের দেয়া এই বক্তব্য ধরে সাবেক গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নিয়ে আমরা মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এখানে অনেক ইতিহাস। এসব ইতিহাস মুছে ফেলতে জিয়া চেষ্টা করেছিলেন, সেজন্য তিনি শিশুপার্ক বানান। বঙ্গবন্ধু যেই স্থানটিতে দাঁড়িয়ে ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন সেই স্থানটিকেও নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হয়েছে। আমরা চাই এসব ঐতিহাসিক স্থানও থাকবে, শিশুপার্কও থাকবে। এখানে শিশুরা আসবে, তারা দেশের ইহিতাস জানবে। এখানে প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার প্রকল্প। ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে এই উদ্যানকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। পরে এই বিষয়ে শেখ ফজলুল করিম সেলিম ফ্লোর নিয়ে বলেন, এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার স্বাক্ষী। শুধু ৭ মার্চের ভাষণ এবং পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণই নয়, এই উদ্যানে বহু ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছে। সেই কারণে ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে পুরো উদ্যানটিকেই সংরক্ষণ করতে হবে। এই উদ্যান থেকেই বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ৬ দফা ঘোষণা করেন। ’৬৯ এর ২৩ ফেব্রুয়ারি এই উদ্যানে ছাত্রসমাজের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেয়া হয়। এই স্থানটিকেও সংরক্ষণ করতে হবে। ’৭০ এর নির্বাচনের পর ১০ জানুয়ারি এই উদ্যানেই বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘৬ দফার দাঁড়িকমাও বাদ দিলে বাংলার মানুষের মুক্তি আসবে না।’ এই উদ্যানেই বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এই উদ্যানে দাঁড়িয়েই বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ভারতীয় মিত্রবাহিনীকে ফেরত যেতে হবে। পরে সাড়ে ১৮ হাজার ভারতীয় সদস্য দেশে ফিরে যান। তিনি বলেন, এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঐতিহাসিক জায়গা। সেজন্য পুরোটাই সংরক্ষণ করতে হবে, যাতে ভবিষ্যত বংশধররা দেশের ইতিহাস জানতে পারে। ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফের বক্তব্য সম্পর্কে শেখ সেলিম বলেন, বক্তব্য দিয়ে তিনি চলে গেছেন। শুধু বলছেন হচ্ছে, হবে। হচ্ছে হচ্ছে বললে হবে না। কবে এই উদ্যান সংরক্ষণের কাজ শেষ হবে তা স্পষ্ট করে বলতে হবে। এরপর তোফায়েল আহমেদ ফ্লোর নিয়ে বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান একটা ঐতিহাসিক জায়গা। অনেক স্মৃতিবিজড়িত এই উদ্যান। এটাকে সুন্দরভাবে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। স্বৈরশাসক জিয়া এই ঐতিহাসিক উদ্যানকে নষ্ট করতেই শিশুপার্ক নির্মাণ করেন। এমনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেই বটতলা থেকে আমরা বহু আন্দোলন সংগ্রাম করেছি সেই বটগাছটি পর্যন্ত নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসি দেয়ার সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন করে ফেলেছিল আইয়ুব খানরা। ১৯৬৮ সালের ২৯ জুন যখন ক্যান্টনমেন্টে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়, এর বিরুদ্ধে তখন ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলি। তীব্র আন্দোলনের মুখে পাক হানাদাররা বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ১৯৬৯-এর ২৩ ফেব্রুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিশাল জনসমুদ্রে পরিণত হয়। ১০ লক্ষাধিক লোকের উপস্থিতিতে কৃতজ্ঞ জাতির পক্ষ থেকে সমাবেশ থেকে জাতির পিতাকে আমরা বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করি। তিনি বলেন, ঐতিহাসিক ৭ মার্চ এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধের পর এই স্থানেই পাক হানাদাররা আত্মসমর্পণ করেন। তাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান একটা ঐতিহাসিক স্থান। অনেক স্মৃতিবিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। স্মৃতিময় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে ধ্বংস করতে জেনারেল জিয়া এখানে শিশুপার্ক করেছিলেন। তাই অনেক ঘটনার স্বাক্ষী সোহরাওয়ার্র্দী উদ্যানকে অবশ্যই সংরক্ষণ করতে হবে। কার্যপ্রণালী বিধির ৭১ বিধিতে আনা জরুরী জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মনোযোগ আকর্ষণ সংক্রান্ত এক নোটিসে সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। ১৬ ডিসেম্বর পাকবাহিনী এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আত্মসমর্পণ করেন। এই দুটি ঐতিহাসিক স্থানে আজও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ না হওয়ায় জাতি হতাশ। এ বিষয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর মনোযোগ আকর্ষণ করেন। শাজাহান খান আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত জিয়াউর রহমান এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একাংশে শিশুপার্ক স্থাপন করেন। কৃষির বাণিজ্যিকীকরণের বিকল্প নেই- রাজ্জাক ॥ কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। কৃষির উন্নয়ন আর কৃষকের স্বার্থে কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণের বিকল্প নেই। সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে ইতোমধ্যে খোরপোষ কৃষি আজ বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। ডেপুটি স্পীকার ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে রবিবার রাতে জাতীয় সংসদে ‘ধানের উৎপাদন বৃদ্ধিতে শীর্ষে বাংলাদেশ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা প্রসঙ্গে’ সরকার দলীয় সংসদ সদস্য সাদেক খানের মনোযোগ আকর্ষণ নোটিসের জবাবে তিনি এসব তথ্য জানান। কৃষিমন্ত্রী বলেন, ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। বিগত ৫ বছরে ধানের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ২৪ লাখ টন, ভুট্টা ১৭ লাখ টন। সমপরিমাণ বেড়েছে আলুর উৎপাদনও। আর আমের উৎপাদন বেড়েছে ৮ লাখ ৬৭ হাজার টন। প্রতিবছর জমি কমে যাওয়া, জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া এবং জলবাযু পরিবর্তনসহ নানা চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেয়ায় ধানসহ বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে সচেষ্ট রয়েছে। ড. আবদুর রাজ্জাক আরও বলেন, বর্তমান সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কৃষিখাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কৃষির উন্নয়ন ও কৃষকের কল্যাণে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের কারণে কৃষির অগ্রযাত্রা আজ বিশ্বে নন্দিত।
×