ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পুলওয়ামার হামলার জবাবে কী ভাবছে ভারত?

প্রকাশিত: ০০:১৭, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

পুলওয়ামার হামলার জবাবে কী ভাবছে ভারত?

অনলাইন ডেস্ক ॥ পুলওয়ামার হামলার পর বেশ বিপাকে পড়েছে ভারত। ওই হামলায় কমপক্ষে ৪০ জন জওয়ান নিহত হন। গতকাল রাতে ফের জঙ্গি হামলায় চার ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছেন। এমতাবস্থায় করণীয় ঠিক করতে উঠেপড়ে লেগেছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। গোয়ন্দা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো দাবি করেছে, জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামা হামলার সন্দেহভাজন মূল হোতা পাক মদদপুষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠী জয়েশ-ই-মোহাম্মদের কমান্ডার আব্দুল রশিদ গাজী ওরফে আফগানি এখনও কাশ্মীর উপত্যকায় লুকিয়ে আছেন। জয়েশ-ই-মোহাম্মদের প্রধান মাওলানা মাসুদ আজহারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজনদের একজন আব্দুল রশিদ গাজী। প্রবীণ এই জঙ্গি আফগানিস্তানে যুদ্ধকালীন কৌশল ও আইইডি প্রস্তুতির ব্যাপারে তালেবানের অস্ত্র বিশেষজ্ঞদের কাছে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। জয়েশ-ই-মোহাম্মদের দক্ষ অস্ত্র বিশেষজ্ঞদেরও একজন তিনি। সোমবার ভারতীয় জনপ্রিয় পত্রিকা আনন্দবাজার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এমতাবস্থায় মোদি সরকার পাল্টা জবাব দিতে মাসুদ আজহারের ঘাঁটিতে নিখুঁত লক্ষ্যে আকাশ থেকে বোমা বা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে চায়। তবে এজন্য দরকার সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্য। একই সঙ্গে, সীমান্ত বা নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে জঙ্গিদের লঞ্চপ্যাড ধ্বংস করতে চায় নিখুঁত গোয়েন্দা তথ্য। এসব করতে গিয়ে পুরোদমে যুদ্ধ লেগে গেলে কী হবে, তার হিসাব নিখুঁতভাবেই কষতে হচ্ছে নরেন্দ্র মোদি সরকারকে। পুলওয়ামার হামলার পরে প্রধানমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, পাকিস্তানকে বড় মাপের মূল্য চোকাতে হবে। আজ ওড়িষ্যায় এক সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বলেন, ‘ভারতীয় বাহিনীর সফল অভিযানের ফলে কাশ্মীরে জঙ্গিরা হতাশ হয়ে পড়েছে। তাদের চাঙ্গা করতেই পাকিস্তান পুলওয়ামায় হামলা চালিয়েছে। পাল্টা আঘাত চালাতে বাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে।’ প্রাক্তন সামরিক শীর্ষকর্তারা মনে করছেন, সীমান্ত বা নিয়ন্ত্রণরেখার এ পার থেকে গোলাগুলি ছোড়া বা ফের সার্জিকাল স্ট্রাইকের থেকে অনেক বেশি নিরাপদ বিকল্প মাসুদ আজহার এবং তার জইশ-ই-মহম্মদের জঙ্গি শিবিরগুলোতে ‘প্রিসিশন এয়ার স্ট্রাইক’ অর্থাৎ নিখুঁত বিমান হানা। দেশটির বিমানবাহিনীর প্রাক্তন প্রধান, অবসরপ্রাপ্ত এয়ার চিফ মার্শাল ফালি হোমি মেজরের মতে, ‘বিমানবাহিনীর সেই ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু তার জন্য একেবারে নিখুঁত, ‘রিয়াল টাইম’ গোয়েন্দা তথ্য থাকতে হবে।’ গোয়েন্দা তথ্য যে নির্ভুল, সে বিষয়েও নিশ্চিত হতে হবে। অর্থাৎ, জানতে হবে ঠিক কোথায় জইশ-ই-মহম্মদের জঙ্গি শিবির রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পাকিস্তানকে জবাব দেয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা সামরিক বাহিনীকে দিয়ে দেয়া হয়েছে। শনিবারই পাক-সীমান্ত ঘেঁষা পোখরানে বিমানবাহিনী আকাশ থেকে মাটিতে কোনো লক্ষ্যে হামলা নিয়ে মহড়া দিয়েছে। বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল বি এস ধানোয়া পোখরানে দাঁড়িয়ে বলেছেন, ‘আমরা কতটা জোরের সঙ্গে, কত দ্রুত এবং কত নিখুঁত লক্ষ্যে আঘাত করতে পারি, সেই ক্ষমতা তুলে ধরছি।’ আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামরিক হামলার পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে রুগ্ণ পাকিস্তানের ওপরে আর্থিক চাপ বাড়াতে অন্য অঙ্কও কষা হচ্ছে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পাক সরকার যেভাবে জঙ্গিদের অর্থ সাহায্য করে, তা বন্ধ করতে এবং পুলওয়ামার ঘটনায় পাক যোগ প্রমাণ করতে ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের (এফএটিএফ) হাতে এ নিয়ে প্রামাণ্য নথি তুলে দেবে ভারত সরকার। জঙ্গিদের আর্থিক মদদ বন্ধ করতে এই আন্তর্জাতিক সংস্থাটি সক্রিয়। এ নিয়ে আলোচনা করতে আজই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছিলেন গোয়েন্দা দফতরগুলোর শীর্ষকর্তারা। সামরিক হামলার ছক কষতে গিয়ে দু’টি বিষয় নিয়ে চিন্তায় সামরিক বাহিনীর কর্তারা। প্রথমত- চালে ভুল হলে পুরো দমে যুদ্ধ লেগে যেতে পারে। সেই ঝুঁকি নেয়া হবে কি না, তা রাজনৈতিক নেতৃত্বকে নিতে হবে। দ্বিতীয়ত- পাল্টা হামলা কবে চালানো হবে। প্রাক্তন সামরিক কর্তাদের মতে, যেকোনো ‘গোপন অভিযান’ থেকেই পুরোদস্তুর যুদ্ধ লেগে যেতে পারে। সে সার্জিকাল স্ট্রাইক-ই হোক বা ‘প্রিসিশন এয়ার স্ট্রাইক’। তাই এই বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। ভারত মনে করছে, পুলওয়ামার পরে ভারতের দিক থেকে পাল্টা হামলা হতে পারে, আঁচ করে পাকিস্তান এখন তৈরি। এখন ইট ছুড়তে গেলে পাটকেল খেতে হবে। তার বদলে নিজেদের সুবিধা মতো, সময়-সুযোগ বুঝে পাল্টা মার দিতে হবে। সেনাবাহিনীর প্রাক্তন উপ-প্রধান, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেনান্ট জেনারেল রাজ কাড়িয়ার মতে, ‘পাকিস্তানকে বার্তা দিতে হলে একেবারে ভেতরে ঢুকে মারতে হবে।’ কিন্তু প্রাক্তন বিমানবাহিনী প্রধান ফালি হোমি মেজরের মনে করেন, ‘পাকিস্তানের নিজের মাটিতে হামলা চালানোর বদলে, পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে হামলা চালালে পাল্টা জবাব দেয়ার আগে দশবার ভাববে পাকিস্তান।’ সেনাকর্তারা বলছেন, ‘প্রিসিশন এয়ার স্ট্রাইক’-এর কথা ভাবা হলেও কোনোভাবেই তা জনবহুল এলাকায় করা যাবে না। কারণ নিরীহ মানুষের প্রাণ গেলে ভারতের দিকেই আঙুল উঠবে। সেই জন্যই পাকিস্তানের মাটি থেকে একেবারে নির্ভুল গোয়েন্দা তথ্য চাই। আজ এক সাক্ষাৎকারে ফালি হোমি মেজর মনে করিয়ে দিয়েছেন, এই নিশ্চয়তা ছিল না বলেই যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে ওসামা বিন লাদেনের ডেরায় আকাশ থেকে বোমা ছোড়েনি। তার বদলে মার্কিন নেভি সিল-এর কম্যান্ডোরা ঝুঁকি নিয়ে লাদেনের ডেরায় নেমেছিল। পুলওয়ামার হামলার ঠিক আগে, ১৩ ফেব্রুয়ারি ইরানেও নিরাপত্তা বাহিনীর ওপরে একই ধরনের বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি নিয়ে হামলা হয়েছে। এ ঘটনায় ইরানও চোখ রাঙিয়েছে পাকিস্তানকে। ২০১৬-র সার্জিকাল স্ট্রাইক যার নেতৃত্বে হয়েছিল, সেনার নর্দান কম্যান্ডের সেই প্রাক্তন প্রধান, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেনান্ট জেনারেল ডি এস হুডা। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের প্রতিবেশী আফগানিস্তান, ইরান, ভারত— সকলেই পাক-মদতে পুষ্ট সন্ত্রাসের শিকার। এদের থেকে পাল্টা জবাব আসবেই। যুক্তরাষ্ট্রও ড্রোন হামলা চালাচ্ছে। এর পরেও আর কী হলে যে পাকিস্তানের জেনারেল ও আইএসআই কর্তারা সোজা হবেন, কে জানে!’ সূত্র- আনন্দবাজার
×