ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

‘আদর্শ ভিন্ন রেখে একসঙ্গে ইজতেমা করতে যাওয়া মানেই সংঘাত’

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

‘আদর্শ ভিন্ন রেখে একসঙ্গে ইজতেমা করতে যাওয়া মানেই সংঘাত’

অনলাইন রিপোর্টার ॥ তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের মধ্যে আদর্শগত মিল হলেই কেবল একসঙ্গে বিশ্ব ইজতেমা হতে পারে। নয়তো আলাদাভাবেই অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ব ইজতেমা। কেননা আদর্শ ভিন্ন রেখে একসঙ্গে ইজতেমা করতে যাওয়া মানেই সংঘাতকে ডেকে আনা। বিশ্ব তাবলিগ জামাতের আমির ভারতের মাওলানা সাদের অনুসারী ও তাবলিগের এদেশীয় জিম্মাদার মাওলানা আশরাফ আলী এই কথা জানিয়েছেন। আজ সোমবার গাজীপুরের টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে ব্রিফিং করেন মাওলানা সাদের অনুসারীরা। সাধারণ মুসল্লিদের আবেগে ভাটা পড়েছে উল্লেখ করে মাওলানা আশরাফ আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেখতে বাহ্যিকভাবে একসঙ্গে, একই প্যান্ডেলের নিচে, সময়ও কাছাকাছি, কিন্তু তারপরও আসলে ভিন্ন। তার কারণ আদর্শগত ভিন্নতা আমাদের ভিন্ন করে দিয়েছে, যেটা বাস্তবতা। যে কারণে এই ইজতেমার শ্রোতাও ভিন্ন, বক্তাও ভিন্ন, দোয়াও ভিন্ন এবং আদর্শও ভিন্ন। দাওয়াতে তাবলিগে আগে যে শান্তিপূর্ণ অবস্থান ছিল, সেটা তো নেই। এখনো যে আশঙ্কামুক্ত তা বলব না। এসব কারণে দেশে সাধারণ মুসল্লিরা যে আবেগ নিয়া সবাই ভিড় করত সেটার ভেতর একটা ভাটা পড়ছে।’ এই থেকে উত্তরণ চান উল্লেখ করে মাওলানা আশরাফ আলী বলেন, ‘আমরা চাই যে এ ধরনের একটা ইমেজ সংকট দেখা দিয়েছে, এটা থেকে উত্তরণ চাই আমরা। সে উত্তরণের স্বার্থে আমরা সব সময় শক্ত অবস্থান নিয়েছিলাম, একসঙ্গে আমরা বাংলাদেশে তাদের সঙ্গে ইজতেমা করতে কখনো রাজি না। আদর্শ ভিন্ন রাইখা একসঙ্গে করতে যাওয়া মানেই তো সংঘাতকে ডেকে আনা। যদি আদর্শ এক হয়ে যায়, যেরকম আগে যেমন এক মার্কাজে একসঙ্গে ছিল তারা যদি তাদের ভুল বুঝতে পারে যে আমাদের এ ধরনের সংঘাতে যাওয়া ক্ষতি হচ্ছে, মুসলমানের ক্ষতি হচ্ছে, তাহলে আগে যেমন মাওলানা সাদ সাহেবের নিজামুদ্দিন পরিচালিত হতো তাহলে তো একসঙ্গে হওয়ার সেকাল আছে। এ ছাড়া দ্বিতীয় বিকল্প যে দুই আদর্শ একসঙ্গে জমা হবে, এটাও কেউ ভাবতেও পারে না, এটা সঠিকও নয়।’ আশরাফ আলী বলেন, সরকারের কাছে আমাদের আবেদন থাকবে, তাবলিগ জামাতের আমির মাওলানা সাদ যেন আগামী বছর থেকে আজীবন ইজতেমায় বয়ান করতে পারেন, আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করতে পারেন এবং ইজতেমার যাবতীয় কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারেন, সে ব্যবস্থা নেবে। এ সময় আরো কথা বলেন বিদেশি মুসল্লিদের জিম্মাদার রেজা আরিফ, তাবলিগের মুরুব্বি আব্দুল্লাহ শাকিল প্রমুখ। বিশ্ব তাবলিগ জামাতের আমির মাওলানা সাদ ও কাকরাইল মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মোহাম্মদ জোবায়েরের অনুসারী মুসল্লিদের মধ্যে বিরোধ এবং সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে জানুয়ারি মাসে বিশ্ব ইজতেমা স্থগিত হয়ে যায়। ওই সংঘর্ষের ঘটনায় দুই মুসল্লি নিহত ও পাঁচ শতাধিক আহত হয়। পরবর্তী সময়ে দুই পক্ষকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আগ্রহে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দুই পক্ষের মুরব্বিদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি মাওলানা জোবায়ের এবং ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি সাদ অনুসারীদের ইজতেমা করার কথা। কিন্তু জোবায়েরের অনুসারীরা একদিন আগেই ১৪ ফেব্রুয়ারি ইজতেমা শুরু করে। তারা শান্তিপূর্ণভাবে গত শনিবার আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে তাদের ইজতেমা শেষ করে। আর বৈরী আবহাওয়ার মধ্য দিয়ে গতকাল রবিবার ফজরের নামাজের পর থেকে শুরু হয় মাওলানা সাদ অনুসারীদের ব্যবস্থাপনায় বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্যায়। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ও ইজতেমার মাঠ গোছানোর সময়ের স্বল্পতার কারণে দ্বিতীয় পর্যায়ের ইজতেমার সময় একদিন বাড়ানো হয়েছে। ফলে এ পর্যায়ের আখেরি মোনাজাত পূর্ব নির্ধারিত সোমবারের পরিবর্তে একদিন পিছিয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে অনুষ্ঠিত হবে। আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ৫৪তম বিশ্ব ইজতেমা।
×